দার্জিলিং থেকেই ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিল রডোডেনড্রন

নিয়ে গিয়েছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী জোসেফ হুকার। তার পর সেই পাহাড়ি ফুলের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। কখনও জেমস জয়েসের উপন্যাসে, কখনও বা রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’য়। দার্জিলিং, সিকিম, নেপাল, ভুটানের পথে পথে ছড়িয়ে আছে সে। শ্রাবণী বসুপ্রাণোচ্ছল তরুণটি তাতে দমে যাননি। সারা জীবন তিনি ভালবেসেছেন গাছপালা, উদ্ভিদজগৎ। মনে একটাই ইচ্ছে, দূর দেশে বেরিয়ে পড়তে হবে, সেখানকার উদ্ভিদবৈচিত্র, সব তথ্য লিখে রাখতে হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৭:৪০
Share:

ইংল্যান্ডের উইন্ডসর গ্রেট পার্কে আজেলিয়া-রডোডেনড্রনের সমারোহ।

১৮৪৭ সালের এক দিন ইংল্যান্ডের এক তরুণ উদ্ভিদবিজ্ঞানী জাহাজে পাড়ি দিলেন ‘ইন্ডিয়া’-র উদ্দেশে। নাম জোসেফ ডালটন হুকার, বয়স ত্রিশ। তরুণ সাহেবটি চান ভারতের পাহাড়-পর্বত ঘুরে ঘুরে তার জীববৈচিত্রের সন্ধান করতে। এত সম্পদ, এত অন্য রকম সৌন্দর্য ছড়িয়ে ভারতে, জানতে হবে তাকে। দেখতে হবে প্রাণ ভরে। সাহেবের গন্তব্য উত্তরবঙ্গ, অসম, সিকিম, নেপাল আর তিব্বতে ছড়িয়ে থাকা হিমালয়।

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই হুকার-এর অনুপ্রেরণা ক্যাপ্টেন জেমস কুক। আর তাঁর বন্ধু ছিলেন চার্লস ডারউইন। সেই ডারউইন, যিনি ‘এইচএমএস বিগল’ জাহাজে চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে, এমন সব অনুসন্ধান আর পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যা পরে রূপ পেয়েছিল জগৎ-কাঁপানো ‘থিয়োরি অব ইভোলিউশন’-এ। হুকারেরও মন পড়ে ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, কিন্তু সে কালে পড়াশোনা, বিশেষত গবেষণার সুযোগসুবিধে ছিল না বললেই চলে। এমনকী ‘সায়েন্টিস্ট’ শব্দটাই অভিধানে ছিল না। অভিযাত্রীরা যেমন বেরিয়ে পড়তেন অনিশ্চিতের উদ্দেশে, হুকারের সমুদ্রযাত্রাকেও দেখা হয়েছিল সে ভাবেই।

প্রাণোচ্ছল তরুণটি তাতে দমে যাননি। সারা জীবন তিনি ভালবেসেছেন গাছপালা, উদ্ভিদজগৎ। মনে একটাই ইচ্ছে, দূর দেশে বেরিয়ে পড়তে হবে, সেখানকার উদ্ভিদবৈচিত্র, সব তথ্য লিখে রাখতে হবে। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছেই হুকার বেরিয়ে পড়লেন উত্তরে, দার্জিলিঙের উদ্দেশে।

Advertisement

সেই সময়, কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাওয়া এক রকম অ্যাডভেঞ্চার। কলকাতা থেকে চুনারের কাছে মির্জাপুর অবধি গেলেন হাতির পিঠে, সেখান থেকে জলপথে শিলিগুড়ি। বাকি রাস্তা ঘোড়ায়। ১৮৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল যখন দার্জিলিং পৌঁছলেন, ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ছে। পাহাড় ঢেকে আছে ঘন সাদা কুয়াশায়, কয়েক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পর দিন সকালে ঘুম ভেঙে বাইরে তাকাতেই ম্যাজিক! ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। মুগ্ধ হলেন হুকার। ডায়েরিতে লিখলেন, ‘‘হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে কত কিছুই না শুনেছি আর পড়েছি। কিন্তু সামনে থেকে দেখা এই অভিজ্ঞতা আমার সমস্ত প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে!’’

সেই ডায়েরিতেই লেখা: ‘‘পর দিন ভোরে জানলা দিয়ে তাকাতে যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে এল— শ্রদ্ধা আর ভাললাগায়। (৮০০০ ফুট উঁচুতে) আমি যেখানটায় আছি, আর দূরের ঝকঝকে সাদা বরফঢাকা পর্বতশ্রেণির মধ্যে, আমার চোখের সামনে পর পর ছ’-সাতটা পর্বতশ্রেণি, অরণ্যে ঢাকা। দূরে তুষারাবৃত পর্বতচুড়োগুলোর মধ্যে মাথা উঁচিয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা— আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, তার ৩০০০০ ফুট ওপরে! একটু পরে দেখলাম তুষারপাত শুরু হল, তবে মাইল কয়েক দূরে। দূরের সুউচ্চ পাহাড়কে মনে হচ্ছিল যেন মোটে এক দিনের পথ।’’

পূর্ব হিমালয়ের অসাধারণ সৌন্দর্য হুকারের মন জয় করে নিল। ডায়েরিতে তিনি লিখলেন অনুপুঙ্খ বর্ণনা— আকাশের সুনীল বিস্তার আর পাহাড়চুড়োর কথা। কখনও সেখানে কুয়াশার চাদর, উদিত সূর্যের আলোয় কখনও বা তার বর্ণ সোনারং হলুদ, কখনও বা স্নিগ্ধ গোলাপি। হুকার যেখানে থাকেন, সে অনেক নীচে। দেখতে পান সূর্যের আলো কেমন প্রথমে রাঙিয়ে দিচ্ছে পাহাড়চুড়ো, নীচের পাহাড়ে তখনও চাপ-চাপ অন্ধকার।

জোসেফ ডালটন হুকার

হিমালয়ের অপূর্ব প্রকৃতির কোলে বিশেষ এক প্রজাতির ফুল হুকারের খুব ভাল লেগেছিল। তার নাম রডোডেনড্রন। পাহাড়ি পথের পাশে চারদিক আলো করে ফুটে থাকা এক ফুল। হুকার পরে বলেছিলেন, এক গোলাপ ছাড়া আর রডোডেনড্রনই একমাত্র ফুল যা ইউরোপে সাড়া ফেলেছিল।

দার্জিলিঙের হিমালয়, রোদ, কুয়াশা আর রডোডেনড্রন অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে হুকারের লেখায়। এক জায়গায় লিখছেন: ‘‘নীচের পাহাড়ের জায়গায় জায়গায় আটকে থাকা বাতাস দ্রুত গরম হয়ে উঠল। ঘন, ভারী, সাদা বাষ্প এখান-ওখানকার ফাঁকা জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে ক্রমে উঠে পড়ল পাহাড়ের চুড়োয়; আটকে রইল চুড়োর ওপরে বনের মাথায়; পুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে উঠল আরও, আরও ওপরে। এমনই আকস্মিক এই ঘটনা, এমনই অবিস্মরণীয় সেই নিসর্গ, যা দেখে কেউই চোখ সরিয়ে নিতে পারে না, মনে হয় যেন জাদু। এ-ই হল ভারতীয় রডোডেনড্রনের বাসভূমি।’

রডোডেনড্রন! সেই ফুল, রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ যাকে বাঙালির মনে অমরত্ব দিয়েছে! শিলং পাহাড়ে সন্ধেয় গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে অমিত রায়, পাহাড়ি পথে আচমকা তার গাড়ি ধাক্কা দিল আর একটি গাড়িকে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল একটি মেয়ে। সে দিন লাবণ্যকে তার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে কবিতার খাতা খুলতেই বেরিয়ে এসেছিল নিবারণ চক্রবর্তীর বকলমে অমিত রায়ের উচ্ছ্বাস, ‘...অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ,/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে/ রডোডেনড্রনগুচ্ছ।’ বুদ্ধদেব বসুও পরে এই ‘রডোডেনড্রনগুচ্ছ’ নামেই লিখেছিলেন এক উপন্যাস। শুধু বাংলা নয়, ইংরেজি সাহিত্যেও প্রেমের এক অমোঘ দৃশ্যে রডোডেনড্রনের উপস্থিতি আজও উজ্জ্বল। জেম্স জয়েস-এর ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসে ডাবলিন উপসাগরের ধারে এক এলাকায় ঝরে-পড়া রডোডেনড্রনের মাঝে লিওপোল্ড ব্লুম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে নায়িকা মলি ব্লুমকে। '...the day we were lying among the rhododendrons on howth head in the grey tweed suit and his straw hat I got him to propose to me'— পরবর্তী কালে স্মৃতি হাতড়েছে মলি। নেপালের জাতীয় ফুল এই রডোডেনড্রন-ই!

উনিশ শতকের ইউরোপীয়রা রডোডেনড্রনের হাতে-গোনা কয়েকটা প্রজাতি সম্পর্কেই জানতেন। হুকার যোগ করলেন আরও ২৫ রকমের প্রজাতি। তিনি তাদের আবিষ্কার করলেন, শ্রেণিবিভাগ করলেন, করলেন নামকরণও। অনেকগুলোর নাম রেখেছিলেন নিজের বন্ধুদের নামে। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ডালহৌসির নামে একটা রডোডেনড্রনের নাম রেখেছিলেন।

হুকারের রডোডেনড্রন-নোটে লেখা আছে: ‘‘তার চিরসবুজ পাতার কথাই বলি, বা তার থোকায় থোকায় ফুটে-থাকা ফুলের বাহারের কথাই, প্রাচ্যের এই প্রজাতিটির মতো আর কোনও ফুলের গাছই এত বিস্তৃত, ব্যাপক ভাবে জন্মায় না।’’ সমগ্র দার্জিলিং, সিকিম ও ভুটান ঘুরে হুকার রডোডেনড্রনের নানান প্রজাতি সংগ্রহ করতেন। শুধু সংগ্রহই করতেন না, তাদের পাঠাতেন খোদ ব্রিটেনে। পরে ইংল্যান্ডের ‘কিউ গার্ডেনস’-এর উদ্ভিদ-সংগ্রহালয়েও সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আজ যে ইংল্যান্ড জুড়ে রডোডেনড্রনের শোভা, তার কারণ হুকার আর তাঁর হিমালয়-ভ্রমণ।

আজকের ইংল্যান্ডে বসন্ত জুড়ে যে রঙের দাপাদাপি, তার অনেকটাই তো রডোডেনড্রনেরই দৌলতে। গোলাপি, মেরুন, মুক্তো-সাদা রঙের রডোডেনড্রন চারপাশ আলো করে ফুটে থাকে। রানির খাসতালুকের অংশ যে উইন্ডসর গ্রেট পার্ক, তার মূল আকর্ষণ রডোডেনড্রনই। রঙিন আজেলিয়ার গায়ে গায়েই তারা যেন রঙের মাতন লাগায়। রডোডেনড্রন বিক্রি হয় নার্সারি আর বাগানগুলোয়, ঘর আলো করে থাকে ইংরেজদের। ক’জনই বা জানেন, হুকারই এক দিন এদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতবর্ষ থেকে! এ বছরই জোসেফ হুকারের জন্মের দুশো বছর পূর্তি।

কাজ করতে গিয়ে হুকারকে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে বিস্তর। দার্জিলিং থেকে আনা চমৎকার কিছু প্রজাতির রডোডেনড্রন এক বার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পথে কুলিদের শরীর অসুস্থ হওয়ার কারণে রাস্তাতেই অনেক সময় নষ্ট হয়েছিল বলে। হুকার লিখে গিয়েছেন, সেই সব রডোডেনড্রন তাঁকে ফের অনেক কষ্টে সংগ্রহ করতে হয়েছিল। ডায়েরিতে লিখেছেন, ১০০০০-১৩০০০ ফুট উচ্চতায় জন্মানো রডোডেনড্রন ঝোপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁর পা আর হাঁটু কেটেছড়ে গিয়ে কী ভয়ানক ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। উনিশ শতকের দুর্গম হিমালয়ে কাজ করার পরিবেশও আদৌ সুবিধের ছিল না। হুকার লিখছেন, ‘‘গাছের ডাল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া একটা কম্বল দিয়েই আমার তাঁবুটা তৈরি। সেটার সঙ্গে আবার অন্য একটা কম্বল সাঁটা, আর এ ভাবেই কোনও মতে একটা ঘরের মতো ঠেকনা দেওয়ার চেষ্টা। তাঁবুর অর্ধেকটা জুড়ে আমার খাট, তার তলায় আমার জামাকাপড়ের বাক্স। আর আমার বইপত্র, লেখালিখির সরঞ্জাম— সব রাখা টেবিলের তলায়। বাইরের দিকে এক কোনায় ব্যারোমিটারটা ঝোলানো থাকত, অন্য সব যন্ত্রপাতি চারপাশে ছড়ানো-ছিটানো।’’

চার বছর ধরে হুকার একা, বা কখনও সঙ্গী গবেষক ও ব্রিটিশ কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এই সব বিপদসংকুল জায়গায়। অনেক কষ্ট করেছেন। সিকিমে বন্দি হয়েছিলেন রাজার হাতে, জেলেও থাকতে হয়েছিল, কারণ তিনি সিকিম থেকে তিব্বতে ঢুকতে চেয়েছিলেন। ঢাল-তরোয়ালের ঝনঝনানি হয়েছিল বিস্তর। না ছাড়লে পরিণাম ভয়ংকর হবে, ব্রিটিশ সেনার এই হুমকিতে রাজা শেষমেশ তাঁকে মুক্তি দেন। এক সিকিম থেকেই হুকার সংগ্রহ করেছিলেন রডোডেনড্রনের ২৫টি প্রজাতি। সযত্নে সংরক্ষিত সেই ফুলগাছ ও তার বীজের নমুনা কিউ-য়ে পাঠিয়েছিলেন ।

হুকারের আঁকা এই সব রডোডেনড্রনের অজস্র ‘ফিল্ড স্কেচ’-এর লিথোগ্রাফ-কপি নিয়ে পরে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়াল্টার হুড ফিচ-এর বিখ্যাত বই ‘দ্য রডোডেনড্রনস অব সিকিম-হিমালয়াজ’। ১৮৪৯ সালে প্রকাশিত সেই বই লেখক উৎসর্গ করেছিলেন প্রিন্সেস মেকি অব কেমব্রিজ-কে। তিনি বাগান ভালবাসতেন, কিউ গার্ডেনস-এর নির্মাণের পিছনে তাঁর অবদান কম ছিল না।

হুকার তাঁর নোটবুকে হিমালয়ের ল্যান্ডস্কেপও এঁকেছিলেন। একটা স্কেচে আছে নেপালের চুনজেরমা পাস থেকে দেখা দৃশ্য। ফিচ পরে তাঁর বইয়ে সেই ছবি ব্যবহার করেছিলেন। একটা পর্বতশীর্ষের স্কেচে লেখা 'very high snows NNW', মনে করা হয় সেই পর্বতচূড়াটি মাউন্ট এভারেস্ট। ১৮৪৮ সালের এই স্কেচ খুব সম্ভবত কোনও পশ্চিমের মানুষের আঁকা মাউন্ট এভারেস্টের প্রথম স্কেচ।

পুষ্পবনে: জলরঙে আঁকা ছবিতে দার্জিলিঙের পাহাড় আর রডোডেনড্রন।

পূর্ব অসম থেকে নেপালের পর্বতমালা অবধি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অক্লান্ত ঘুরেছিলেন হুকার। খেয়াল করেছিলেন, পূর্ব অসমে রডোডেনড্রন মেলে ৫৪০০ ফুট থেকে ১২০০০ ফুট উচ্চতাতেও। নেপাল সীমান্তে টোংলু পর্বতে ওঠার সময় দেখেছিলেন সারা জায়গাটা রডোডেনড্রনে ছেয়ে আছে। ৭০০০ ফুট উচ্চতায় দেখেছেন, লিলির মতো দেখতে বড় বড় ডালহৌসি রডোডেনড্রনে ভরে আছে ঘন জঙ্গল। মাথার ওপর বিশালকায় ওক গাছগুলো থেকেও ফুল ঝরেছে নীচে, আছে ডিমের মতো দেখতে ম্যাগনোলিয়ার ফুলও। হুকারের গাইডরা অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল, ‘‘এখানে দেখছি লিলি আর এই ডিমফুলগুলো মাটিতে হয়ে আছে, স্যর!’’

১৮৫১ সালে হুকার ভারত থেকে ফিরে যান স্বদেশে— রডোডেনড্রনের প্রায় ৭০০০ প্রজাতির নমুনা সঙ্গে নিয়ে। চার বছর পর, ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ভারতীয় গাছপালা নিয়ে লেখা তাঁর বই ‘ফ্লোরা ইন্ডিকা’। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, এত বড় গবেষককে তার পরেও পেটের ভাত জোগাতে কষ্ট করতে হয়েছিল। ১৮৫৯ সালে বন্ধু চার্লস ডারউইন ‘অন দি ওরিজিন অব স্পিশিস’ বইখানা লেখার পরই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও লেখালিখির নতুন দিগন্ত খুলে যায়। হুকার ডারউইনকে লিখেছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে একটাই ইচ্ছে মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম, নতুন দেশে এক নতুন যাত্রায় যাব, তার প্রাকৃতিক সম্পদভাণ্ডারের কথা লিখব এমন ভাবে, যাতে এই পৃথিবীর বিজ্ঞান-অভিযাত্রীদের মধ্যে আমার একটু ঠাঁই হয়। যাতে সত্যিকারের অবদান রেখে যাওয়া এক জন মানুষ হিসেবে আমার নাম ইতিহাসে লেখা থাকে।’’ ইতিহাস ভোলেনি, বাংলাও না। হুকারের স্মরণে আজকের দার্জিলিঙেও আছে ‘হুকার রোড’— হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট ছাড়িয়ে সামনে এগোতে বাঁ দিকে অনেক দূর চলে গেছে আঁকাবাঁকা সেই রাস্তা।

১৮৬৫ সালে হুকার ‘কিউ গার্ডেনস’-এর ডিরেক্টর হন। ১৮৮৫ সালে অবসর নেওয়ার সময় তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানপুরুষদের এক জন।

ইংল্যান্ড জুড়ে হাওয়ায় মাথা দোলানো রডোডেনড্রনরা আসলে স্বদেশকে দেওয়া হুকারের উপহার। আর তাঁর লিখে যাওয়া ডায়েরি, নোট্‌স আর বইগুলো ভারতের জন্য তাঁর উপহার, বললে মন্দ হবে কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement