রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

এক বছর পার করল বহু আলোচিত আইন: রাষ্ট্রই নবজাতকদের নাম রাখবে। প্রশ্নটি প্রথম তুলেছিলেন এক ধর্মনিরপেক্ষ দলের সাংসদ। বলেছিলেন, মোবারক, আসফাক ডাকাতি করলেই সবাই ভাবে মুসলমানরা ডাকাত। শ্যামল, অমল চুরি করেছে জানলেই লোক বলে, হিন্দুরা আজকাল খুব চুরি করছে। অপরাধীদের নাম শুনলেই বুদ্ধিমানরা তার ধর্ম-জাত জেনে যায় আর ভাবে এটাই ওই ধর্মজাতির সবার মানসিকতা। দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, তাই এই অসুবিধা দূর করতে রাষ্ট্রই নাম রাখুক। এ নিয়ে দেশ তোলপাড় হল, কোন নামে ধর্ম বোঝা যাবে না— তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও আতান্তরে পড়লেন। ঠিক হল সব ধর্ম মিলিয়ে নাম-পদবি হবে। যেমন, ‘হেনরি গণেশ খান’, ‘অ্যালবার্ট আখতার দাস’। কিন্তু বিরোধী দলনেতা বললেন, এতে বৌদ্ধ, জৈন ও অন্যান্য ধর্ম কোণঠাসা। শুধু হিন্দু-ইসলাম-খ্রিস্টান নাম চলছে। কোর্ট জানাল, নামে অন্তত ২০টি ধর্ম থাকতেই হবে। শুধু শিশু নয়, পুরনো নাগরিকদের নামও বদলাতে হবে। নতুন নাম বিশাল বড় হল। সরকারি ফর্ম, সচিত্র পরিচয়পত্র নতুন করে ছাপতেই জিডিপি-র ৩০% অর্থ ফুরিয়ে গেল। শুধু নাম ছাপতেই খবরের কাগজ শেষ। স্কুলে রোলকল করতেই দিন কাবার। সেলেব্রিটিরা বিরক্ত। এত কষ্ট করে বিখ্যাত করা নাম কেন জলাঞ্জলি দেবেন! সিনেমা ও ক্রিকেটের তারকারা ধর্মঘট শুরু করলে সরকার বাধ্য হয়ে ঘোষণা করল, তাঁদের প্রথম নামটা থাকুক, শুধু পদবি বদলে স্টার, ডলার, হ্যাশট্যাগ প্রভৃতি চিহ্ন ব্যবহার করুন। পুরোহিতের নামের আগে মহম্মদ ও ইমামদের নামের আগে জ্যাক, কার্তিক যোগ হওয়ায় তাঁরা আত্মহত্যার হুমকি দিলেন। চাপে পড়ে সরকার তাঁদের নিজের পছন্দের নাম রাখার অধিকার দিতেই, দলে দলে লোক পুরোহিত ও ইমাম হবার চেষ্টা শুরু করল। দেশে ধর্মের গোঁড়ামি মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। কাল তাই আইনটি বাতিল করারই সুপারিশ জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার প্রধান।

Advertisement

অনিন্দ্য পাল, হায়দার পাড়া, শিলিগুড়ি

Advertisement

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

প্রেম-রাজ-রাহুলে খান খান নব্বই

১৯৯৪। ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’, হল-এ গিয়ে দেখা আমার প্রথম হিন্দি সিনেমা। মনে আছে, ক্লাস নাইনের চোদ্দো-পনেরো জন মেয়ে আর সঙ্গে পাহারা দেওয়ার জন্য গোটা পাঁচেক মা। সিনেমা দেখে হল থেকে বেরিয়ে আমরা একেবারে আত্মহারা। পা’টা যেন ঠিক মাটিতে পড়ছে না, মনে হচ্ছে ওই ফিল্মি ফ্যামিলির বিশাল ড্রয়িংরুমেই এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছি। তার পর কত দিদির বিয়ে এল-গেল, না একটা ‘প্রেম’ মার্কা দিদির দেবর চোখে পড়ল, না একটা ওই রকম পরিবার— যেখানে সকলে সারা ক্ষণ বিয়েশাদি নিয়ে ব্যস্ত, পড়াশোনা- পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েদের কেউ এত বিরক্ত করে না।

সলমন খানের ‘প্রেম’ যদি এক দিকে আদর্শ গুডবয় হয়, তার পাশে শাহরুখের ‘ডর’ বা ‘বাজিগর’-এর নাছোড় প্রেমিক-অবতার দেখে আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তো একদম কনফিউজ্‌ড। ধরা যাক, ঠাকুরের দয়ায় কোনও ছেলে মুখ তুলে আমাদের দিকে চাইল, আর আমরা তাকে পাত্তা দিলাম না। তা সত্ত্বেও সে যদি পিছু না ছাড়ে, তবে কি তার এই শাহরুখোচিত দিওয়ানাপনের জন্য তাকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়া উচিত? এই সমস্যা জীবনে আসেনি কোনও দিন, কিন্তু যদি আসে তা হলে কী করা উচিত, ভেবে ভেবে আকুল সময় কেটে গেছে প্রচুর।

আমির খানও কম যান না। ‘দিল হ্যায় কে মানতা নহি’ দেখে যে কত বার পালাব ভেবেছি। এক জনও কি আমির খান আমার জন্য বাসে কাঁধ পেতে দেবে না কিংবা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে একটা মিষ্টি হািস হাসবে না? শুধু কি তাই? এক পাল কচিকাঁচা আর মিত্তি-মিত্তি জুহি চাওলা-কে নিয়ে ‘হম হ্যায় রাহি পেয়ার কে’ বলে দিব্যি হাজির হয়ে গেলেন। নানা রকম মজার কাণ্ডকারখানা আর ‘কাশ কোই লড়কা মুঝে পেয়ার করতা’ টাইপ চাপা হা-হুতাশ নিয়ে টিনএজার দর্শকবৃন্দ পুরো পাগলপারা। এত সিনেমা কিন্তু মোটেই হল-এ গিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। ‘এইচএএইচকে’ ছাড়া অনেকগুলোই ভিডিয়ো ক্যাসেট ভাড়া করে এনে, বা লোকাল কেব্‌ল চ্যানেলের বদান্যতায় দেখা।

‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির একটি দৃশ্য। কিন্তু
বছর কুড়ি পরেও রাজ-সিমরনের ম্যাজিক সমান তুলকালাম।

অকারণ আবেগে মোড়া কিশোরীবেলায় খান-ভাইদের অভিনীত ছবিগুলো এক-একটা ঢেউয়ের মতো আমাদের লেখাপড়া-রুটিন-ঘণ্টাবাঁধা জগতের পাড়ে আছড়ে পড়ত, আমাদের গোটা প্রজন্মটাকেই তার দোলায় নিয়ে ছিনিমিনি খেলত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সেই সময় আমাদের সক্কলের দিল-ই এমন দরাজ ছিল যে সেখানে পাতা সিংহাসনে শাহরুখ-আমির-সলমন, তিন জনই বেশ আরাম করে হাত-পা ছড়িয়ে বসতে পারতেন।

নব্বইয়ের দশকে এই খান-দাদারা পুরো জমিয়ে রেখেছিলেন। ফেসবুক-হোয়াটস্‌অ্যাপহীন সেই সব দিনগুলো ওঁরা না থাকলে মনে হয় এমন মনোরম হত না। স্বপ্নের বিয়ে, এনআরআই হিরো— এই সমস্ত যদি আমাদের আলাদিনের জাদু কার্পেটে চড়িয়ে উড়িয়ে থাকে তো ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’ বা ‘রঙ্গিলা’র মতো ছবি আমাদের চেনা গন্ধের মধ্যে বাস্তবের অজানা খুশবু এনে দিয়েছিল।

আরও প্রচুর মন খান-খান করা সিনেমার নাম মগজে ধাক্কা দিচ্ছে। বলি সেই ছবিটার কথা, যেটা ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’-এর পর আবার আমাদের সিনেমা হল-এ নিয়ে গেল। ‘ডিডিএলজে’। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। এ বারেও বন্ধু আর তার সঙ্গে মায়েদের কম্বো! ব্যাপারস্যাপার দেখে তো পুরো চক্ষু চড়কগাছ। ইউরো রেল-এ ভ্রমণ (সিনেমার পরদাতেও তখন এত জলভাত ছিল না বাঙালির কাছে), তা-ও আবার সঙ্গে এমন ‘রাজ’ যে কিনা হিন্দুস্তানি লড়কির ইজ্জত ব্যাপারটা কতটা গুরুতর— সেটা দারুণ বোঝে। আর কী চাই! বিদেশি চকচকানি, এনআরআই নায়ক আর দেশি আবেগ— সব মিলিয়ে ছবিটা মা-কুলেরও বেশ ভালই লেগেছিল। তারই ফল কি না জানি না, তবে এর পর সিনেমা দেখতে গেলে মা-বাহিনী আর পিছু নেয়নি।

যশ চোপড়াজি-কে অনেক ধন্যবাদ। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে যদি উনি ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র ব্যাপারটা খোলসা করে না জানাতেন, তা হলে আমাদের মতো বাংলা মিডিয়ামে হাইস্কুল-পড়ার কালটা পুরো আলুনি হয়ে যেত। কর্ণ জোহরই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে এমন কলেজ বানালেন, যেখানে পেয়ার-মহব্বত ছাড়া আর কোনও সাবজেক্টেরই ক্লাস হয় না। ছবিগুলো দেখার পর বাড়ি ফিরে আবার যখন বইখাতা খুলে বসতে হত আর ষন্ডামার্কা আদ্যন্ত ভিলেন-গোছের পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতি নিতে হত, মনে হত আহা, কোনও ভাবে যদি ওই রংচঙে জগৎটায় ঢুকে পড়া যেত, মা কসম আর বেরোতাম না।

খানদাদাদের পায়ে শতকোটি প্রণাম, তাঁরা আমাদের জেনারেশনকে ভাসিয়েছেন, ডুবিয়েছেন। আমাদের সেই দশক তো কবেই বুড়িয়ে গেছে, ওঁরা এখনও প্রতি বছর একশো-দুশো-তিনশো কোটির ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। কিন্তু একশো-দুশো কোটির ধাক্কা কিন্তু তেমন করে যেন ভাসায় না, যেমনটা আমাদের সময় উথালপাথাল ছিল। এখন তো কত হিরো আসছে-যাচ্ছে, ওঁরা এখনও মহিমা বিলিয়ে যাচ্ছেন। আজকের জেন-ওয়াইকে ওঁরা কী ভাবে ভুলিয়ে রেখেছেন সে নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা হবে, কিন্তু ওঁদের দুরন্ত দুর্দান্ত কেরিয়ারের শুরুর দিনগুলোয় পাশে থাকার জন্য আমাদের সেই কোন নব্বই দশকের টিনএজার-প্রজন্মটাও অমর হয়ে যাবে।

কৃষ্ণরাজেশ্বরী মিত্র, সল্ট লেক, কলকাতা

krishnarajeshwarim@gmail.com

নইয়ের দশকের কোনও ঘটনার সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে?
লিখুন এই ঠিকানায়: হ্যালো 90’s, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। বা, লেখা pdf করে পাঠান
এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement