এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক মানেনি পরিবার। তাই মনের মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধতে ফন্দি আঁটেন তিনি। পরিবারের কাছে তিনি মৃত— এটা প্রমাণ করতে তাঁরই মতো দেখতে এক তরুণীকে খুন করেন। এই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে খুনির।
২০১৭ সালের ঘটনা। হরিয়ানার পানিপতে একটি হত্যাকাণ্ড ঘিরে সেই সময় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। পানিপতে গৌশালা মন্দির এলাকায় একটি ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক তরুণীর দেহ।
মৃত তরুণীর মুখ বিকৃত করা হয়েছিল। পোশাক এবং পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ জানতে পারে যে, দেহটি জ্যোতি নামে এক তরুণীর। সেই সময় একটি কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। এই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন জ্যোতির প্রেমিক কৃষাণ।
জ্যোতির দেহ শনাক্ত করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তরুণীর দেহের পোশাক এবং পরিচয়পত্র দেখে দেহটি জ্যোতির বলেই মনে করেন তাঁরা। শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়।
দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জ্যোতির প্রেমিক কৃষাণের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। শিমলায় একটি হোটেলে কৃষাণ রয়েছেন বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। সেই মতো সেখানে গিয়ে তাজ্জব বনে যায় পুলিশ।
শিমলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি হোটেলে জ্যোতি এবং কৃষাণকে একসঙ্গে দেখতে পান তদন্তকারীরা। কী ভাবে সম্ভব? জ্যোতি যদি বেঁচে থাকেন, তা হলে যে তরুণীর দেহ উদ্ধার করা হল, তিনি কে?
শিমলার হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় জ্যোতি এবং কৃষাণকে। তদন্তে নেমে পুলিশ পরে জানতে পারে, যে তরুণীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তাঁর নাম সিমরান। আজাদনগরের বাসিন্দা তিনি। জ্যোতি এবং সিমরান একই কলেজে পড়তেন।
কিন্তু কেন সিমরানকে খুন করা হল? কেনই বা নিজের মৃত্যুর নাটক করলেন জ্যোতি? তদন্তে নেমে রহস্যের জট খোলে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে, কৃষাণও কলেজপড়ুয়া। তিনি অন্য একটি কলেজে পড়তেন। কৃষাণের সঙ্গে জ্যোতির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে মান্যতা দেয়নি জ্যোতির পরিবার।
পরিবারের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই কৃষাণের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলেন জ্যোতি। কিন্তু পরিবার যাতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেই কারণে কৃষাণের সঙ্গে পালানোর আগে নিজের মৃত্যুর নাটক করেন জ্যোতি।
টেলিভিশনে অপরাধমূলক শো দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই যুগল ঠিক করে যে, জ্যোতির মতো দেখতে কাউকে খুন করবেন তাঁরা। সেই সময়ই সিমরানের কথা ভাবেন কৃষাণ। সিমরানকে আগে থেকে চিনতেন তিনি।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পূর্বপরিকল্পনা মতো গৌশালায় সিমরানকে ডেকে পাঠান যুগল। সিমরানকে ঠান্ডা পানীয় দেওয়া হয়েছিল। তাতে মাদক মিশিয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতি। এর জেরে সিমরান বেহুঁশ হতেই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
সিমরানের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর নিজের পোশাক তাঁকে পরিয়ে দেন জ্যোতি। নিজের কলেজের পরিচয়পত্রও সিমরানের দেহের পাশে রাখেন। যাতে সহজেই সকলে ভাবেন যে, জ্যোতির মৃত্যু হয়েছে।
সেই সময় সিমরানের খোঁজ না মেলায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেছিলেন তাঁর বাবা-মা। সিমরানের দেহ তাঁদের মেয়ের বলে বিশ্বাস করেছিল জ্যোতির পরিবার। কিন্তু পরে দেহের ছবি সিমরানের বাবা, মাকে দেখাতেই তাঁরা বুঝতে পারেন যে, সেটি তাঁদের কন্যারই দেহ।
এর পরই জ্যোতি এবং কৃষাণের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন মৃত্যু হয় কৃষাণের।
সম্প্রতি এই মামলায় জ্যোতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে পানিপতের আদালত।