Universal Antiviral

যে কোনও ভাইরাসবাহিত রোগ ঠেকাবে একটাই প্রতিষেধক? শীঘ্রই ‘বিশল্যকরণী’র সন্ধান মিলতে পারে, দাবি গবেষকদের

গবেষকদের দাবি, তাঁরা এমন একটি প্রতিষেধক তৈরির পথে এগোচ্ছেন, যা যে কোনও ভাইরাসবাহিত রোগ ঠেকাতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই ইঁদুরের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা। তাতে সন্তোষজনক ফল মিলেছে বলেও দাবি গবেষকদের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৪
Share:

শরীরের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না! সব ভাইরাসবাহিত রোগের ‘একটাই প্রতিষেধক’। গ্রাফিক আনন্দবাজার ডট কম।

অবশেষে কি মিলল ‘বিশল্যকরণী’র সন্ধান? কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের দাবি ঘিরে এই প্রশ্নেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

কোভিড বিশ্ব জুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়েছিল। অতিমারি কালের সেই মৃত্যুমিছিল দেখে কার্যত থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরাও। প্রাথমিক পর্বে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ঠেকানোর উপায় ছিল না তাঁদের কাছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আবার এ রকম কোনও ভাইরাসবাহিত রোগ হানা দিলে কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সম্ভবত তার উত্তর খুঁজে পেলেন কলম্বিয়ার গবেষকেরা।

গবেষকদের দাবি, তাঁরা এমন একটি প্রতিষেধক তৈরির পথে এগোচ্ছেন, যা যে কোনও ভাইরাসবাহিত রোগ ঠেকাতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই ইঁদুরের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা। তাতে সন্তোষজনক ফল মিলেছে বলেও দাবি গবেষকদের।

Advertisement

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট (রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ) ডুসান বগুনোভিচ জানান, বছর ১৫ আগে তিনি এমন এক জনের খোঁজ পেয়েছিলেন, যাঁর শরীরে প্রায় সব ধরনের ভাইরাসবাহিত রোগ মোকাবিলার ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ, চিকেনপক্স বা ‘ফ্লু’, যা-ই হোক না কেন, কিছুতেই অসুস্থ হয়ে প়ড়ছেন না ওই ব্যক্তি।

স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন ডুসান! এটা কী করে সম্ভব? উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, জিনের ঘন ঘন বদলের (মিউটেশন) কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মূলত বদল ঘটেছে ‘আইএসজি১৫’ নামক জিনের, যার কাজ আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। ডুসান জানান, ঘন ঘন মিউটেশনের কারণে ‘আইএসজি১৫’ জিনের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল ওই ব্যক্তির শরীরে। পরিবর্তে তাঁর শরীরে তৈরি হতে শুরু করে ৬০টিরও বেশি প্রোটিন। গবেষকের মত, এই সকল প্রোটিনের কারণেই ভাইরাস হামলার আশঙ্কায় সব সময় ‘সজাগ’ থাকে ওই ব্যক্তির শরীর।

গবেষকেরা জানান, রোগ প্রতিরোধের এই ‘অলৌকিক’ ক্ষমতা বিরল। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। হয়তো গোটা বিশ্বে হাতেগোনা কয়েক জনই এমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী। তবে এর খারাপ দিকও রয়েছে। জিনের হাবভাব এত বার বদলানোর কারণে তাঁদের শরীরে সর্ব ক্ষণ ক্ষিণ প্রদাহ চলতেই থাকে, যা একেবারেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাজ্জব ব্যাপার হল, আসলে সেই ক্ষিণ প্রদাহই তাঁদের যে কোনও ‘ফ্লু’ থেকে বাঁচিয়ে দেয়!

এ কথা জানতে পারার পরেই সব ভাইরাসঘটিত রোগের ‘একটাই প্রতিষেধক’ তৈরির ভাবনা মাথায় আসে ডুসানের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভাবনা ছিল, শরীরে সব সময় চলতে থাকা ওই প্রদাহ এড়িয়ে যদি শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা আমরা তৈরি করতে পারি, তা হলেই এমন প্রতিষেধক পাওয়া যাবে।’’

সেইমতো গবেষণাও শুরু করেন ডুসান এবং তাঁর দল। তিনি জানান, ‘আইএসজি১৫’ জিনের ঘাটতির ফলে শরীরে যে সব প্রোটিন তৈরি হয়, তার মধ্যে ১০ ধরনের প্রোটিন বেছে নেওয়া হয়েছিল। তার পর ‘এমআরএনএ’ পদ্ধতিতে প্রতিষেধক তৈরি করা হয়। ঠিক যে কায়দায় করোনার প্রতিষেধক তৈরি হয়েছিল। এই প্রযুক্তিতে শরীরের কোষগুলিকে আরও ‘সজাগ’ হতে বলা হয়। কোষগুলিকে বলা হয় ওই ১০ ধরনের প্রোটিন আরও বেশি করে তৈরি করতে।

ডুসান জানান, ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, তাদের শরীরে সামান্য হলেও ওই ১০ ধরনের প্রোটিন তৈরি হচ্ছে। এই গবেষণার ফলই সম্প্রতি ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশন মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশ করেছেন কলম্বিয়ার গবেষকেরা। তাতে দেখা গিয়েছে, যে ইঁদুরগুলিকে ওই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিডের মতো ভাইরাসকে অনায়াসেই ঠেকিয়ে দিচ্ছে।

তবে সমস্যা হল, এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন-চার দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। মানুষের শরীরও এই প্রতিষেধককে কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। গবেষকদের বক্তব্য, এই প্রতিষেধকের কারণে শরীরে সামান্য প্রদাহ তৈরি হবেই। কিন্তু তা যাতে কোনও ভাবেই অতিরিক্ত না হয়, আপাতত সেটাই দেখার। তার জন্য আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।

ডুসান বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়, ভাইরাসের চরিত্র না-জানা থাকলেও এই প্রযুক্তি কাজ করবে। আমরা কোনও প্রতিষেধকের খোঁজ করার লক্ষ্যে ওই বিরল রোগীদের পরীক্ষা করিনি। কিন্তু গবেষণা করতে করতে এই প্রযুক্তির কথা মাথায় আসে। তখনই মনে হয়েছিল, এ রকম প্রতিষেধক সত্যিই তৈরি করা সম্ভব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement