মারকুটে মানিক

দাদাকে দৃঢ় প্রত্যয়ে জানিয়েছিলেন, বড় লেখক হবই। সেই মানুষটাই আবার পাড়ার এক মস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়দাদাকে দৃঢ় প্রত্যয়ে জানিয়েছিলেন, বড় লেখক হবই। সেই মানুষটাই আবার পাড়ার এক মস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০০:১৩
Share:

লম্বায় প্রায় ছ’ফুট। গায়ের রং উজ্জ্বল কালো। চোখে চশমা। ঠোঁটে ‘কাঁচি সিগারেট’। বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ন মিশন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করে এলেন কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেন অঙ্ক অনার্সে। অঙ্কে ডুবে গেলেন, রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যাকে মনে হল ‘অভিনব কাব্য’। কিন্তু বেশি দিন বিজ্ঞান-প্রীতি টিকল না তাঁর।

Advertisement

মন গেল সাহিত্যের অলিন্দে। শুরু হল লেখালেখি। ফল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিএসসি-তে অকৃতকার্য হলেন। দ্বিতীয় বার পরীক্ষার সিট পড়ল সিটি কলেজে। প্রশ্নপত্র পেয়ে কী যেন হয়ে গেল মানিকবাবুর। আবোল-তাবোল লিখলেন। এ বারেও ফেল।

পরিবারের লোকজন গেলেন রেগে। এ কী হল ছেলের! মানিকবাবুর দাদা সুধাংশুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তখনকার ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের আবহাওয়া দফতরের কর্তারও দায়িত্বও সামলেছিলেন। তিনি ভাইয়ের এমন রেজাল্টের কারণ জানতে চাইলেন।

Advertisement

মানিকবাবু তখন মজে সোভিয়েত-সহ নানা বিদেশি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনায়। দাদাকে সটান জানিয়ে দিলেন, বিজ্ঞানের বই পড়ার সময়ই এখন নেই। সঙ্গে জুড়ে দিলেন, কী কী সাহিত্য-পাঠ করছেন, তার দীর্ঘ তালিকা।

দাদা পরামর্শ দিলেন, পরীক্ষায় পাশ করে যত খুশি গপ্পো লিখো। মানিক এ বারেও নির্ভীক। জানিয়ে দিলেন, সেটা সম্ভব নয়। এমনকী দাদাকে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জানালেন, ‘দেখে নেবেন, লেখার মাধ্যমেই আমি বাংলার লেখকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে স্থান করে নেব।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের সমপর্যায়ে আমারও নাম ঘোষিত হবে।’— বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে এই প্রত্যয় সফলই হয়েছিল।

বৌদ্ধিক ও শারীরিক ক্ষমতা, দু’ক্ষেত্রেই মানিকবাবু সমান প্রত্যয়ী।

সম্ভবত কিশোর বয়সের একটি গল্প। আখড়ায় কুস্তি লড়ে তত দিনে মারপিটে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন মানিক। এক বার তাঁর ভাই, সুবোধবাবু দু’দিন ধরে নিখোঁজ। পরে খবর মিলল, এক মস্তান গোছের লোক নাকি তাঁকে লুকিয়ে রেখেছিল। সেই মস্তানের সঙ্গে দেখা করলেন মানিক। নির্দিষ্ট স্থান, দিনক্ষণ জানিয়ে মাঠে আসতে বললেন। টক্কর হবে।

ঠিক সময়ে পাড়ার মাঠে মস্তান তাঁর দলবল-সহ হাজির। হাজির মানিকবাবুও। শোনা যায়, মানিক নাকি খালি হাতে বেদম মেরে মস্তানকে সটান হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন