‘ভি-৪০৪ সিগনি’ ব্ল্যাক হোল থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে দৃশ্যমান আলো। ছবি-নাসা।
সে তা হলে তত কালো নয়!
সে-ও তা হলে উগরে দেয় আলো? আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে যেমন বলেছিলেন স্টিফেন হকিং।
শুধুই এক্স রশ্মি বা গামা রশ্মি নয়, দৃশ্যমান আলোও বেরিয়ে আসতে পারে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর থেকে। আর সেই আলো এতটাই জোরালো যে, তা এমনকী, কুড়ি সেন্টিমিটার ব্যাসের টেলিস্কোপ দিয়ে এই পৃথিবী থেকেই দেখা যায়।
একেবারে হালে অন্তত তেমনটাই দেখেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে সাত হাজার আটশো আলোকবর্ষ দূরে দু’টি তারার একটি নক্ষত্রমণ্ডলে। যাকে বলে, বাইনারি সিস্টেম। এই প্রথম। ওই বাইনারি সিস্টেমের নাম- ‘ভি-৪০৪ সিগনি’। যার মধ্যে রয়েছে খুব ভারী একটি ব্ল্যাক হোল। যা সূর্যের চেয়ে অন্তত নয় গুণ ভারী। ওই জোড়া তারার নক্ষত্রমণ্ডলীটি রয়েছে ‘সিগনাস’ নক্ষত্রপুঞ্জে।
আরও পড়ুন- এ বার ‘সূর্যের দেশে’ যাচ্ছে ভারত, সামনে দুই বাঙালি
দেখুন গ্যালারি- ছায়াপথের লীলাখেলা
ব্ল্যাক হোল থেকে দৃশ্যমান আলো বেরিয়ে আসার ঘটনাটা ঘটতে দেখা গিয়েছে টানা দু’সপ্তাহ ধরে। ওই আলোর বিচ্ছুরণ কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘটতে দেখা গিয়েছে।
‘নেচার’ জার্নালের সাম্প্রতিক সংখ্যায় এই আবিস্কারের কথা জানিয়েছেন জাপানের কিয়েটো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ মারিকো কিমুরা ও তাঁর সহযোগী গবেষকরা। গত ২৬ বছর ধরে ওই ব্ল্যাক হোলটির ওপর নজর রাখছিলেন গবেষকরা। অন্য ব্ল্যাক হোলগুলোর ক্ষেত্রে যেমন হয়, এর আগে বাইনারি সিস্টেম ‘ভি-৪০৪ সিগনি’-তে পাওয়া ব্ল্যাক হোলটি থেকেও তেমনই এক্স রশ্মি ও গামা রশ্মি বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দৃশ্যমান আলো বেরিয়ে আসতে দেখা যায়নি, এর আগে। গত বছরের ১৫ জুন নাসার ‘সুইফ্ট’ স্পেস টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পড়ে ওই ব্ল্যাক হোলটি থেকে দৃশ্যমান আলোর বিচ্ছুরণ।
কেন ওই ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসছে দৃশ্যমান আলো?
‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জ্যোতির্পদার্থবিদ মারিকো কিমুরা লিখেছেন, ‘‘কাছের একটি নক্ষত্রের একেবারে বাইরে যে গ্যাসের স্তরটি রয়েছে, ব্ল্যাক হোলের জোরালো অভিকর্ষের টানে সেই গ্যাসের একটা বড় অংশ ও মহাজাগতিক ধুলোবালি এসে পড়ছে ব্ল্যাক হোলটির পাঁচিল- ‘ইভেন্ট হরাইজনে’র বাইরের অংশ ‘অ্যাক্রিশন ডিস্কে’। আর তখনই জন্ম হচ্ছে দৃশ্যমান আলোর।’’
আলো-সহ সব কিছু ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেয় বলেই বিজ্ঞানীরা যাদের নাম দিয়েছেন ব্ল্যাক হোল, সেই কৃষ্ণ গহ্বর যে দৃশ্যমান আলোও উগরে দিতে পারে, এই প্রথম হাতে-কলমে তা প্রমাণিত হল।