বিশ্ব বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে চর্চিত নাম ইলন মাস্ক। ফোবর্সের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের মালিক ইলন।
বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকা ধনকুবেরের পরিবার বেশ বড়। ইলন বিয়ে করেছেন তিন বার। সন্তান রয়েছে ১৪ জন। ইলনের সম্পত্তির ভাগ কি পাবেন তাঁর উত্তরসূরিরা?
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইলনের জ্যেষ্ঠ সন্তান ভিভিয়ান উইলসন তাঁর অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, বাবা ধনকুবের হলেও তাঁর জীবন কাটে খুবই সাধারণ ভাবে।
খরচ কমাতে বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে তিন জনের সঙ্গে একই ঘরে থাকেন ভিভিয়ান। উদ্দেশ্য, যতটা কম খরচে দিন কাটানো যায়। বাবার মতো ব্যয়বহুল জীবন কাটানোর সাধ্য নেই বলেই দাবি ভিভিয়ানের। যদিও তাতে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর।
টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিঙ্ক, বোরিং কোম্পানি, এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মালিক ইলন। বাবার যে অগাধ টাকা, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ভিভিয়ানের দাবি, ‘‘বাবার সম্পত্তি থাকলেও তা ভোগ করতে চাই না।’’
২০০০ সালে ইলন প্রথম বিয়ে করেন জাস্টিন উইলসনকে। তাঁদের বিবাহিত জীবন তেমন সুখের ছিল না। ছয় সন্তান রয়েছে ইলন-জাস্টিনের। ভিভিয়ান হলেন সবচেয়ে বড় সন্তান। ২০০৮ সালে পাকাপাকি ভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায় এই দম্পতির।
এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাবা-মায়ের সম্পর্কের ছেদ মানসিক চাপ ফেলেছিল ভিভিয়ানের উপর। ভিভিয়ানের অভিযোগ, ছোট থেকে মাকে সব সময় পাশে পেলেও বাবার সমর্থন কখনওই পাননি।
বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হয় ২০২০ সালের পর থেকে। ১৬ বছর বয়সে ভিভিয়ান নিজেকে রূপান্তরকামী হিসেবে প্রকাশ্যে পরিচয় দেন। ইলন নিজের প্রথম সন্তানের এ-হেন পরিচয় মেনে নিতে পারেননি। আর তাতেই ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে শোনা যায়।
২০২২ সালে ভিভিয়ান লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে নিজের নাম এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে জানান, তিনি পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হতে চান।
বাবার নামের কোনও অংশই যাতে নিজের নামের সঙ্গে না থাকে, তা-ও উল্লেখ করেছিলেন আবেদনপত্রে। বরং তিনি তাঁর মায়ের পদবি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। রূপান্তরিত হওয়ার পরে ভিভিয়ান উইলসনের নাম হয় ভিভিয়ান জিনা উইলসন।
রূপান্তরিত হওয়ার পরই ইলনের সঙ্গে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বড় সন্তানের এমন আচরণে এক সাক্ষাৎকারে ইলন বলেছিলেন, ‘‘আমার ছেলে মৃত, আধুনিক চিন্তাধারার ভাইরাসের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’
যদিও নিজের সমাজমাধ্যমে বাবার এমন মন্তব্যের পর একটি পোস্ট করেন ভিভিয়ান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘মৃত, কিন্তু মৃত নই।’’ জন্মদাতাকে ‘যত্নশীল নন’ এবং ‘আত্মকেন্দ্রিক’ বলে অভিহিত করেন ভিভিয়ান।
বর্তমানে ভিভিয়ান মডেলিং জগতে কেরিয়ার তৈরির চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজও করেছেন। সম্প্রতি তাঁকে দেখা গিয়েছে অ্যালেক্সিস বিট্টারের মিস ইউএসএ ১৯৯১ ফ্যাশন শোয়ে। সেখানে তিনি রূপান্তরিত কন্যা পরিচিতিতেই ‘মিস সাউথ ক্যারোলিনা’ হিসেবে হেঁটেছেন।
সম্প্রতি নিজের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ভিভিয়ান বলেন, ‘‘মানুষ ভাবেন আমার কাছে প্রচুর টাকা আছে। কিন্তু আসলে আমার কাছে লক্ষ লক্ষ ডলার নেই।’’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ইলন মাস্কের বড় সন্তান হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনও রকম অর্থনৈতিক সাহায্য চাই না, কষ্ট করে হলেও নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চাই।’’
যদিও ভিভিয়ানের ছোটবেলা কেটেছে বেশ রাজকীয় ভাবে। তিনি যে স্কুলে পড়াশোনা করতেন সেখানে হলিউডের তারকাসন্তান এবং উদ্যোগপতিদের সন্তানেরা পড়াশোনা করতেন। সে সময় কোনও অভাব-অনটন বুঝতেই পারেননি ভিভিয়ান।
উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে পড়াশোনা করতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই ছেড়ে দেন। মডেলিং করবেন বলে দেশে ফিরে আসেন। কোরিয়ান, চাইনিজ়, জাপানিজ় এবং স্প্যানিশ ভাষা শিখেছেন ভিভিয়ান।
বর্তমানে ভিভিয়ান ‘এলজিবিটিকিউ’-এর সদস্য। মডেলিংয়ের পাশাপাশি রূপান্তরকামীদের পাশে দাঁড়াতে নানা রকম কাজ করে চলেছেন নিজের শহরে। বাবার সম্পত্তির অধিকার দাবি করার পরিবর্তে নিজের চেষ্টায় স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন ধনকুবেরের জ্যেষ্ঠ সন্তান।