চন্দ্রযান ২: পালকের মতো চাঁদের মাটি স্পর্শ করার অপেক্ষায় ইসরো

ইসরো জানিয়েছে, প্রজ্ঞান নামে ওই ‘রোভারে’ দু’টি যন্ত্র রয়েছে। ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’ নামে যন্ত্রটি অবতরণস্থলের কাছে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী উপাদান রয়েছে তা দেখবে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

এগোচ্ছে বিক্রম। ছবি সৌজন্য: টুইটার

পৃথিবীর খনিজ সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ বার চাঁদের মাটি খুঁড়ে খনিজ উত্তোলন হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। আপাত ভাবে কল্পবিজ্ঞান মনে হলেও ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনা উস্কে দিচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান। এই অভিযানে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরোর যে ‘রোভারটি’ থাকছে, তার কাজ চাঁদের মাটিতে কী কী খনিজ পদার্থ রয়েছে, তার সন্ধান করা। ওই ‘রোভার’ বা চাঁদের গাড়িটি কৃত্রিম মেধা চালিত। সে ‘ল্যান্ডার’ বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং তার মাধ্যমে ছবি ও তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে। সব ঠিক থাকলে আগামিকাল, শুক্রবার বিক্রমের অবতরণ শুরু হবে রাত ১টা থেকে। দেড়টা থেকে আড়াইটের মধ্যে ‘টাচ ডাউন’, শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ বিক্রমের ভিতর থেকে বেরোনোর কথা ‘রোভার’ প্রজ্ঞানের।

Advertisement

ইসরো জানিয়েছে, প্রজ্ঞান নামে ওই ‘রোভারে’ দু’টি যন্ত্র রয়েছে। ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’ নামে যন্ত্রটি অবতরণস্থলের কাছে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী উপাদান রয়েছে তা দেখবে। ওই যন্ত্রে কিউরিয়াম নামে তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে এক্স-রে ও আলফা পার্টিকল নির্গত হবে এবং তার মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলবে। চাঁদের পাথরের মধ্যে লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে কি না, তার সন্ধানও করবে সে। দ্বিতীয় যন্ত্রটির নাম ‘লেসার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’। কাজ অবতরণস্থলের আশপাশে চাঁদের মাটিতে কী উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে তা খুঁজে বার করা, তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সের অধ্যাপক-বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্তের মতে অবশ্য, কত পরিমাণে খনিজ রয়েছে তা এ ভাবে বার করা সম্ভব নয়। তিনি বলছেন, মাটির তলায় খনিজ এবং জল রয়েছে কি না, সেটাই জানাবে রোভার। এর পাশাপাশি অরবিটারটি ক্রমাগত ছবি তুলবে। ভারতই প্রথম দেশ, যার যান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামছে। এর থেকে মহাকাশবিজ্ঞানের অজানা তথ্য বেরোতে পারে বলেই আশাবাদী তিনি।

Advertisement

তবে এ সব বিজ্ঞান-গবেষণা সফল হবে কি না, তা নির্ভর করছে শেষ ১৫ মিনিটের উপরে। কারণ, এই প্রথম চাঁদে অবতরণ করছে ভারতের যান। অবতরণ প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল বলে ইসরো সূত্রের দাবি। এই পরিস্থিতিতে চন্দ্রযান-১ অভিযানের প্রকল্প অধিকর্তা এম আন্নাদুরাই স্মরণ করিয়েছেন, সে বার উৎক্ষেপণের সময় ছিল কম এবং আবহাওয়া খুবই খারাপ ছিল। উৎক্ষেপণের আধ ঘণ্টা আগে আবহাওয়ার উন্নতি হয়। সফল হয় উৎক্ষেপণও। এ বারে পাখির পালকের মতো অবতরণ বা সফ্‌ট ল্যান্ডিংও সফল হবে বলে তিনি আশাবাদী।

এই সফ্‌ট ল্যান্ডিংয়ের জন্য বারবার পরীক্ষা করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর নামাক্কলের মাটি দিয়ে কৃত্রিম চন্দ্রপৃষ্ঠ তৈরি করে তার উপরে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের পরীক্ষা হয়েছিল দু’বার। ওই মাটিতে এনোর্থোসাইট নামে এক ধরনের আগ্নেয় শিলা রয়েছে, যার সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠের মিল রয়েছে। আর এই নামাক্কলের মন্দিরের মহালক্ষ্মীই ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজনের আরাধ্য দেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন