ইন্দিরা ও মাছ-ভাত

হোটেল এয়ারপোর্ট অশোক’ তখন সবেমাত্র দুটো ফ্লোর নিয়ে শুরু হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থা চলছে। আমি হাউসকিপার হিসেবে জয়েন করেছি। এক দিন অফিসে গিয়ে শুনি, ইন্দিরা গাঁধী আসছেন! রুম নম্বর ২০২-এ থাকবেন। আমি তাড়াতাড়ি রুমটা সব ঠিকঠাক আছে কি না, দেখে নিচ্ছি।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

হোটেল এয়ারপোর্ট অশোক’ তখন সবেমাত্র দুটো ফ্লোর নিয়ে শুরু হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থা চলছে। আমি হাউসকিপার হিসেবে জয়েন করেছি। এক দিন অফিসে গিয়ে শুনি, ইন্দিরা গাঁধী আসছেন! রুম নম্বর ২০২-এ থাকবেন। আমি তাড়াতাড়ি রুমটা সব ঠিকঠাক আছে কি না, দেখে নিচ্ছি। হঠাৎ একটা ছেলে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, ‘দিদি, শিগগির নীচে চলুন।’ আমি তার সঙ্গে লবি-তে এসে দেখি, হইহই কাণ্ড।

Advertisement

অনেক লোকের ভিড়। লোক নয় ঠিক, বলা ভাল যুযুধান দুই পক্ষ। এক দল চিৎকার করছে, ‘ইন্দিরা গাঁধী দূর হটো!’ আর এক দল চেঁচাচ্ছে, ‘ইন্দিরা গাঁধী জিন্দাবাদ!’ এর মধ্যেই আবার ঝনঝন করে এক দল লোক মেন গেটের কাচের দরজা ভেঙে ফেলল!

জিএম মিঃ আলুওয়ালিয়া এসে বললেন, ‘মিসেস ব্যানার্জি, তুমি এখনই সেকেন্ড ফ্লোরে চলে যাও। ওখানে মিসেস গাঁধীর সঙ্গে তুমি একা থাকবে।’

Advertisement

একটু পরেই মিসেস গাঁধী ২০২ নম্বর ঘরে চলে এলেন। আমাকে বললেন, ‘তোমার নাম কী? আমি একটু ঘুমোব। তুমি তার ব্যবস্থা করে দাও।’ আমি বেড ওপেন করে দিলাম। উনি একটু জল চাইলেন। জল খেয়ে আমাকে বললেন, ‘তুমি ঘরের বাইরে থাকো। আমি উঠে তোমাকে ডাকব।’ শুয়ে পড়লেন। অত বড় কিংস বেড’টাতে ওঁকে একটা ছোট্ট মেয়ে মনে হচ্ছিল।

বেডরুমের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে এক বার বসার ঘর আর এক বার করিডর করতে লাগলাম। একটু পরে ওঁর পিএ অনেক ফুল নিয়ে এসে আমাকে ওঁর কথা জিজ্ঞেস করলেন। মিনিট কুড়ি পরে দেখি, উনি আমাকে ডাকছেন। কাছে যেতে আবার একটু জল চাইলেন। জল খেয়ে নিয়ে আমার খবর জানতে চাইলেন। আমার এখানে কী কাজ? আমি হোটেলেই লাঞ্চ করি কি না। আমার বাড়িতে কে কে আছেন। আমার ছেলেকে আমি কার কাছে রেখে আসি। আমি বাড়ি থেকে লাঞ্চ আনি শুনে বললেন, ‘এত সকালে মাছ আর ভাত রান্না করে আনতে পারো?’

একটু পরে ওঁর পিএ এলে, মিসেস গাঁধী পিএ-কে বললেন, ‘ওকে কিছু ফুল দাও।’

তার পর কিছু দিন কেটে গেছে। জরুরি অবস্থা উঠে গেছে। মিসেস গাঁধী এখন আবার দেশের পিএম। আবার এক দিন সকালে হোটেলে গিয়ে শুনি, মিসেস গাঁধী আসছেন। ওই রুম নম্বর ২০২-এই।

আমরা কয়েক জন স্টাফ মিলে সেকেন্ড ফ্লোরের এক ধারে ওঁকে দেখবার জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম। লিফ্‌ট-এর বেরুবার মুখে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, প্রদ্যোৎ গুহ এবং আরও কয়েক জন ওঁকে অভ্যর্থনা করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। লিফ্‌ট থেকে বেরিয়েই উনি এক বার আমার দিকে তাকালেন। তার পর সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বললেন, ‘সুব্রত, আজ আমি ভাত আর মাছ দিয়ে লাঞ্চ করব।’ আমি তো শুনে অবাক।

সঙ্গের মেয়েরা আমাকে বলল, ‘মাছ-ভাত বাড়ি থেকে নিয়ে আসার গল্প করেছ, না? তাই তোমাকে দেখে উনি মাছ-ভাত খেতে চাইলেন।’ আমি তো স্মৃতিশক্তি দেখে তাজ্জব!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement