Sri Lanka on India

‘বন্ধুর ক্ষতি করতে দেব না’! ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে বার্তা শ্রীলঙ্কার, নিশানায় ‘প্রাক্তন বন্ধু’?

শ্রীলঙ্কায় চিনের গবেষণা জাহাজের পরিদর্শনের বিষয়েও ভারতের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন দ্বীপরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী। সাবরি স্পষ্ট করেছেন, শ্রীলঙ্কা যে কোনও দেশের সঙ্গে স্বচ্ছ ভাবে কাজ করতে চায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ১৬:২৭
Share:
০১ ২০

কাউকে ভারতের ক্ষতি করতে দেবে না শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি তেমনটাই মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী আলি সাবরি। সাবরি জানিয়েছেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় শ্রীলঙ্কা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দায়িত্বশীল প্রতিবেশী হিসাবে কেউ যাতে ভারতের নিরাপত্তার ক্ষতি করতে না পারে তা-ও নিশ্চিত করবে কলম্বো।

০২ ২০

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এই সতর্কবার্তা আদতে ভারতের আর এক প্রতিবেশী চিনের উদ্দেশে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

Advertisement
০৩ ২০

শ্রীলঙ্কায় চিনের গবেষণা জাহাজের পরিদর্শনের বিষয়েও ভারতের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন দ্বীপরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী। সাবরি স্পষ্ট করেছেন, শ্রীলঙ্কা যে কোনও দেশের সঙ্গে স্বচ্ছ ভাবে কাজ করতে চায়। তবে তাতে অন্য কারও যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকেও তাঁদের নজর থাকবে।

০৪ ২০

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সাবরি বলেন, ‘‘আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছি যে আমরা সমস্ত দেশের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে ভারতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোনও যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগকে বিবেচনা করে দেখা হবে। আমরা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষতি করতে দেব না।’’

০৫ ২০

সাবরি আরও বলেন, ‘‘এইমাত্র জানতে পেরেছি যে, সম্প্রতি ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে উঠেছে চিন। তাই একই ভাবে, আমরাও সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে এতে যেন কোনও তৃতীয় পক্ষের ক্ষতি না হয়। তাই দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং সভ্যতার অংশীদার হিসাবে আমরা এমন কিছু করব না যা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষতি করবে।’’

০৬ ২০

ভারতে লোকসভা নির্বাচন চলছে। সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতে গণতন্ত্রের উদ্‌যাপন হচ্ছে। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, ভারতের সঙ্গে কাজ করবে শ্রীলঙ্কা।

০৭ ২০

সাবরি বলেন, ‘‘ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। ভারতীয় জনগণ শিক্ষিত। ভারতীয় জনগণ জানবে তাদের জন্য কী ভাল। জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

০৮ ২০

গত বছর শ্রীলঙ্কার বন্দরে চিনা জাহাজের নোঙর করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত। ভারতের দাবি ছিল, চিনের এই ‘গবেষণা জাহাজের’ আসল উদ্দেশ্য নজরদারি চালানো।

০৯ ২০

শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে চিনের গুপ্তচর জাহাজ ইউয়ান ওয়াং-৫ নোঙর করার পর ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন দেশের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

১০ ২০

নবম ভারত-তাইল্যান্ড যৌথ কমিশনের বৈঠকের পরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আশপাশে কী ঘটছে এবং তা দেশের নিরাপত্তার উপর কী প্রভাব ফেলছে, তা আমাদের আগ্রহের বিষয়।’’

১১ ২০

গত বছর চিনের নজরদার জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’ শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়েছিল। সেই সময় এই বিষয়ে ভারতের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। যদিও তার পরও সে বছরেরই অগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কায় নোঙর ফেলেছিল চিনা জাহাজ ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’।

১২ ২০

চিন এগুলিকে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ বলে দাবি করলেও ভারতের আশঙ্কা ছিল যে, ভারতের পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নজরদারি করতে বার বার শ্রীলঙ্কার নৌসেনার পোতাশ্রয়ে যাচ্ছে চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি। এই বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে সম্প্রতি সাবধান করেছিল আমেরিকাও।

১৩ ২০

হামবানটোটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরে চিনের আধিপত্য নিয়ে বার বার আলোচনা হয় কূটনৈতিক মহলে। শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর তৈরি হয়েছে চিনের থেকে অর্থসাহায্যে। বলাই বাহুল্য, সে কারণে ওই দুই বন্দরে বেজিংয়ের আধিপত্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। যা ভারতকে চিন্তায় ফেলেছিল।

১৪ ২০

যদিও হামবানটোটা সমুদ্রবন্দর নিয়ে শ্রীলঙ্কা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কাজেই বন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে চিন। কোনও সামরিক কার্যকলাপ সেখানে চালানো যাবে না।

১৫ ২০

কিন্তু তাতেও নয়াদিল্লির উদ্বেগ কমেনি। ভারতের আশঙ্কা ছিল, ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরতে বেজিংয়ের কাছে শ্রীলঙ্কার এই বন্দর বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। চিন পরবর্তী কালে হামবানটোটায় নৌসেনা মোতায়েন করতে পারে বলেও শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত।

১৬ ২০

তবে শ্রীলঙ্কায় চিনের আধিপত্য নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রথম থেকে ছিল না। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষ ক্ষমতায় আসার পরেই দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের ‘সখ্য’ বৃদ্ধি পেয়েছিল। যা অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে ভারতের কাছে। তাঁর আমলে চিন থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নেয় শ্রীলঙ্কা। ঋণের অঙ্ক যত বৃদ্ধি পেয়েছিল, ততই দ্বীপরাষ্ট্র এবং ভারত মহাসাগরে বেজিংয়ের দাদাগিরি বৃদ্ধির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।

১৭ ২০

যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি ভারতের অনুকূলে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তলানিতে ঠেকার পর সেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে সাধারণ মানুষ। দিকে দিকে আগুন জ্বলে ওঠে। সেই সময় ‘দুঃস্থ’ শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়ে সে দেশকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল ভারত।

১৮ ২০

পাশাপাশি, মাহিন্দা রাজাপক্ষ গদিচ্যুত হওয়ার পরে পরেই চিনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে চিড় ধরেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। নতুন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিঙ্ঘের আমলে আবারও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সম্পর্ক এখন অনেকটাই পোক্ত বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদেরা।

১৯ ২০

সাময়িক শীতলতা কাটিয়ে উষ্ণ হয়েছে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক। এই সম্পর্ক হামবানটোটা তথা সারা শ্রীলঙ্কার উপর চিনের প্রভাব কমাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল। সেই আবহেই সম্প্রতি চিনের অর্থসাহায্যে তৈরি হামবানটোটা বিমানবন্দর ভারতকে হস্তান্তর করছে শ্রীলঙ্কা সরকার। তবে শুধু ভারত নয়, এই বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিচ্ছে রাশিয়াও।

২০ ২০

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারত এবং রাশিয়ার দুই সংস্থাকে হামবানটোটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিজ় দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা সরকার। চিনের এক ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এই বিমানবন্দর তৈরি করেছিল শ্রীলঙ্কা। কূটনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, দুই দেশের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করতেই এই নতুন চুক্তি। তার মধ্যেই শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য দু’দেশের ‘বন্ধুত্ব’ আরও জোরালো হওয়ার প্রমাণ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement