Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
BIRYANI

খোদ কলকাতায় বিরিয়ানির চেনা ছক বদলাতে হাজির এরাই

বিরিয়ানি নিয়ে বাঙালির যতই আদিখ্যেতা থাক, একটা অন্য ঘরানাও ক্রমশ মাথা তুলছে এ শহরে।

এই খাস কলকাতাতেই রয়েছে বিরিয়ানির নানা প্রকারভেদ।

এই খাস কলকাতাতেই রয়েছে বিরিয়ানির নানা প্রকারভেদ।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৬
Share: Save:

সিরাজ কিংবা আরসালানের ভক্তরা শুনলে ঘুষি পাকাতে পারেন!

ডিম-আলুবিশিষ্ট বিখ্যাত কলকাত্তাইয়া বিরিয়ানি নিয়ে বাঙালির যতই আদিখ্যেতা থাক, একটা অন্য ঘরানাও ক্রমশ মাথা তুলছে এ শহরে। বিরিয়ানির পরম্পরায় কলকাতার নিজস্ব সংযোজনটুকু বজায় রেখেও কিছু নতুন শৈলী আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে এ শহরের ভোজ-সংস্কৃতিতে।

যেমনটা ঘটেছিল, বছরখানেক আগে খাস লখনউয়ে তালিমপ্রাপ্ত বিরিয়ানি-শিল্পী মনসুর মিয়াঁর হাত ধরে। আমিনাবাদ, হজরতগঞ্জের খানদানি কবাব, বিরিয়ানির ঠেকে নাড়া বাঁধা মনসুরকে মাটনের রান নিয়ে কিছু তুকতাক করতে বলেছিলেন, ঔধ১৫৯০ রেস্তোরাঁর কর্তা দু’ভাই শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরী। দেশপ্রিয় পার্ক, সল্টলেকের রেস্তোরাঁয় তাই জন্মাল, মাংসের নির্যাসস্নিগ্ধ বিশেষ মাটন রান বিরিয়ানি। একটি বিরিয়ানি উৎসব উপলক্ষে তৈরি হয়েও ক্রমশ তা রেস্তোরাঁর রোজকার মেনুতে ঢুকে পড়েছে।

শোনা যায়, খাসির ঠ্যাংয়ের ভক্ত ছিলেন, ভারতের প্রথম আধুনিক ব্যক্তি বলে পরিচিত রাজা রামমোহন রায়। কিন্তু তখন তো বিরিয়ানির চল ছিল না তেমন এ তল্লাটে। আর অন্তত দু-আড়াই কেজির পেল্লায় মাটন রান, একলা হজম করতে পারেন, এমন ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নায়কই বা কোথায় আজকের বাঙালির মধ্যে। তাই সেই ‘মাটন রান’ বা ঠ্যাংয়ের মাংসকে ভাগ করেই তৈরি হয়েছে বিশেষ রান বিরিয়ানি। আস্ত একটা রান থেকে কম-বেশি সাত-আট ‘পোর্শান’ বিরিয়ানি হয়। তাতে আলুর প্রবেশ নিষেধ।

মার্কোপোলোর শেফ অমিতাভ চক্রবর্তীও মেনুতে বিরিয়ানি রাখলেও ডিম-আলুর জনপ্রিয় বিরিয়ানি-সংস্করণকে আমল দেননি। মেনুতে রয়েছে হায়দরাবাদি ঘরানার মাটনের সিকন্দরি দম বিরিয়ানি ও চিকেনের আওয়াধি বিরিয়ানি। অমিতাভ বলছিলেন, ‘‘আলু ছাড়াই বিরিয়ানি কিন্তু রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তম রান্নার একটি।’’ কলকাতায় হায়দরাবাদি বিরিয়ানির কদর রয়েছে, দক্ষিণি আমিষ রান্নার রেস্তোরাঁ ট্যামারিন্ড-এও। বছরে মেরেকেটে দু-এক বার বাড়িতে ফেরা কলকাতাকন্যা ঋতুপর্ণা দত্ত অবশ্যই টিপিক্যাল বাঙালি বিরিয়ানির জন্য মুখিয়ে থাকেন। খোদ মেটেবুরুজের নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের পরিবারের কারও কারও বাড়িতেও দেখা যায়, আলু দেওয়া সর্ষের তেলের বিরিয়ানিটাই জীবনচর্যার অঙ্গ। তবু ঋতুপর্ণাই বলছিলেন, ‘‘আমার মরাঠি বর বা ছেলেমেয়েদের জন্য আজকাল অন্য ধরনের বিরিয়ানিও খুঁজতে হয়।’’

মনে রাখতে হবে, কলকাতায় বিরিয়ানির প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই আলুকে বাঙালির মনের ঘরে চিরতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে চিৎপুরের রয়্যাল হোটেলের হলুদবরণ রাজকীয় বিরিয়ানি। তারাও আলুকে আমল দেয় না। সে-বিরিয়ানির সঙ্গে মাটন চাঁপ খেয়ে এক বার একটা জটিল কেসে ফেঁসে যাওয়া ফেলুদার অবধি মগজের খিল খুলে গিয়েছে। আর এক ধ্রুপদী রেস্তোরাঁ অম্বর-এও পুঁচকে পুঁচকে মাটন বল-ভরপুর মোতি পোলাওকেও বাঙালি দীর্ঘদিন বিরিয়ানি-জ্ঞানে খেয়ে এসেছে।

এ কালের কলকাতায় সিরাজ-আরসালানদের দাপট সত্ত্বেও কিছু অন্য ঘরানার বিরিয়ানি জায়গা করে নিচ্ছে। আদতে বিরিয়ানিতে আলু ঢুকেছিল, মাংস খাওয়ার রেস্তহীন গরিবকে কিছুমিছু সান্ত্বনা দিতে। অপর্যাপ্ত মাংস ও প্রধানত মাংসের গন্ধ দিয়ে রাঁধা ভাতে আলুটাই তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাত। এ কালে কোনও কোনও মাটনভক্ত বলে থাকেন, মাংস একটু বেশি করে পেলে আলু দিয়ে হবেটা কী!

ঔধ ১৫৯০-এর মেনুতে রান বিরিয়ানি ছাড়াও এখন কোয়েলের শিকারি বাটের বিরিয়ানি, মাংসের পায়ার শাহি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে নানা কিসিমের পোলাও-খিচড়ি। এর মধ্যে গোস্ত খিচড়ি ছাড়াও মাংসের জুসে রাঁধা ইয়াখনি গোস্ত পোলাও বা ভেটকি কিংবা চিংড়ির সুগন্ধি পোলাও।

মেনুতে কলকাতার আলুবিশিষ্ট বিরিয়ানি থাকলেও, ঘি-সুরভিত লখনউয়ি বিরিয়ানিই রেস্তোরাঁর তারকা। ‘‘ভাত-মাংসের কম্বিনেশনটা ঠিকঠাক খাওয়াতে পারলে বাঙালি ঠিক নেবে’’, বলছিলেন সিগরি রেস্তোরাঁর শেফ সন্দীপ পাণ্ডে। সিগরি-র মেনুতে কলকাত্তাইয়া বিরিয়ানির সঙ্গে হায়দরাবাদি বা অন্য ঘরানার বিরিয়ানিরও দেখা মেলে। পিটারক্যাটের মতো মার্কোপোলোতেও চেলো কাবাব এখন দৌড়চ্ছে। এ-সব ঘটনা সাক্ষ্য দিচ্ছে, ভাল বিরিয়ানি-পোলাও পেলে ছক ভাঙতেও রাজি আমবাঙালি।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Restaurants Biryani Recipes Indian Cuisine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE