এই সেই উড়ন্ত রোবটিক অ্যাম্বুল্যান্স।
এ বার ত্রাতার ভূমিকা নেবে একটি ‘উড়ন্ত চাকি’!
মানুষ যেখানে বিপন্ন, অসহায়, প্রতিটি মূহুর্তে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে চলেছেন হৃদযন্ত্রের ‘লাব-ডুব’টাকে সচল রাখার জন্য, সেখানে তাদের উদ্ধার করা বা তাদের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে এই ‘উড়ন্ত চাকি’!
রণক্ষেত্র অথবা ভয়াবহ ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, সুনামি, মেগা-সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেখানে হেলিকপ্টার হয়ে উঠতে পারে না ‘মুশকিল আসানে’র অন্যতম প্রধান হাতিয়ার, সেখানেই ‘দেবতার আশীর্বাদে’র মতো এ বার আকাশ থেকে ‘ঝরে পড়বে’ ওই ‘উড়ন্ত চাকি’। নেমে আসবে বিপন্ন, অসহায়, যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সৈনিকের কাছে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব হারানো সব খোয়ানো মানুষের পাশে।
এই ‘উড়ন্ত চাকি’ অবশ্য আমাদের সেই বহুচর্চিত আন-আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) নয়। যা নিয়ে বিভিন্ন রসালো গল্প ছড়িয়েছে বিশ্বের বহু জায়গায়, অনেক সময়। এখনও ছড়ায়, বিক্ষিপ্ত ভাবে।
‘উড়ন্ত চাকি’র সফল উড়ান: দেখুন ভিডিও।
এই ‘উড়ন্ত চাকি’ আদতে একটি স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেড) উড়ন্ত (ফ্লাইং) রোবটিক অ্যাম্বুল্যান্স (এএফআরএ বা ‘আফরা’)। চালাবে সর্বাধুনিক একটি রোবট। তা কোনও মানুষ চালাবেন না। এই ‘আফরা’ বিপন্ন, অসহায় মানুষের অনুসন্ধান করবে আর তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেবে। আর এই কাজটা হেলিকপ্টারের চেয়েও অনেক বেশি দ্রুত গতিতে আর নিখুঁত ভাবে করবে এই ‘আফরা’। এই ‘উড়ন্ত চাকি’টি বানিয়েছে একটি ইজরায়েলি সংস্থা- ‘আরবান অ্যারোনটিক্স’।
ওই ইজরায়েলি সংস্থার ‘আফরা’ অপারেশন ম্যানেজার, রোবট প্রযুক্তিবিদ অনাবাসী ভারতীয় মঞ্জুলা থাপার বলছেন, ‘‘গত পয়লা ডিসেম্বর ‘আফরা’র প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ানটি হয়েছে তেল আভিভে। আমরা এই ফ্লাইং রোবটিক অ্যাম্বুল্যান্সটির নাম দিয়েছি- ‘করমোর্যান্ট’। আগামী দিনে এটিতে কোনও পাইলটও চাপতে পারবেন। নিয়ে যাওয়া যাবে একটু ভারী যন্ত্রপাতি। রণক্ষেত্রে অসুস্থ সৈনিক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত মানুষের সার্জারির প্রয়োজনে। আগে এর নাম দেওয়া হয়েছিল- ‘এয়ারমিউল’। সেটি বদলে এখন করা হয়েছে ‘করমোর্যান্ট’। আগের ‘এয়ারমিউল’ মডেলটিতে পাইলট চাপার কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। নতুন ‘করমোর্যান্ট’ মডেলটিতে সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’’
অ্যাডভান্সড ‘করমোর্যান্ট’-এর উড়ান: দেখুন ভিডিও।
তবে সুবিধা আর অসুবিধা, দু’টোই আছে এই ‘উড়ন্ত চাকি’র। সেগুলি কী কী?
মঞ্জুলার কথায়, ‘‘রণক্ষেত্রে বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাস্থল খুব অসমতল জায়গা হলে সেখানে এই ‘উড়ন্ত চাকি’র নামার ক্ষেত্রে এখনও কিছু প্রযুক্তিগত বাধা রয়েছে। সেগুলি আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আবার সুবিধাও রয়েছে কিছু। যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রে হেলিকপ্টার কিছুতেই শত্রুপক্ষের নজর এড়াতে পারে না। কিন্তু শত্রুর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে এই ‘উড়ন্ত চাকি’র সত্যি-সত্যিই জুড়ি মেলা ভার। রোবট চালাবে বলে আকাশে এটা তেমন ‘বাম্প’ও করবে না। আকাশে ওড়ার সময় কোনও ভুলচুক হলে আপনাআপনিই তা সারিয়ে নিতে পারবে ‘করমোর্যান্ট’। কোনও গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের দরকারই হবে না। কোনও জায়গায় নামবে বলে ঠিক করে অনেকটা নীচে নেমে এসে যদি দেখে বাধা-বিপত্তি আছে, সঙ্গে সঙ্গে থেমে গিয়ে নিরাপদ ‘ল্যান্ডিং’-এর জন্য নতুন ‘রুট’ আর নতুন ‘স্পট’ বেছে নিতে পারবে এই ‘করমোর্যান্ট’। তার ভেতরে রয়েছে লেজার অলটিমেটারস, রেডার ও সেন্সরস। শুধু তাই নয়, আকাশে উড়তে উড়তে সেন্সরগুলি যদি হঠাৎ সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ করে দেয়, তা হলেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে নিজেকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার, আকাশে ভেসে থাকার ক্ষমতা রয়েছে এই ‘করমোর্যান্ট’-এর।’’
আরও পড়ুন- স্টিফেন হকিং অসুস্থ, ভর্তি হলেন রোমের গেমেল্লি হাসপাতালে
অশনি সঙ্কেত! সময়ের আগেই ‘ইলেক্ট্রিক মেঘে’ ছেয়ে গিয়েছে অ্যান্টাকর্টিকার আকাশ