চেনা রেসিপিতে অচেনা ‘টুইস্ট’, রান্না শেখালেন জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।
দুর্গাপুজো মানেই জমিয়ে ভূরিভোজ। পুজোর ক’দিন সকালে লুচি-তরকারি, দুপুরে জমিয়ে বাঙালি আহার আর সন্ধ্যা হলেই মুচমুচে ভাজাভুজি চাই বঙ্গজনের। বছরের আর পাঁচটা সময় কোলেস্টেরল আর হৃদ্রোগের চোখরাঙানিতে চপ-কাটলেট-কবিরাজি-ফিশফ্রাই-এর লোভ সামলে নিলেও পুজোর সময় মুখরোচক স্ন্যাক্স না খেলে যেন উৎসবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। রেস্তরাঁয় গিয়ে যে সব ভাজাভুজি খাবেন বলে ভেবেছিলেন, তার কয়েকটি খাস শেফের কাছ থেকে শিখে নিয়ে বানিয়ে ফেলুন বাড়িতেই। বাংলার তারকা শেফ বা রন্ধনশিল্পীরা তাই আনন্দবাজার ডট কমে বলে দিচ্ছেন পুজোয় বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন, এমন কিছু স্পেশ্যাল রেসিপি। রন্ধনশিল্পী জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় শেখালেন দু’টি মুখরোচক জলখাবারের সহজ প্রণালী।
মোচা-মাংসের কাটলেট
মোচার চপ কিংবা মটন কাটলেট তো অনেক খেয়েছেন, তবে একই পদে মোচা আর মাংসের যুগলবন্দি হলে কেমন হয়? রন্ধনশিল্পী জয়ন্ত বলেন, ‘‘পুজোর সময় মুচমুচে কিছু খেতে মন চাইলে বানিয়ে নিতে পারেন মোচা-মাংসের কাটলেট। প্রথম কামড়ে মুচমুচে আর মুখে দিলেই ঝাল-ঝাল, মিষ্টি-মিষ্টি পুরের অফুরান স্বাদ। এক বার চেখে দেখলে বার বার যেন খেতে মন চাইবে এমন কাটলেট।’’
উপকরণ:
২ কাপ মোচা কুচি (নুন-হলুদ দিয়ে ভাপানো)
১ কাপ মটনের কিমা (নুন-হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করা)
১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি
১ টেবিল চামচ কাঁচালঙ্কাকুচি
১ টেবিল চামচ ধনেগুঁড়ো
১ টেবিল চামচ জিরেগুঁড়ো
১ চা চামচ হলুদগুঁড়ো
১ কাপ সর্ষের তেল
স্বাদমতো নুন-চিনি
আধ চা চামচ গরমমশলা
১ টেবিল চামচ লেবুর রস
২ টেবিল চামচ কিশমিশ
২ টেবিল চামচ ভাজা চিনেবাদাম
আধ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো
২টি ডিম
আধ কাপ ময়দা
২ কাপ বিস্কুটের গুঁড়ো
প্রণালী:
কড়াইতে সামান্য তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে নিন। এ বার সেদ্ধ করা মাংস, মোচা, আদা-রসুন বাটা আর নুন দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। এ পর একে একে কাঁচালঙ্কাকুচি, হলুদগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো দিয়ে আরও খানিক ক্ষণ নাড়াচাড়া করে নিন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে ১ টেবিল চামচ ময়দা ছড়িয়ে দিন পুরের উপর। শেষে বাদামকুচি, কিশমিশকুচি, গরমমশলা গুঁড়ো, চিনি, লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে পুরের মিশ্রণটি ঠান্ডা করে নিন। একটি বাটিতে ময়দা, ডিম, নুন আর গোলমরিচ খুব ভাল করে ফেটিয়ে নিন। পুরের মিশ্রণটি থেকে বেশ খানিকটা নিয়ে কাটলেটের আকারে গড়ে নিন। কাটলেটগুলি ডিম-ময়দার গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ডুবো তেলে লালচে করে ভেজে নিন। টম্যাটো সস্ আর কাসুন্দি মিশিয়ে একটি ডিপ তৈরি করে তার সঙ্গে পরিবেশন করুন মুচমুচে মোচা-মাংসের কাটলেট।
মাছের পাটিসাপটা
শীতকাল ছাড়া পাটিসাপটার দেখা মেলে কই! তবে শীতের পাটিসাপটা যদি শরতেই পাতে পড়ে ভিন্ন মোড়কে, তা হলে কেমন হয়? রন্ধনশিল্পী জয়ন্ত বলেন, ‘‘এই পাটিসাপটা ডায়াবেটিকরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন। পাটিসাপটায় কামড় বসালেই নারকেল-গুড়ের বদলে পাবেন কাতলা মাছের ঝাল ঝাল স্বাদ। এমন পাটিসাপটা খেতে হলে ঋতু দেখার প্রয়োজন নেই। শরতকালে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যাবেলার জমাজমাটি আড্ডার সঙ্গে দিব্যি যাবে মাছের পাটিসাপটা।’’
উপকরণ:
৩০০ গ্রাম কাতলা মাছের পেটি
৩০ মিলিলিটার সর্ষের তেল
৫০ মিলিলিটার ঘি
আধ কাপ পেঁয়াজকুচি
১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
১ চা চামচ হলুদগুঁড়ো
১ টেবিল চামচ জিরেগুঁড়ো
১ টেবিল চামচ কাঁচালঙ্কাকুচি
১৫০ গ্রাম সুজি
২০০ গ্রাম ময়দা
স্বাদমতো নুন, চিনি
১ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো
আধ চা চামচ গরমমশলা গুঁড়ো
১ টেবিল চামচ কাসুন্দি
প্রণালী:
কড়াইতে তেল গরম করে নুন-হলুদ মাখানো কাতলা পেটিগুলি লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন। এ বার মাছগুলি ঠান্ডা করে কাঁটা ছাড়িয়ে নিন। এ বার কড়াইয়ের তেলে পেঁয়াজকুচি, আদা-রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কাকুচি দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। একে একে হলুদ, জিরে, গরমমশলার গুঁড়ো দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। মশলা থেকে তেল ছে়ড়ে এলে কাঁটা ছাড়ানো মাছ, সামান্য ঘি আর গরমমশলা ভাল করে মিশিয়ে নিলেই পাটিসাপটার পুর তৈরি।
এ বার একটি বাটিতে সুজি, ময়দা, নুন, চিনি আর গোলমরিচ আর পরিমাণ মতো জল দিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিন। ননস্টিক তাওয়া গরম করে এই মিশ্রণ দিয়ে পাটিসাপটা বানিয়ে তার মধ্যে মাছের পুর দিয়ে মুড়িয়ে নিন। তৈরি হয়ে যাবে কাতলা মাছের পাটিসাপটা।