ছবি: সংগৃহীত।
২০২৫ সালের জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এ গিয়েছেন ২০টি দেশের ২৮০ জন মহাকাশচারী। তাঁরা সেখানে থেকে গবেষণা করেছেন। তার পরে ফিরে এসেছেন। অনেকের মনেই প্রশ্ন, মহাকাশে গিয়ে মহাকাশচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করা হয়? মহাকাশচারীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সে জন্য আইএসএসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও রয়েছে।
আইএসএসে হাসপাতাল নেই। শল্যচিকিৎসকও থাকেন না সেখানে। তবে দাঁতে ব্যথা থেকে চুলকানি বা প্রাণঘাতী রোগেরও চিকিৎসা হয় আইএসএসে। আর তা করেন মহাকাশচারীদের এক জনই। সব মহাকাশ অভিযানে চিকিৎসক থাকেন না। তবে এক জন মহাকাশচারীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তিনি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে পারেন। ওই মহাকাশচারীকে বলা হয় ‘ক্রিউ মেডিক্যাল অফিসার’ (সিএমও)। তিনি অস্ত্রোপচার করতে না পারলেও প্রাথমিক চিকিৎসায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে থাকে মেডিক্যাল কিট।
কী থাকে সেই মেডিক্যাল কিটে?
পেনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ, অ্যালার্জির ওষুধ।
ক্ষত ড্রেসিংয়ের সামগ্রী।
ছোট আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র।
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে সিপিআর (কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়ার যন্ত্র।
অটোমেটেড এক্সটারনাল ডিফাইব্রিলেটরস (হৃদ্স্পন্দন ধরা পড়ে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে বিদ্যুতের শক দিতে সক্ষম)
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, মহাকাশে যে সিপিআর পাঠানো হয়, তা বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি। শূন্য মাধ্যাকর্ষণের মধ্যেও রোগীর বুকে ওই যন্ত্র চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
আইএসএসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন সিএমও। সেই সিএমওকে ভিডিয়ো এবং অডিয়ো কমিউনিকেশনের (রিয়েল টাইম) মাধ্যমে হিউস্টনে বসে সহায়তা করেন নাসার মিশন কন্ট্রোলের চিকিৎসকেরা। তবে তাতেও কাজ না হলে অসুস্থ মহাকাশচারীকে ফিরিয়ে আনা হয় আইএসএস থেকে। সেখানে সব সময়েই অন্তত একটি স্পেস এক্সের ড্রাগন ক্যাপসুল থাকে। তাতে চেপেই পৃথিবীতে ফেরার ব্যবস্থা করা হয় অসুস্থ হয়ে পড়া মহাকাশচারীর। পৃথিবীতে ফেরার পরে তাঁকে হিউস্টনে নাসার জনসন মহাকাশ কেন্দ্রের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে আর কোনও উপায় না থাকলেই মহাকাশচারীকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়। কারণ, বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রেই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মধ্যে প্রবেশের সময় কিছু শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
২০ বছর ধরে আইএসএস সক্রিয় রয়েছে। এখন পর্যন্ত অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে কাউকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে অতীতে কখনও আইএসএসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মহাকাশচারীরা। ২০১৩ সালে এক মহাকাশচারীর আইএসএসে গিয়ে কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছিল। ওষুধ দিয়ে তাঁর যন্ত্রণা কমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার পরে নির্ধারিত সময়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২০২০ সালে এক রুশ মহাকাশচারীর সংক্রমণ হয়েছিল। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তার নিরাময় করা হয়।
মহাকাশে কিছু শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা থেকে যায়—
হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
হৃদ্স্পন্দনে সমস্যা।
মুখ, দেহের উপরের অংশ ঘেমে যায়।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা (স্পেসলাইট-অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো-অকিউলার সিনড্রোম)।
ঘুম না হওয়া, মানসিক চাপ।
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে।