India US Row

স্কুলচত্বরে এলোপাথাড়ি গুলি, সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি! ভারতকে ‘একগুঁয়ে’ খোঁচা দেওয়া আমেরিকার ‘ভণ্ডামি’ ফের প্রকাশ্যে

ভারতকে ‘একগুঁয়ে’ বলে কটাক্ষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। পাশাপাশি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গণতন্ত্রের পাঠও। আর সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৫ ১৪:০৫
Share:
০১ ১৮

কখনও গণতন্ত্র। কখনও আবার এইচ-১বি ভিসা কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা। নানা ইস্যুতে ভারতকে চক্রব্যূহে ঘেরার চেষ্টা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। আর সেটা করতে গিয়েই ফের এক বার প্রকাশ্যে চলে এসেছে আমেরিকার ‘ভণ্ডামি’। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তোলা শুরু করে দিয়েছে একাধিক ইউরোপীয় দেশ। ওয়াশিংটনের অন্দরেও উঠছে সমালোচনার ঝড়।

০২ ১৮

চলতি বছরের ২৭ অগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ করে শুল্ক নেওয়া শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নিয়ম চালু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’কে সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। সেখানেই নয়াদিল্লিকে ‘একগুঁয়ে’ বলে তোপ দাগেন তিনি। পাশাপাশি, ইউক্রেন সংঘাতকে ‘মোদীর যুদ্ধ’ বলেও উল্লেখ করেছেন নাভারো।

Advertisement
০৩ ১৮

‘ব্লুমবার্গ’ টিভিতে সম্প্রচারিত হওয়া ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ (ব্যালেন্স অফ পাওয়ার) শীর্ষক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘‘ভারতের ঔদ্ধত্য সত্যিই বিরক্তিকর। রুশ খনিজ তেল কেনার ব্যাপারে নয়াদিল্লির যুক্তি হল, এটা তাদের সার্বভৌমত্বের বিষয়। তারা যেখান থেকে খুশি ‘তরল সোনা’ আমদানি করতে পারে। কিন্তু আদপে বিষয়টি মোটেই ততটা সহজ নয়।’’

০৪ ১৮

এর পরই গণতন্ত্রের প্রশ্নে ভারতকে নিশানা করেন নাভারো। বলেন, ‘‘ওদের দেশে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র রয়েছে। আর তাই নয়াদিল্লির সব সময়েই গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে থাকা উচিত। কিন্তু, সেটা না করে ওরা রাশিয়া এবং চিনের মতো একদলীয় শাসনে থাকা দেশগুলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই কড়া সমালোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বিঁধেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

০৫ ১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটা সময়ে ইসলামাবাদের মূল হাতিয়ার সরবরাহকারী দেশ ছিল আমেরিকা। অথচ পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে কোনও সময়েই গণতন্ত্র সে ভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। উল্টে বার বার সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। উদাহরণ হিসাবে আয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়া-উল-হক এবং পারভেজ় মুশারফের কথা বলা যেতে পারে।

০৬ ১৮

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলা ‘প্রেমের সম্পর্ক’ নিয়ে গত ২৩ অগস্ট একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে পড়েন জয়শঙ্কর। তখনই নাম না করে লাদেনের কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওদের একে অপরের সঙ্গে চলার একটা ইতিহাস রয়েছে। আবার ইতিহাসকে উপেক্ষা করেও চলতে ভালবাসে ওয়াশিংটন ও ইসালামাবাদ। এটা আমাদের কাছে একেবারেই নতুন নয়।’’

০৭ ১৮

এর পরই ৯/১১ হামলার মূল চক্রী তথা আল কায়দার কুখ্যাত জঙ্গি নেতা ওসামা বিন-লাদেনের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রকে কটাক্ষ করে জয়শঙ্কর। বলেন, ‘‘মজার বিষয় হল, মাঝেমাঝে মার্কিন সামরিক বাহিনীর তরফে কাউকে দরাজ শংসাপত্র দিতে দেখা যাবে। এটা সেই একই ফৌজ যারা অ্যাবটাবাদে ঢুকেছিল এবং সেখানে কে থাকছেন, তা জানতে পেরেছিল। যখন কোনও দেশ সুবিধাবাদী রাজনীতির উপরে বেশি জোর দেয়, তখন তারা এটা করে থাকে। এটা কোনও কৌশলগত পদক্ষেপও হতে পারে।’’

০৮ ১৮

একই কথা পশ্চিম এশিয়ার খনিজ তেল উত্তোলনকারী আরব দেশগুলির সম্পর্কে বলা যায়। সেখানকার সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গণতন্ত্রের বদলে আছে রাজশাহি। কিন্তু, এদের প্রত্যেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে আমেরিকা। অর্থাৎ, গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিই যে স্বচ্ছ নয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নিজের প্রয়োজনমতো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। আর এখানেই প্রশ্ন, তা হলে ভারতের ব্যাপারে কেন প্রশ্ন তুলছেন নাভারো?

০৯ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ‘ভণ্ডামি’র জায়গা হল, এইচ-১বি ভিসা। ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা তথা ফ্লরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের অভিযোগ, এই ভিসা নিয়ে মার্কিন মুলুক জুড়ে বিরাট একটা কেলেঙ্কারি চলছে। ফক্স নিউজ়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এইচ-১বি ভিসা নিয়ে দলে দলে লোক ভারত থেকে আসছে। এটা একটা কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে। ওরাই আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। ওদের জন্যই বিপুল ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে একাধিক সংস্থা।’’

১০ ১৮

বিদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবীদের এইচ-১বি ভিসা এবং গ্রিন কার্ড দিয়ে থাকে মার্কিন প্রশাসন। ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই এই নীতির বদল চাইছেন। তাঁদের যুক্তি, এতে নাকি প্রশ্নের মুখে পড়েছে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। অথচ তথ্য বলছে, প্রায়ই স্বদেশিদের উপর হামলা চালিয়ে থাকে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ধরনের ঘটনাগুলির সঙ্গে এইচ-১বি ভিসা এবং গ্রিন কার্ড প্রাপকদের যোগসাজশ প্রায় মেলেনি বললেই চলে।

১১ ১৮

গত ২৭ অগস্ট আমেরিকার মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপলিসের ক্যাথলিক স্কুলে হামলা চালায় এক বন্দুকবাজ। ক্যাম্পাসে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে রবিন ওয়েস্টম্যান নামে বছর ২৩-এর এক রূপান্তরকামী। ওই ঘটনায় প্রাণ হারায় দুই শিশু। জখম হয় আরও ১৭ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জনেরই বয়স ৬-১৫ বছরের মধ্যে। স্কুলে হামলার কিছু ক্ষণ পরেই গাড়ি পার্কিং এলাকা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। আততায়ী আত্মহত্যা করেছেন বলে অনুমান মার্কিন পুলিশের।

১২ ১৮

এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল নেত্রী লরা লুমার। তাঁর দাবি, এগুলি সবই স্কুলে হামলাকারী ওয়েস্টম্যানের। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারগুলির গায়ে একাধিক আপত্তিকর কথা লেখা রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। নিহত ওয়েস্টম্যানের থেকে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল, একটি শটগান এবং একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

১৩ ১৮

লরার পোস্ট করা ছবিতে আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজ়িনগুলির গায়ে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুন করো’, ‘ট্রাম্পকে এখনই খুন করো’, ‘ইজ়রায়েলের পতন হতেই হবে’, ‘পুড়িয়ে দাও ইজ়রায়েলকে’— এই ধরনের কথা লিখে রাখা ছিল বলে দেখা গিয়েছে। আবার একটি আগ্নেয়াস্ত্রের গায়ে লেখা ছিল ‘ভারতে পরমাণু বোমা ফেলো’। রিপাবলিকান দলের নেত্রীর দাবি, ভারতবিরোধী এবং ইহুদিবিরোধী প্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন হামলাকারী।

১৪ ১৮

মিনিয়াপলিসের ওই ঘটনাই প্রথম নয়। গত সাত মাসে স্কুল এবং জনবহুল এলাকা মিলিয়ে অন্তত ২৮৬টি বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো মার্কিন নাগরিক। এর কোনওটির সঙ্গেই এইচ-১বি ভিসা এবং গ্রিন কার্ড প্রাপ্ত ভারতীয়দের যোগসাজশ খুঁজে পাননি ওয়াশিংটনের দুঁদে গোয়েন্দারা।

১৫ ১৮

আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে বেশ কয়েক জন প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে হত্যার নজির রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিংবদন্তি আব্রাহাম লিঙ্কন এবং জন ফিটজ়েরাল্ড কেনেডি। প্রথম জনের খুনি ছিল জন উইলকিস বুথ। কেনেডি হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হন লি হার্ভে অসওয়াল। দু’জনেই ছিলেন আদ্যন্ত আমেরিকান। বাকি ঘটনাগুলিতেও বহিরাগতদের হাত থাকার প্রমাণ মেলেনি।

১৬ ১৮

গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন পেনসিলভ্যানিয়ায় ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করেন টমাস ম্যাথু ক্রুকস। একটি বাড়ির ছাদ থেকে এআর-১৫ রাইফেল দিয়ে অন্তত আট রাউন্ড গুলি চালান তিনি। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় গুলি ট্রাম্পের কান ঘেঁষে চলে যায়। ফলে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। টমাসের গুলিতে মৃত্যু হয় ট্রাম্পের ভাষণ শুনতে আসা এক ব্যক্তির। এ ক্ষেত্রেও আমেরিকাবাসীর আততায়ী হিসাবে প্রকাশ্যে এসেছিল স্থানীয় মার্কিন নাগরিকেরই নাম।

১৭ ১৮

সম্প্রতি ছ’লক্ষ চিনা শিক্ষার্থীকে ভিসা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে আমেরিকা। কিন্তু এই নিয়ে আপত্তি দেখা দেওয়ায় হঠাৎ করেই ‘ইউ টার্ন’ নেয় হোয়াইট হাউস। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া বেজিঙের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে বহু বার উঠেছে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ। এ ছাড়া প্রযুক্তি চুরিতে তাঁদের হাত থাকার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। অন্য দিকে, এই ধরনের কাজে কখনওই যুক্ত থাকেনি ভারতীয় শিক্ষার্থীরা।

১৮ ১৮

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। লড়াইয়ের গোড়া থেকেই কিভকে বিপুল পরিমাণে হাতিয়ার সরবরাহ করে এসেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু, তার পরেও পূর্ব ইউরোপের লড়াইকে ‘মোদীর যুদ্ধ’ হিসাবে দেগে দিয়েছেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা নাভারো। এখানেও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement