The Ashes 2025-26

১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জিতল ইংল্যান্ড! মদ‍্যপান বিতর্ক দূরে সরিয়ে দু’দিনে জয়ী স্টোকসেরা, চুনকামের স্বপ্ন অধরা অসিদের

২০১০-১১ সফরে শেষ বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। পরের তিন সফরে ১৫ টেস্টের মধ্যে ১৩টি হেরেছিল তারা। বাকি দু’টি টেস্ট ড্র হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৪
Share:

(বাঁ দিকে) ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সিরিজ় আগেই হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। আশঙ্কা ছিল চুনকামেরও। সেই লজ্জা থেকে মুক্তি পেলেন বেন স্টোকসেরা। মেলবোর্নে দু’দিনে অস্ট্রেলিয়াকে হারালেন তাঁরা। ১৫ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতল ইংল্যান্ড। ৫৪৬৮ দিন পর ১৮ টেস্ট শেষে এল জয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে তারা শেষ জিতেছিল ২০১০-১১ সফরে সিডনিতে। সে বার শুধু টেস্ট নয়, সিরিজ়ও জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেই সিরিজ়েই মেলবোর্নে এসেছিল জয়। ১৫ বছর পর সেই মেলবোর্নেই হল লজ্জামুক্তি। পরের তিন অস্ট্রেলিয়া সফরে ১৫ টেস্টের মধ্যে ১৩টি হেরেছিল ইংল্যান্ড। এই সফরেও প্রথম তিন টেস্টে হারের পর চুনকামের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সেই আশঙ্কা কাটালেন স্টোকসেরা। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সমর্থকদের মুখে একটু হলেও হাসি ফেরালেন তাঁরা। খেলা শেষে স্টোকসদের নামে জয়ধ্বনি দিলেন ইংরেজ দর্শকেরা। অস্ট্রেলিয়ার চুনকামের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। ২০১৩-১৪ সিরিজ়ে তারা যা করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেন না স্মিথেরা।

Advertisement

মেলবোর্নে নামার আগে মদ্যপান বিতর্কে জর্জরিত ছিল ইংল্যান্ড দল। অভিযোগ উঠেছিল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টের মাঝে নুসা সমুদ্রসৈকতে প্রচুর মদ্যপান করেছিলেন ইংরেজ ক্রিকেটারেরা। তার প্রভাব পড়েছে তাঁদের খেলায়। অভিযোগের তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এই পরিস্থিতিতে স্টোকস সমর্থকদের কাছে আবেদন করেছিলেন, সমালোচনা ছেড়ে পাশে থাকার। তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁর অধিনায়কত্বের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মেলবোর্নে হারলে স্টোকসের চাকরি নিয়ে টানাটানি হত। পদ হারাতে পারতেন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামও। তবে এই জয়ের পর হয়তো চাকরি বাঁচিয়ে ফেললেন দু’জনই।

মেলবোর্নের পিচে ১০ মিলিমিটার ঘাস রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরিকল্পনা ছিল মিচেল স্টার্কদের পেস আক্রমণ দিয়ে ইংল্যান্ডকে শেষ করে দেওয়া। নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই পা দিলেন স্টিভ স্মিথেরা। দু’দিন মিলিয়ে পড়ল মোট ৩৬ উইকেট। তার মধ্যে প্রথম দিনই ২০ উইকেট পড়ল, যা গত ১১৬ বছরের অ্যাশেজ় ইতিহাসে রেকর্ড। দু’দিন চার ইনিংস মিলিয়ে রান হল মোট ৫৭২। পার্‌থে প্রথম দিন ১৯ উইকেট পড়েছিল। কিন্তু সেই মাঠের থেকেও এই মাঠে ব্যাটারদের খেলতে বেশি সমস্যা হল। দু’দিন ধরে পেসারদের বল সুইং করল। চতুর্থ ইনিংসে ইংরেজ ব্যাটারেরা সাহসী ব্যাটিং করলেন। তারই ফসল পেল ইংল্যান্ড।

Advertisement

মেলবোর্নে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন বোলারেরা। এই সিরিজ়ে ইংল্যান্ডকে বার বার সমস্যায় ফেলা ট্রেভিস হেড আউট হন ১২ রানে। প্রথম চার ব্যাটারের কেউ রান পাননি। পঞ্চম উইকেটে উসমান খোয়াজা ও অ্যালেক্স ক্যারে ছোট জুটি বাঁধেন। কিন্তু তাঁরাও বড় রান করতে পারেননি। খোয়াজা ২৯ ও ক্যারে ২০ রান করেন।

অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। আইপিএলের নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কেনার পর থেকে ব্যাটে রান নেই গ্রিনের। এই ম্যাচে ১৭ রান করেন তিনি। পেসার মাইকেল নেসের দলের হয়ে সর্বাধিক ৩৫ রান করেন। তাঁর ব্যাটে দেড়শো পার হয় অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে যান স্টিভ স্মিথেরা।

ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জশ টং। ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। গাস অ্যাটকিনসন নিলেন ২ উইকেট। ব্রাইডন কার্স ও অধিনায়ক স্টোকসের ঝুলিতে ১ করে উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ইংল্যান্ডেরও খেলতে সমস্যা হবে। তার পরেও আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু শুরুতেই মিচেল স্টার্ক বুঝিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ডের পেসারেরা যে কাজটা করেছেন, সেটা আরও ভাল ভাবে করতে পারেন তাঁরা। বেন ডাকেটকে (২) আউট করে প্রথম ধাক্কা দেন তিনি। তার পর থেকে টপ অর্ডারের আয়ারাম-গয়ারাম দশা। জ্যাক ক্রলি (৫), জেকব বেথেল (১) ও জো রুট (০) ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ঘরের মাঠে এত ভাল খেলে। রুট একের পর এক শতরান করেন। কিন্তু বিদেশের মাঠে তাঁদের ব্যাটিং অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। ঘরের মাঠে পাটা উইকেট বানিয়ে রানের পাহাড় গড়ে কি আখেরে নিজেদেরই ক্ষতি করেছে তারা? চলতি অ্যাশেজ় সিরিজ় তো সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।

১৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন হ্যারি ব্রুক। উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা না করে বড় শট খেলা শুরু করেন তিনি। স্টার্ক হোন বা স্কট বোলান্ড, কাউকে রেয়াত করছিলেন না। কিন্তু কত ক্ষণ টানবেন তিনি। ৪১ রান করে বোলান্ডের বলে আউট হয়ে ফেরেন ব্রুক। অধিনায়ক স্টোকস ১৬ রান করে নেসেরের শিকার হন। গাস অ্যাটকিনসন না থাকলে ইংল্যান্ড ১০০ রানও করতে পারত না। ন’নম্বরে নেমে ২৮ রান করেন তিনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ১০০-র গণ্ডি টপকায় দল। মাত্র ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে অল আউট হয়ে গেল ইংল্যান্ড। প্রশ্ন উঠছিল, ৩০ ওভারও যদি একটা দল খেলতে না পারে, তা হলে তারা টেস্ট জিতবে কী ভাবে? তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে? কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার খারাপ ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দিল।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানে অল আউট হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। তাদের ইনিংস ৩৪.৩ ওভার টিকল। এই ১৩২ রানের মধ্যে ৪৬ রান ওপেনার হেডের। বাকিদের মধ্যে অধিনায়ক স্মিথ ২৪ ও গ্রিন ১৯ রান করেন। আর কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছোতে পারেননি। তার মাঝেই মার্নাশ লাবুশেনের উইকেট ঘিরে বিতর্ক হয়। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তিনি। ইংরেজ বোলারদের মধ্যে ব্রাইডন কার্স ৪ উইকেট নেন। স্টোকস ৩, টং ২ ও অ্যাটকিনসন ১ উইকেট নেন।

ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৭৫ রান। তবে প্রথম ইনিংসে তারা যে ভাবে ব্যাট করেছিল, তাতে এই রান স্টোকসরা তাড়া করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ কাটিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। চলতি সিরিজ়ে প্রথম বার ভাল দেখাল ক্রলি ও ডাকেটকে। বিশেষ করে ডাকেট যে ভাবে আক্রমণাত্মক খেললেন, তাতে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। যে স্টার্কের বলে তিনি বার বার আউট হয়েছেন, সেই স্টার্ককেই শুরু থেকে আক্রমণ করলেন ইংরেজ ওপেনার। ২৬ বলে ৩৪ রান করে অবশ্য স্টার্কের বলেই ফিরলেন তিনি।

অপর ওপেনার ক্রলি করলেন ৩৭ রান। এই টেস্টে ওলি পোপের বদলে খেলা জেকব বেথেলও রান পেলেন। অস্ট্রেলিয়া সব রকম চেষ্টা করল। বোলিং বদলে, ফিল্ডিং বদলে, পরিকল্পনা বদলেও লাভ হল না। অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা ১৯ রান অতিরিক্ত দিলেন। তারও খেসারত দিতে হল। বেথেল ৪০ রান করে আউট হলেন। রুট ১৫ রান করলেন। শেষ দিকে উইকেট পড়লেও তত ক্ষণে ইংল্যান্ড জয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। স্টোকসও রান পেলেন না। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন ব্রুক (১৮)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement