চন্দ্র অভিযানের জন্য সবচেয়ে ভারী, ৪০ তলা উঁচু রকেট বানাচ্ছে ইসরো। —ফাইল চিত্র।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো নতুন একটি রকেট তৈরি করছে, যার উচ্চতা হবে ৪০ তলা উঁচু বিল্ডিংয়ের সমান! এখনও পর্যন্ত ভারতের হাতে যে সমস্ত মহাকাশযান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভারী এবং শক্তিশালী হল এলভিএম-৩, যা চন্দ্র অভিযানে ব্যবহার করা হয়। ২০২৩ সালে চন্দ্রযান ৩-কে চাঁদে পৌঁছে দিয়েছিল এলএমভি-৩। ইসরোর নতুন রকেটের নাম দেওয়া হয়েছে এলএমএলভি (লুনার মডিউল লঞ্চ ভেহিক্ল)। এটিও মূলত চন্দ্র অভিযানে ব্যবহার করা হবে। এই রকেট তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে তা হবে ভারতের সবচেয়ে ভারী রকেট। ওজন হতে পারে ১৮ থেকে ২০ টন।
ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন জানিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে এলএমএলভি তৈরি হয়ে যাবে। ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। সেই লক্ষ্য সফল করতে পারে নতুন রকেট।
‘গগনযান’ প্রকল্পের মাধ্যমে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। সেই প্রকল্পের প্রথম ধাপ চলতি বছরের শেষেই সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রথম উৎক্ষেপণে অবশ্য কোনও নভশ্চর থাকবেন না। ওই অভিযানে ইসরো ব্যবহার করবে এলভিএম-৩ রকেট। এর আগে ইসরো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁরা নেক্সট জেনারেশন লঞ্চ ভেহিক্ল (এনজিএলভি) তৈরি করছেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে ভারতীয় স্টেশন তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ইসরো, যার নাম হবে ‘ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন’ (বিএএস)। কথা ছিল, এনজিএলভি-র মাধ্যমে মহাকাশ স্টেশনে মডিউল বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু নারায়ণন জানিয়েছেন, আর এনজিএলভি তৈরি করা হচ্ছে না। যা তৈরি হবে, তা এনজিএলভি-র চেয়ে আরও শক্তিশালী।
ইসরো প্রধানের কথায়, ‘‘এনজিএলভি-র চেয়ে অনেক ভারী পেলোড বহনের ক্ষমতা থাকবে নতুন রকেট এলএমএলভি-র। এনজিএলভি লো-আর্থ কক্ষপথে ৩০ টনের বেশি ভার বহন করতে পারে না। নতুন রকেট লো-আর্থ কক্ষপথে ৮০ টনের বেশি ভার পৌঁছে দিতে পারবে।
লো-আর্থ কক্ষপথ কী? সাধারণত পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ২০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত কক্ষপথকে লো-আর্থ কক্ষপথ বলা হয়। কিন্তু চাঁদে পৌঁছোনোর জন্য আরও দূরত্ব অতিক্রম করা প্রয়োজন। চাঁদ পৃথিবীর থেকে চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। নতুন রকেট ওই দূরত্বে নিয়ে যেতে পারবে সর্বোচ্চ ২৭ টনের পেলোড।
সাধারণত যে সমস্ত মহাকাশযান নভশ্চরদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যায়, সেগুলি ছয় থেকে আট টন ওজনের হয়। কিন্তু এই ধরনের যান চাঁদে যাওয়ার উপযোগী নয়। চাঁদে মানুষ পাঠাতে হলে ১৮ থেকে ২০ টনের মহাকাশযান প্রয়োজন। ইসরো সেটাই তৈরি করছে। ১৯৭২ সালের পর চাঁদে আর মানুষের পা পড়েনি।