Laschamps Excursion

ভয় পেয়েছিলেন পূর্বপুরুষেরা! ৪১০০০ বছর আগের সেই ঘটনাই কি বদলে দিয়েছিল মানুষের ভবিতব্য?

প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে পৃথিবীর তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। তা-ই আমূল বদলে দিয়েছিল পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রা। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক একটি জার্নালে সম্প্রতিই এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৭
Share:

আকাশে আলোর ছটা। —এআই সহায়তায় প্রণীত।

মানুষের বিবর্তন সরলরৈখিক নয়। বরং জালের মতো। যার জট ছাড়ানো এখনও চলছে। আধুনিক মানুষের সবচেয়ে কাছের পূর্বপুরুষ কারা, শিম্পাঞ্জি-গরিলা না অন্য কেউ, এ নিয়েও নানা মুনির নানা মত। তর্ক-বিতর্ক চলে পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রা, আচার-আচরণ এবং বিবর্তন নিয়েও। সেই বিবর্তনের ইতিহাসের পাতায় ৪১ হাজার বছর আগের একটি ঘটনাও থাকা উচিত বলে মনে করছেন একদল গবেষক।

Advertisement

মহাশূন্যে সৌরঝড়়ের মতো কোনও ঘটনা ঘটলেও, তার আঁচ আমাদের শরীরে লাগে না। কারণ একটাই— পৃথিবীর তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র। যে কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিও আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে এই তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। যাকে বলা হয় ‘লাশাম্প এক্সকার্সন’। তা-ই আমূল বদলে দিয়েছিল পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রা। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক একটি জার্নালে সম্প্রতিই এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

মহাকাশে সৌরঝড় আছড়ে পড়লে দুই মেরু অঞ্চলে যেমন মেরুজ্যোতি (অরোরা বোরিয়ালিস বা অরোরা অস্ট্রালিস) দেখা যায়, তেমনই ‘লাশাম্প এক্সকার্সন’-এর সময়েও লাল-সবুজ আলোয় ঢেকে গিয়েছিল পৃথিবীর আকাশ। শুধু দুই মেরুই নয়, নিরক্ষীয় অঞ্চলেও দেখা গিয়েছিল সেই আলোর ছটা।

Advertisement

গবেষকদের অনুমান, সেই অরোরা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষেরা। ভয়ও পেয়েছিলেন। এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, হয়তো বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানও শুরু করেছিলেন তাঁরা। যদিও এ সবের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া কঠিন।

পৃথিবীর দুই মেরুর অবস্থান স্থির হলেও, চৌম্বক মেরু কিন্তু কোনও স্থির বিন্দু নয়। এটি পরিবর্তনশীল। উত্তর মেরুর কিছুটা দক্ষিণে অবস্থিত উত্তর চৌম্বকীয় মেরু। সেখানে পৃথিবীর ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র উল্লম্ব ভাবে অবস্থান করছে। পৃথিবীর পেটে যা কিছু রয়েছে, তার গতিশীলতার কারণে এই চৌম্বকীয় মেরু গত কয়েক শতাব্দী ধরেই ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে চলেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্লেস্টোসিন যুগের সেই মহাজাগতিক বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবীর চৌম্বক মেরুও এলোমেলো ভাবে কয়েক হাজার মাইল সরে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তিও ১০ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছিল সেই সময়। যার ফলে তা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিকেও তা আটকাতে পারেনি।

গবেষকদের মত, এই বিপর্যয়ের সময় নিজেদের বাঁচাতেই নিয়ানডার্থাল বা হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ)-রা জীবনযাত্রায় নানা বদল এনেছিলেন। কেউ দিনের পর দিন গুহায় থেকেছে। কেউ কেউ আবার বিশেষ ধরনের পোশাকও পরতেন। সেই সময় মুখে-শরীরেও এক ধরনের খনিজগুঁড়ো মাখতেন পূর্বপুরুষেরা। রোদ থেকে বাঁচতে আজকের দিনে আমরা যেমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করি, ঠিক তেমনই। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এ সবের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

সম্ভবত আড়াই লক্ষ বছর আগে পূর্বেরই কোনও প্রজাতি বিবর্তিত হয়ে হোমো সেপিয়েন্সের আগমন ঘটেছিল হর্ন অফ আফ্রিকায়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, তাদের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে নিয়ানডার্থালদের নিশ্চিত সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তারা তখন আগুন ও অস্ত্রে পারদর্শী, ঠান্ডাতে অভ্যস্ত। মানব বিবর্তনের এই সময় সংঘাত নাকি সহাবস্থান, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক। আধুনিক মানবের পূর্বপুরুষের নিরন্তর প্রয়াস ও সমন্বয়ের জোরে, নিয়ানডার্থালরা পিছু হটে আজ বিলুপ্ত।

মানব বিবর্তনের গোড়া থেকে এমনই বহু অজানা চরিত্রের আগমন ঘটেছে, যারা বদলে যাওয়া প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। নিয়ানডার্থালদের বিলুপ্ত হওয়ার নেপথ্যেও কি ‘লাশাম্প এক্সকার্সন’? তা অবশ্য নিশ্চিত করেননি গবেষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement