ফেসবুকের ‘ফ্রি বেসিক’-এর সমর্থনে ধ্বংস করছেন না তো নেট নিউট্রালিটি?

বেশ চুপিসারে কিন্তু এ দেশে নিজেদের ইন্টারনেট ডট অর্গ সার্ভিস চালু করে দিল ফেসবুক। তবে একটু নতুন কায়দায়। শুক্রবার সকাল থেকেই ফেসবুকে লগ ইন করলে নয়া এক অ্যাপ চোখে পড়ছে। ফেসবুকের তরফে অনুরোধ করা হচ্ছে তাদের ‘ফ্রি বেসিক’ সার্ভিসের জন্য টেলিকম অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (ট্রাই)-এর কাছে করা পিটিশনে যেন সই করেন ইউজাররা। সই করলে নিজে থেকেই ই মেল চলে যাবে ট্রাই এর দফতরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:০৩
Share:

বেশ চুপিসারে কিন্তু এ দেশে নিজেদের ইন্টারনেট ডট অর্গ সার্ভিস চালু করে দিল ফেসবুক। তবে একটু নতুন কায়দায়। শুক্রবার সকাল থেকেই ফেসবুকে লগ ইন করলে নয়া এক অ্যাপ চোখে পড়ছে। ফেসবুকের তরফে অনুরোধ করা হচ্ছে তাদের ‘ফ্রি বেসিক’ সার্ভিসের জন্য টেলিকম অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (ট্রাই)-এর কাছে করা পিটিশনে যেন সই করেন ইউজাররা। সই করলে নিজে থেকেই ই মেল চলে যাবে ট্রাই এর দফতরে।

Advertisement

‘ফ্রি’ শব্দটা দেখে ইতিমধ্যে অনেকেই সইটাও করে ফেলেছেন। ভাবছেন, ফেসবুক বুঝি সত্যি সত্যিই এ বার ভারতে নেট নিউট্রালিটির স্বপক্ষে এগিয়ে এল। কিন্তু সত্যিই কি এই ‘ফ্রি বেসিক’-এর সঙ্গে নেট নিউট্রালিটির আদৌ কেনও সম্পর্ক আছে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ‘না’। তাঁদের মতে জুকারবার্গ আসলে অনেকটা পুরনো মদ নতুন বোতলে চালানোর চেষ্টা করছেন। ‘ফ্রি বেসিক’-এর মোড়কে আসলে লুকিয়ে বসে আছে ইন্টার নেট ডট অর্গ। বেশ কিছু দিন ধরেই নেট নিউট্রালিটির স্বপক্ষে সরব এ দেশের টেকস্যাভি মানুষ বিরোধিতা কতরছে ইন্টারনেট ডট অর্গের। ফেসবুকের দাবি ছিল তাদের ইন্টারনেট ডট অর্গ নাকি এই নেট নিউট্রালিটির পথই প্রশস্থ করবে। কিন্তু কতটা সত্যি সেই দাবি? একবার বুঝে নেওয়া যাক...

ইন্টারনেট ডট অর্গটা আসলে কী? উন্নয়শীল কিছু দেশে ফেসবুক কিছু টেলিকম প্রোভাইডারের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে। ভারতে তাদের সঙ্গী রিলায়েন্স কম্যুনিকেশন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বন্ধন তৈরি হয়েছে। কী হবে এর ফলে? গ্রাহকরা বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিউজ ওয়েবসাইটে ফ্রি অ্যাকসেস পাবেন। পাওয়া যাবে কিছু শিক্ষামূলক সাইট (যেমন উইকিপেডিয়া)। এ ছাড়া থাকবে ফেসবুক, ব্লিং, টুইটার-এর মত কিছু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। থাকবে রিলায়েন্স অ্যাস্ট্রোলজি। আর বাকি সাইটগুলো? না, সে বিষয়ে জুকারবার্গ অবশ্য বিস্তারিত কিছুই জানাননি।

Advertisement

জুকারবার্গের গাল ভরা প্রতিশ্রুতির মধ্যেই আসল রহস্যটা বোধহয় লুকিয়ে আছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধার খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের একটি গালভরা নামও আছে 'জিরো রেটিং স্কিম'। ফেসবুকের দাবি এ ভাবেই নাকি এদেশের যে মানুষরা ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাবে এই পরিষেবা।

আরও পড়ুন-জেনে নিন নেট নিউট্রালিটির সঙ্গে ফেসবুকের বিরোধের কারণ

ইন্টারনেট ডট অর্গ বা ফ্রি বেসিকের সমস্যাটা তা হলে কী? নেট নিউট্রলিটি অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, এক কথায় জুকারবার্গের ইন্টারনেট ডট অর্গ ধ্বংস করছে নেট নিরপেক্ষতা বা নেট নিউট্রালিটি। পূর্বনির্ধারিত কিছু ওয়েবসাইট ছাড়া ইউজাররা আন্তর্জালের একটা বড় অংশ থেকেই বঞ্চিত থেকে যাবেন। কোন সাইট ব্যবহার করা হবে কোনটা নয়, সেটা আদতে ঠিক হবে পেসবুকের হাত ধরেই। ফেসবুক হয়ে উঠবে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের নিয়ন্ত্রক। ফ্রি বেসিক বা ইন্টারনেট ডট অর্গ যাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেছে সেই রিলায়েন্সের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বাতুলতা। প্রাথমিক ভাবে 'বিনামূল্যে পরিষেবার নামে তারা মানুষকে আস্তে আস্তে নিজেদের উপর নির্ভরশীল করে তুলতে চাইবে। বাড়বে ফেসবুক ইউজারের সংখ্যাও। পাল্লা দিয়ে বাড়বে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সংখ্যাও। ফলে আখরে কোষাগার ভরবে কার? উত্তরটা বড়ই প্রতীয়মান।

যারা ফ্রি বেসিক-এর হাতছানিতে উত্ফুল্ল, তারা একবার ভেবে দেখুন। আপনার ইন্টারনেট পরিষেবা সত্যিই নিউট্রাল হচ্ছে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন