RELATIONSHIP

কত দিন টিকবে আপনার সম্পর্ক, জানিয়ে দেবে যন্ত্র!

খুব ঝগড়া হয় না কি গদগদ প্রেম? আদৌ টিকবে এ প্রেম? সম্পর্কের মেয়াদ এ বার জানান দিয়ে দেবে যন্ত্র! যন্ত্র সংগ্রহ করবে মনের তথ্য, আর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই মিলবে উত্তর। জেনে নিন কী ভাবে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:১৩
Share:

ডেটা রেকর্ডার যন্ত্র ও অ্যালগরিদম জানান দেবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

প্রেম বা সম্পর্কের মেয়াদ এ বার জানান দিয়ে দেবে যন্ত্র! যন্ত্র সংগ্রহ করবে মনের তথ্য, আর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে বিশেষ একটি অ্যালগোরিদমের সাহায্যে। আদৌ প্রেম টিকবে কি না, বা টিকলেও ক’দিন, উত্তর দিয়ে দেবে এই যন্ত্র নির্ভর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় ইতিমধ্যেই নিখুঁত ভাবে মিলে গিয়েছে ৩৪ যুগলের ফলাফল, এমনটাই দাবি সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষকের।

Advertisement

মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। কে কী ভাবে কথা বলছেন তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে, কী-ই বা তাঁদের আলোচনার বিষয়, ঝগড়া হলে কত ক্ষণ থাকছে, কে রাগ ভাঙাচ্ছেন— এমন সব তথ্যের উপর নির্ভর করেই এই ফলাফল বের করা সম্ভব বলে মত গবেষকদের।

দুটি মানুষের সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে এর আগেও গবেষণা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংস্থাও। তবে যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা না চালিয়ে স্রেফ মৌখিক ভাবে গ্রহণ করা ডেটা ও অনলাইন চ্যাটের উপরই নির্ভর করা হয়েছে এত দিন। সে ক্ষেত্রে কিছু কিছু মিললেও, এত নিঁখুত হয়নি ফল।

Advertisement

আরও পড়ুন

মহাকাশের অজানা রহস্যে বুঁদ পড়ুয়ারা

তথ্য সংগ্রহ করার পর, বিশেষ অ্যালগরিদমের সাহায্যে প্রতি জোড়া সঙ্গীর মনের মিলের হিসাব কষা হবে। ছবি: শাটারস্টক।

সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্ব বিভাগের গবেষক আডেলা টিমোনসের নেতৃত্বে চলতি গবেষণাটি হচ্ছে। তাঁর কথায়— “মানুষের মনের অবস্থা, তাৎক্ষণিক রক্তচাপ পরিবর্তন, বিরক্তি, অনুরাগ— এ সব অনুভূতি এবং অবস্থাকে কয়েক ধাপে একটি বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়। প্রথমে ৩৪ জোড়া ছেলে-মেয়ের প্রত্যেকের কোমর ও বুকে তার-সমেত যন্ত্রটি লাগানো হয়। তারগুলি ওই যন্ত্রেরই একটি প্লাগে লাগানো থাকে। এ বার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে তাঁদের ব্যবহার, সারা দিনের মেজাজ, কথাবার্তা, প্রতিক্রিয়া মেপে চলে এই যন্ত্র।” আনন্দবাজারকে আডেলা জানাচ্ছেন— তাঁদের রক্তচাপ, মানসিক উদ্বেগের পরিমাণ, ভাবনা-চিন্তার সূত্র— সব কিছুর তথ্য বা ডেটাই গ্রাফ ও অন্যান্য কিছু আঙ্কিক পরিমাপের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যন্ত্রটি আসলে একটি ডেটা রেকর্ডার। তথ্য সংগ্রহ করার পর, বিশেষ অ্যালগরিদমের সাহায্যে প্রতি জোড়া সঙ্গীর মনের মিল, আচরণের সামঞ্জস্য, কথাবার্তা এ সব মেলানো হয়।

এর পরের পদ্ধতিতে প্রতি জোড়া সঙ্গীর অনুমতি সাপেক্ষে তাদের মোবাইল, মেসেঞ্জার, ফেসবুক ইত্যাদির কথাবার্তা খতিয়ে দেখে তাঁদের মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ করা হয়। এর পর প্রায় ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায় এই সম্পর্কের মেয়াদ ক’দিন, দাবি গবেষকদের। তাঁরা বলছেন, যন্ত্রের মাধ্যমে পাওয়া ডেটা থেকেই প্রায় ৮৬ শতাংশ হিসেব মিলে যায়। সম্পূর্ণ মেলাতে তাঁদের শরণ নিতে হয় মোবাইল ও অন্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলির উপর।

আরও পড়ুন

সুনামির গ্রাসে যেতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গও!

আর ক’দিন একসঙ্গে পথ চলা, তা নির্ভুল জানাবে এই যান্ত্রিক পদ্ধতি। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কিন্তু মাত্র ৩৪ জোড়া সঙ্গীর উপর করা এই পরীক্ষা কী করে এতটা নিশ্চয়তা দিচ্ছে বিজ্ঞানীদের? এই পরীক্ষার অন্যতম গবেষক থিওডেরা চেসপারির মতে, এই পরীক্ষাকে আরও বিস্তারিত উপায়ে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়ে করার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ৩৪ জোড়া সঙ্গীকে নিয়ে বছর তিনেক ধরে যে পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এই ফল নির্ভুল হয়েছে বলে গবেষকদের দাবি। আর এটাই আশা জোগাচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

কলকাতার বেশির ভাগ মনোবিদ কিন্তু এই পদ্ধতিতে আস্থা রাখছেন। যেমন দেবাঞ্জন পানের মতে, মানুষের স্বভাব তার মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত। তাই এটা অসম্ভব নয়।

আর এক মনোচিকিত্সক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সম্পর্ক ক’দিন টিকবে, কেন টিকবে এগুলো খুব আবেগের বিষয়। কিন্তু আবেগকে যে হেতু মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে, তাই হাইপোথ্যালামাসের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। সেই কারণেই তো মেন্টাল ম্যাচ কথাটা এসেছে।’’

আরও পড়ুন

বিজ্ঞানে পঞ্চমুখী বঙ্গ মেধাকে কুর্নিশ ভাটনগরে

মনস্তত্ত্ববিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “এই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা বিদেশেই বেশি হয়। কারণ, সম্পর্ক নিয়ে ওখানে খুব বেশি ভাবার বা মানিয়ে চলার প্রবণতা আমাদের দেশের তুলনায় কম দেখা যায়। কর্মব্যস্ত এই সময়ে সকলেই চান সম্পর্কে সুখী হতে। তাই আগে থেকে বুঝে নিতে চান, এ সম্পর্ক থাকবে কি না। কিন্তু আবার এটাও সত্যি, একটি সম্পর্কে যাওয়ার আগে কেউ-ই সম্পর্ক ভাঙার কথা ভাবে না। কিন্তু একান্তই বনিবনা না হলে অনেকেই যাচাই করে দেখে নেওয়ার পথ ধরেন। তাই তো এই ধরনের পরীক্ষায় সাহায্য করতে ব্যক্তিগত চ্যাট, কথাবার্তা তা গবষকদের হাতে তুলে দিয়েছেন ৩৪ জোড়া সঙ্গী!’’

এ দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও কি এমন পরীক্ষানিরীক্ষা জনপ্রিয় হতে পারে? হতে পারে, মনে করছেন মনোবিদদের অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন