মার্ক্স মানে নম্বর

এমনকী কমিউনিস্ট পার্টির নেতার ফার্স্ট নেমই যেখানে সীতারাম, সেখানে রামায়ণ-মহাভারত যে ক্লাসে অবশ্যপাঠ্য সে নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হল, ছেলেপুলেরা সিলেবাসে লবডঙ্কা। এরা ক্লাস দেখলেই ডুব মারে আর ফেসবুকে লাইক। পাড়ায় গিয়ে ডন দেয়, ইশকুলে পিটি-র সময় সিটি। প্রেয়ারে ঠ্যাং চুলকোয়, দেশাত্মবোধক গানে চোখ মারে, শোকসভা বলতে খিকখিকিয়ে হাসা আর পতাকা উত্তোলন বলতে অসভ্য জিনিস বোঝে।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

এমনকী কমিউনিস্ট পার্টির নেতার ফার্স্ট নেমই যেখানে সীতারাম, সেখানে রামায়ণ-মহাভারত যে ক্লাসে অবশ্যপাঠ্য সে নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হল, ছেলেপুলেরা সিলেবাসে লবডঙ্কা। এরা ক্লাস দেখলেই ডুব মারে আর ফেসবুকে লাইক। পাড়ায় গিয়ে ডন দেয়, ইশকুলে পিটি-র সময় সিটি। প্রেয়ারে ঠ্যাং চুলকোয়, দেশাত্মবোধক গানে চোখ মারে, শোকসভা বলতে খিকখিকিয়ে হাসা আর পতাকা উত্তোলন বলতে অসভ্য জিনিস বোঝে। লিটল ম্যাগে আঁতলামি ঝাড়ে কিন্তু কেশব নাগে গোল্লা। প্রেমপত্রে টুকবে বলে শক্তি চাটুজ্যে মুখস্থ করে আর পরীক্ষায় রবিঠাকুর টোকে পাশের ছেলের খাতা থেকে। এদের মাস্টারের চেয়ে ব্লকবাস্টার প্রিয়, সিলেবাসের চেয়ে অমনিবাস। অবশ্য পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়ে দিলে ‘মাস্টার পড়িয়ে দিচ্ছে রে’ বলে অমনিবাসও আর পড়বে কি না সন্দেহ। প্রকৃত প্রস্তাবে এদের ভাল জিনিস পড়ানো অসম্ভব। এরা রাম তেরি গঙ্গা ময়লি দেখে ফাটিয়ে দেয়, কিন্তু আগ্রহ শুধু মন্দাকিনীতে, ঐতিহ্য আর মাতৃরূপ বোঝাতে গেলেই দ্দেদ্দৌড়। রামাশ্যামা তো কোন ছার, এমনকী ফিল্ম ইনস্টিটিউটে অত বড় মাস্টার ঋত্বিক ঘটক অবধি এই টাস্কে ফেল মেরে গেলেন। কী সব বাঘা বাঘা সিনেমা, যেমন হাইফান্ডা তেমনই জ্ঞানে ভরপুর, কিন্তু ট্র্যাজেডি আর কাকে বলে, বেত হাতে পাবলিকের কালেক্টিভ আনকনশাসে সীতা অনসূয়া আর ভৃগুকে ঢোকাতে গেলেই টোটাল হল ফাঁকা করে সব ছাত্র পগার পার।
বাংলা কথা হল, চ্যালাকাঠের বাড়ি আর সিলেবাসের গুঁতো দিয়ে ধরেবেঁধে ‘গোপাল অতি সুবোধ বালক’ জাতীয় সুশিক্ষা দেওয়ার সত্যযুগ আর নেই। সেই সুখের স্বর্ণলঙ্কায় কেস অন্য ছিল। তখন বইয়ের বদলে শ্রুতি ছিল, পড়া মানেই মুখস্থ। ছাত্র ঠ্যাঙানো পবিত্র কাজ ছিল, গুরুদেবরা ‘যাও বাবা গোরা, ভাল ভাল কথাগুলো একটু চোঙা ফুঁকে বলে এসো তো’ বললেই গোরাও সস্তায় মজবুত চোঙার জোগাড় দেখত, আর শ্রোতারাও তক্ষুনি সবাই এক পায়ে খাড়া হয়ে হাঁ করে শুনত। এখন যুগটাই টোটাল জাহান্নমে। সংস্কারের ফল সংস্কৃত হওয়ার কথা, কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের পর দেবভাষার বদলে চতুর্দিকে জেন-ওয়াই’এর ক্যাকোফনি। তারা ‘গোরা’ শুনলে ‘গরুর প্লুরাল নাকি? গো-রা যখন?’ বলে প্যাঁক দেয়। মার্ক্স বলতে নম্বর বোঝে, রাম বলতে পানীয়। জ্ঞান শুনলে ‘ও ম্যান’ বলে, রকে বসে বক দেখায়, টিভির যুধিষ্ঠির সশরীরে উপদেশ দিতে এলে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে হল্লা মচায়। সবই আসলে যুগের হাওয়া। অমনোযোগের চূড়ান্ত। সিলেবাসে ‘রথের রশি’ ঢোকালে এরা গোয়েন্দা হুকাকাশি পড়বে, স্বপনবুড়ো পড়তে বললে স্বপনকুমার। গীতা পড়ালে গীতগোবিন্দ পড়বে, মহাভারত পড়ালে কুমারসম্ভবে ইন্টারেস্ট হবে। এমনকী বস্ত্রহরণ পর্বেও ক্লাস খাঁ-খাঁ করবে, ‘ওরে সিলেবাসেরটাও তো 'A' মার্কা’ বলে কোনও লাভ হবে না। আসলে যুগটাই আউট অব সিলেবাস। সাধে কী আর লোকে স্লোগান দেয়, নাথিং অফিশিয়াল অ্যাবাউট ইট!

Advertisement

bsaikat@gmail.com

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement