ছবি সংগৃহীত।
আর কাউকে ‘ছাগল’ বলে ভর্ৎসনা করবেন না! ‘দূর ছাই’ করবেন না!
ছাগলরা যথেষ্টই অনুভূতিপ্রবণ। মানুষের প্রতি তারা যথেষ্টই সংবেদনশীল। কুকুর, বিড়াল, ঘোড়ার মতো ছাগলও আমাদের সুখী দেখতে ভালবাসে! মানুষের হাসিতে উজ্জ্বল মুখ, আশায় দীপ্যমান মানুষ বড়ই প্রিয় ছাগলদেরও। আমাদের রাগী মুখ, বিষাদে ডুবে যাওয়া মুখ, আমাদের যন্ত্রণার ছবি একেবারেই না-পসন্দ ছাগলদের।
ব্রিটেনে হালের একটি গবেষণা এই সুখবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’-এ।
কী দেখেছেন গবেষকরা?
গবেষকরা দীর্ঘ দিন ধরে ছাগলের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, কুকুর, বিড়াল, ঘোড়ার মতো শুধু গৃহপালিত পশুরাই নয়, খামারের পশু ছাগলও মানুষের শরীরের বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারে। বুঝতে পারে আমাদের সুখ, দুঃখ, জ্বালা, যন্ত্রণা, আনন্দ, আতিশয্য, বিষাদের অনুভূতিগুলিকে। আর ওই সব অনুভূতিতে আমরা কী ভাবে সাড়া দিই, টপাটপ সেটা বুঝে ফেলতেও কোনও অসুবিধা হয় না ছাগলদের।
কী ভাবে আমাদের হাসি মুখের ছবির দিকে ছোটে ছাগলরা, দেখুন ভিডিয়ো
আমরা কষ্টে থাকি, পছন্দ নয় ছাগলদের
এরই সঙ্গে গবেষকরা এই প্রথম লক্ষ্য করেছেন, আমাদের আদৌ বিষাদগ্রস্ত দেখতে চায় না ছাগলরা। তারা চায়, মানুষ ভাল থাকুক। আমরা সুখে থাকলেই ছাগলদের ভাল লাগে। আমাদের সুখী মুখ দেখলে এতটাই খুশি হয় ছাগলরা যে, কিছুতেই দূরে সরে যেতে চায় না। বরং আমাদের সুখী থাকতে দেখলে ছাগলরা যে খুশি হয়, নিজেদের সেই সুখ তারা শেয়ার করতে চায় আমাদের সঙ্গে। ঘেঁষে আসে কাছে, লেপ্টে থাকতে চায় গায়ে, পায়ে।
কী ভাবে ছাগলের এই মতিগতি বুঝতে পারা গেল?
ব্রিটেনের কেন্টে বাটারক্যাপ্স অভয়ারণ্যে ছাগলদের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন রোহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান ম্যাকএল্লিগটের নেতৃত্বে এক গবেষকদল। গবেষণার সময় ম্যাকএল্লিগট ছিলেন লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন- ছাগল পালনেই লক্ষ্মীলাভ মায়া, রশিদাদের
দেখুন গ্যালারি- রক ক্লাইম্বারদেরও হার মানায় এই ছাগল!
ম্যাকএল্লিগট জানিয়েছেন, তাঁরা অনেকগুলি ছাগল নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাদের সামনে রাখা হয়েছিল মানুষের মুখের দু’টি ছবি। একটি রাগি মুখের, অন্য মুখটি হাসিতে উজ্জ্বল। তাঁরা দেখেছেন, মানুষের রাগি মুখের ছবির দিকে পলকই ফেলতে চায় না ছাগলরা। তারা ছুটে যায় শুধুই মানুষের হাসি মুখের ছবির দিকে। আর চট করে আমাদের সেই হাসি মুখের ছবি তারা ছেড়ে যেতেও চায় না। টেনে আনলেও বার বার আমাদের হাসি মুখের ছবির দিকেই ছুটে যেতে চায় ছাগলরা। সেই ছবির গায়ে লেপ্টে থাকতে চায়। তার আশপাশে ঘুরঘুর করে। আমাদের সেই হাসি মুখের ছবির সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট (ভাব বিনিময়) করতে চায়।
ডান দিকে রাখা মানুষের হাসি মুখের ছবির দিকেই টান বেশি ছাগলদের
ম্যাকএল্লিগট এও জানিয়েছেন, আমাদের হাসি মুখের ছবি যখন ছাগলের ডান দিকে রাখা হয়, তখনই তার দিকে বেশি দ্রুত এগিয়ে যায় ছাগলরা। আমাদের হাসি মুখের ছবিটা ছাগলদের বাঁ দিকে রাখলে তার দিকে ততটা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে না তারা।
এটা দেখে গবেষকদের ধারণা হয়েছে, ছাগলের মস্তিষ্কের বাঁ দিকে রয়েছে তাদের ভাল লাগার অনুভূতিগুলি। যেহেতু মস্তিষ্কের বাঁ দিকের অংশ, শরীরের ডান দিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই আমাদের হাসি মুখের ছবি দেখে সুখী হলে ছাগলরা চট করে এগিয়ে যায় ডান দিকে রাখা ছবিটার দিকে। তবে সেই ডান দিকেই যদি রাখা হয় বিষাদগ্রস্ত বা রাগী মানুষের ছবি, তা হলে তার দিকে পা-ই বাড়াবে না ছাগলরা।
গবেষকদের বক্তব্য, আগামী দিনে হয়তো ছাগল ও মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়ের পথও খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।