Dinosaurs Fossil

শিকারি, তবে ভিন্ন প্রজাতির! ডাইনোসর নিয়ে নতুন গবেষণা প্রশ্ন তুলল হিংস্র টি-রেক্সদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণায়

টি-রেক্সের প্রথম জীবাশ্ম মেলে ১৯০২ সালে। তারও চার দশক পরে আরও এক জীবাশ্মের খোঁজ মেলে, যার গড়ন টি-রেক্সের তুলনায় কিছুটা ছোট। অনেকেই মনে করতেন, সেটি ভিন্ন প্রজাতির। আবার অনেকে মনে করেন, সেটি অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সেরই জীবাশ্ম।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮
Share:

টির‌্যাইনোসরাস-রেক্স। হিংস্র ডাইনোসরদের মধ্যে অন্যতম। —প্রতীকী চিত্র।

‘টির‌্যাইনোসরাস-রেক্স’, সংক্ষেপে টি-রেক্স। আজ থেকে সাড়ে ছ’লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত যত ডাইনোসর ঘুরে বেড়াত পৃথিবীতে, তাদের মধ্যে অন্যতম হিংস্র প্রজাতি। স্টিফেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমার দৌলতে আরও বেশি পরিচিতি পেয়েছে এরা। সেই টি-রেক্সদের নিয়ে গত কয়েক বছরে যা কিছু গবেষণা হয়েছে— সেই সব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল সাম্প্রতিক এক গবেষণা।

Advertisement

প্রায় দু’দশক আগে, ২০০৬ সালে আমেরিকার মন্টানায় পাওয়া গিয়েছিল একটি জীবাশ্ম। জোড়া ডাইনোসরের জীবাশ্ম। দু’টিই ভিন্ন প্রজাতির। জীবাশ্মবিদেরা এর নাম রেখেছেন ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’। অনুমান করা হয়, দু’টি ডাইনোসর লড়াই করতে করতে একই জায়গায় মারা গিয়েছে। সেই থেকেই জীবাশ্মের নামকরণ। যদিও লড়াই করতে করতে মারা যাওয়ার কোনও প্রমাণ্য তথ্য এখনও মেলেনি।

ওই দু’টি জীবাশ্মের মধ্যে একটি ‘ট্রাইসেরাপটস হরাইডাস’-এর। তিন শৃঙ্গবিশিষ্ট তৃণভোজী ডাইনোসর। অপরটি এত দিন মনে করা হত একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সের জীবাশ্ম। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেল, সেটি আদৌই টি-রেক্সের জীবাশ্মই নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির এক ডাইনোসরের জীবাশ্ম। এমনকি সেটি কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ডাইনোসরও নয়, বরং পূর্ণবয়স্কই। গবেষকদের দাবি, সেটি ‘ন্যানোটাইর‌্যানাস ল্যানসেনসিস’-এর জীবাশ্ম হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

Advertisement

ন্যানোটাইর‌্যানাস আদৌ ডাইনোসরের কোনও পৃথক প্রজাতি কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক চলেছে। দ্বিমত রয়েছে জীবাশ্মবিদদের মধ্যেও। ১৯০২ সালে মন্টানা থেকে টি-রেক্সের আংশিক কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। সেটিই ছিল এই হিংস্র ডাইনোসরের একদা অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ। প্রায় চার দশক পরে, ১৯৪২ সালে মন্টানাতেই পাওয়া যায় ন্যানোটাইর‌্যানাসের মাথার খুলি। জীবাশ্মবিদদের একাংশের বক্তব্য ছিল, এটি পৃথক প্রজাতির ডাইনোসর। যাদের আকার টি-রেক্সের তুলনায় কিছুটা ছোট। তবে একটি বড় অংশ মনে করতেন, ন্যনোটাইর‌্যানাস পৃথক কোনও প্রজাতি নয়, সেগুলি আসলে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্স। সাম্প্রতিক এক গবেষণা, দীর্ঘ দিনের ওই বিতর্কে ইতি টানল বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ‘নেচার’ জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণা চলাকালীন ২০০টিরও বেশি টি-রেক্সের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়। ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’ থেকে পাওয়া নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। সব নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা নিশ্চিত, ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’ জীবাশ্মে যেটিকে টি-রেক্সের বলে মনে করা হত, মারা যাওয়ার সময় সেটির বয়স ছিল প্রায় ২০ বছর (টির‌্যাইনোসরাস প্রজাতির ডাইনোসরের জীবনচক্র হয় ৩০ বছরের)। ফলে সেটিকে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ডাইনোসর বলে বিবেচনা করা যায় না।

জীবাশ্ম থেকে এদের শারীরিক গড়নের কিছুটা অনুমান পাওয়া যায়। গবেষকদের ধারণা, টি-রেক্স এবং ন্যানোটাইর‌্যানাস উভয়েই হিংস্র প্রকৃতির ছিল এবং শিকার করে খেত। এই দুই প্রজাতি দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও অনেক পার্থক্যও রয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক টি-রেক্স লম্বায় ৪২ ফুট পর্যন্ত হত। এদের পা তুলনামূলক মোটা এবং বড়। অন্য দিকে পূর্ণবয়স্ক ন্যানোটাইর‌্যানাস লম্বায় ১৮ ফুট পর্যন্ত হত। এরা টি-রেক্সের তুলনায় চটপটে এবং দ্রুত চলাফেরা করতে পারত। শিকার ধরার জন্য এদের এরা মূলত নিজেদের হাত ব্যবহার করত। এদের হাত ছিল তুলনায় কিছুটা বড় এবং মজবুত। টি-রেক্সের হাতের হাড়গুলি ছিল তুলনায় কিছুটা ছোট। এরা মূলত কামড়ে শিকার ধরত।

সাম্প্রতিক গবেষণায় ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’-এর ওই নমুনার সঙ্গে টি-রেক্সের জীবাশ্মের অন্য নমুনাগুলিও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তাতে হাতের হাড়ের গড়নের ফারাক স্পষ্ট ধরা পড়েছে। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য তথা নিউ ইয়র্কের স্টনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জেম্‌স নেপোলির মতে, ওই জীবাশ্মটি যে প্রাণীর, সেটি আকারে ছোট হলেও তার উপরের অঙ্গগুলি ছিল তুলনায় বড়। বিশেষ করে তার হাতগুলি। কিন্তু টি-রেক্সের হাত ছোট হয়। তা ছাড়া, কোনও প্রাণী পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে তার হাড় ছোট হয়ে যাবে— এমনটাও সম্ভব নয়। তাই ওই জীবাশ্মটি কোনও ভাবেই টি-রেক্সের হতে পারে না।

আমেরিকার ‘নর্থ ক্যারোলিনা মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সেস’-এর জীবাশ্মবিদ্যা বিভাগের প্রধান লিন্ডসে জ়ানোও এই গবেষকদলের অন্যতম সদস্য। তিনি নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনাও করেন। জ়ানোর মতে, নতুন এই খোঁজ বিতর্কে ‘ইতি টানা’র পাশাপাশি গত কয়েক দশকে টি-রেক্সকে নিয়ে গবেষণাকেও ওলটপালট করে দিল। জীবাশ্মবিদদের অনেকেই মনে করছেন, জ়ানোর ওই উদ্বেগ অযৌক্তিক নয়। কারণ, গত কয়েক দশক ধরে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যানোটাইর‌্যানাসের জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে টি-রেক্সকে উপর গবেষণা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন এই খোঁজের পরে অতীতের গবেষণাগুলিকে পুনরায় খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ্যে আসার পরে একই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট। তিনি এই গবেষকদলের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে টির‌্যাইনোসরাস নিয়ে তিনিও গবেষণা করছেন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে তিনি জানান, ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’-এর জীবাশ্মে যেটিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্স বলে মনে করা হত, তিনি সেটির উপর ভিত্তি করেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন। এখন তাঁরও মনে সংশয় জেগেছে, ওই নমুনার ভিত্তিতে গবেষণায় যে ফল মিলেছে, তা আংশিক ভাবে হলেও ভুল ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত যতগুলি এমন ছোট মাপের টি-রেক্সের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, তার সবগুলিই যে ন্যানোটাইর‌্যানাস— এমনটা মানতে রাজি নন তিনি। এ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সের থেকে ন্যানোটাইর‌্যানাসকে সব ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement