foods drinks

বড়দিন সামনেই, বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন পছন্দের পানীয়

ফলের রস ও বরফের ছোঁয়ায় বাড়ির হেঁশেলেই বানিয়ে নিন পছন্দের পানীয়।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:১০
Share:

বড়দিনের আগে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন পছন্দের পানীয়। ছবি: শাটারস্টক।

বছরের এই সময়টায় লরা আন্টির বাড়ি গেলে অরেঞ্জ ওয়াইন আর প্লাম কেক জুটতই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে আর বড়দিনে দেখা হয় না সেই লরা আন্টির সঙ্গে। আসানসোলে ওয়াইন-কেকের সংসার আগলে রয়ে গেলেন লরা জেমস্‌ আর মেধাবী তানিয়া কর পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিলেন কর্পোরেট জগতের দৌড়ে। ঘুরলেন দেশ-দুনিয়া। তবু ডিসেম্বরের হাওয়াটা বারবার ফিরিয়ে আনত কমলালেবুর ঘ্রাণে মগ্ন টলমল সেই রঙিন পানীয়ের স্মৃতি!

Advertisement

ইউরোপে এক ক্রিসমাস মার্কেটে গিয়ে তানিয়া দেখেছিলেন, শুধু কমলা লেবু নয়, চেরি, আঙুর, রাস্পবেরি, ব্ল্যাকবেরি মতো কত ফল দিয়েই সেখানকার বিভিন্ন বাড়িতে তৈরি হয় ওয়াইন। তা আবার স্টলে বিক্রিও করতে আসেন সেখানকার মানুষজন।

বছর দশেক পরে হঠাৎ লরা আন্টির ইউরোপীয় সংস্করণদের দেখে তানিয়ারও ইচ্ছে হয় নতুন কিছু শেখার। একটি আর্ন্তজাতিক ব্যাঙ্কের সিনিয়র ম্যানেজার তানিয়া বলছিলেন, ‘‘সেই থেকে একটু একটু করে বিভিন্ন ফল দিয়ে বাড়িতে ওয়াইন বানানো শুরু করি। আমার বাড়িতে বড়দিনের সময়ে কেউ এলেও এখন কমলালেবুর ওয়াইন পান।’’ তাঁর বানানো ওয়াইন বিক্রির চিন্তা এখনও না করলেও, আরও বিভিন্ন রকমের ফলে ওয়াইন বানানোর রেসিপি রপ্ত করার চেষ্টায় আছেন তানিয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন: পালং শাক আর কিমার কেরামতিতে বিরিয়ানি এখানে কথা বলে

ফলের রস ও বরফের ছোঁয়ায় পানীয় প্রাণ পাক। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কখনও বিদেশ কিংবা ভিন্‌ রাজ্য থেকে কেনা নামী ব্র্যান্ডের পানীয়, কখনও বা বো ব্যারাকের কোনও অ্যাংলো গিন্নির হাতে বানানো রেড ওয়াইন— এই সব নিয়ে বছরের পর বছর আনন্দেই বড়দিন কাটিয়েছেন এ শহরের বাঙালি। দিন বদলের সঙ্গে ‘হোমমেড’ তকমার জেল্লা বাড়তেই ওয়াইন সংস্কৃতিতেও নিজস্ব ছোঁয়া দিতে উৎসাহী এখন বহু মধ্যবিত্ত বাঙালি।

কয়েক জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিলে একটি ওয়াইন তৈরির দল বানিয়েছিলেন বছর কয়েক আগে। মাঝেমাঝেই তাঁদের কারও বাড়িতে বসত ওয়াইন তৈরির আড্ডা। আঙুর, কলা, কালো জাম, আম— এক এক মরসুমে এক এক রকমের ফল থাকত সেই ওয়াইন কেন্দ্রিক আড্ডায়। এখন নানা কাজে নিয়মিত ওয়াইন মেকার্স আড্ডা না বসলেও, নিজ নিজ ড্রয়িং রুমে আপ্যায়নের জন্য তরলটুকু নিজেদের হাতে মনেরমতো করেই বানিয়ে রাখতে পছন্দ করেন তাঁরা।

গরমের ফল আর শীতের ফল ঘিরেই বসত মূলত ওয়াইন তৈরির আড্ডা। তাঁদেরই এক জন সোমা মুখোপাধ্যায় জানান, এখনও মাঝেমাঝেই মরসুমি ফলের ওয়াইন বানানোর নামে জমায়েত হয় তাঁদের। গরমের সময়ে যেমন আম সকলের পছন্দের।

এক দিন বসে একসঙ্গে বেশ কয়েক কিলোগ্রাম আম ছাড়িয়ে, আঁটি আলাদা করে তা ভাল করে গুলে চিনি আর সামান্য ইস্ট দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। তার পরে টানা বেশ কিছু দিন অন্ধকার ঘরে একটি বিশাল পাত্রে জিরোয় সেই ফলের কাই। মাস খানেক পরে আবার দেখা করার পালা। একসঙ্গে ফের হইচই। এ বার এক দফা ছেঁকে বার করা হয় খানিকটা তরল। এ ভাবেই দফায় দফায় চলে আড্ডা আর ওয়াইন বানানোর পালা। গোটা প্রক্রিয়া শেষ হতে লাগে অন্তত খান চারেক বৈঠক।

আরও পড়ুন: খোদ কলকাতায় বিরিয়ানির চেনা ছক বদলাতে হাজির এরাই

পেশায় স্কুল শিক্ষিকা মৃত্তিকা সিংহ আবার একা নিজের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে বসেই অবসরযাপনের নামে মাতেন ওয়াইন গবেষণায়। ওয়াইন বানানোর দলের কথা জেনে খুবই উৎসাহী হলেন তিনি। বলেন, ‘‘আগে মায়েদের একসঙ্গে গোল করে বসে পিঠে-পুলি, নাড়ু-মোয়া বানাতে দেখতাম। ওঁদের আড্ডার কথা শুনে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে আপন হয়ে যাচ্ছে ঘরে ওয়াইন তৈরির সংস্কৃতিও।’’ মৃত্তিকা জানান, বৌবাজার অঞ্চলে বড় হওয়া সহকর্মী শিলা গোমসের কাছে প্রথম বাড়িতে তৈরি ওয়াইন চেখেছিলেন। ওঁর থেকে জেনে একটু একটু করে নিজে বানাতে শুরু করেন। এই শিক্ষার অঙ্গ হিসেবেই প্রতি বছর শীতের সময়টায় বো ব্যারাকের নানা বাড়িতে ঢুঁ দেন মৃত্তিকা। সেখানকার বিভিন্ন ঘরে তৈরি জিঞ্জার ওয়াইন তাঁর বিশেষ প্রিয়।

ঘরে বানানো ফলের ওয়াইন এখনও বিক্রি করেন না এঁরা কেউই। তবে নিজের বানানো নুডল্স, চিকেনের মতোই অতিথিকে ‘স্বপাক’ ওয়াইনের স্বাদটুকু দিতে ভালবাসেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন