ছবি- নাসা।
যাকে কোনও দিন আমরা দেখতে পাইনি, পৃথিবী থেকে দেখতে পাবও না কোনও কালে, এই প্রথম চাঁদের সেই উল্টো পিঠে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। চাঁদের সেই না-দেখা পিঠের মাটি কেমন, সেখানেও রয়েছে কি না বরফের পুরু স্তর বা বইছে কি না তরল জলের ধারা, তা খুঁজে দেখতে।
চাঁদের উল্টো পিঠের সেই অদেখা, অজানা, অচেনা জগতে আমাদের পৌঁছে দিচ্ছে চিন। তারই জন্য আগামী শনিবার, ৮ অগস্ট মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছে চিনা ল্যান্ডার ‘শাঙ্গে-৪’। তার সঙ্গে যাচ্ছে একটি রোভারও।
কেন দেখা যায় না চাঁদের উল্টো পিঠ?
জন্মের পর থেকে উপগ্রহ চাঁদ শুধু তার একটা পিঠই দেখিয়ে এসেছে পৃথিবীকে। অন্য পিঠটি কোনও কালেই দেখায়নি, দেখাবেও না কোনও দিন। তার কারণ, পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদ জুড়ে রয়েছে (লক্ড) ‘টাইড্যালি’। চাঁদ আর পৃথিবীর কক্ষপথগুলিকে উপর থেকে দেখলে, দেখা যাবে, পৃথিবীকে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে যতটা সময় নেয় চাঁদ, সেই একই সময়ে আমাদের উপগ্রহটি লাট্টুর মতো ঘুরে নেয় নিজের চার পাশে (অ্যাক্সিস)। ফলে, কোনও দিনই আমরা চাঁদের উল্টো দিকের পিঠ দেখতে পাইনি, পাবও না।
আরও পড়ুন- আরও দু’টি চাঁদ আছে পৃথিবীর! মিলল একটির হদিশ
আরও পড়ুন- আকাশে নকল চাঁদ পাঠাচ্ছে বেজিং
কেন চাঁদের একটি পিঠই শুধু ধরা রয়েছে পৃথিবীর দিকে?
শাঙ্গে-৪। যা নামবে চাঁদের উল্টো পিঠে, জানুয়ারিতে। ছবি- নাসা
মোদ্দা কথায়, উপগ্রহটির জন্য পৃথিবীর ‘ভালবাসা’ অত্যন্ত বেশি বলে! এতটাই যে, পৃথিবী কিছুতেই চাঁদকে তার অন্য ‘মুখ’টি দেখাতে দেয় না। পৃথিবীর সেই ‘ভালবাসা’র নামই অভিকর্ষ বল (গ্র্যাভিটেশনাল পুল বা ফোর্স)। চাঁদের তুলনায় পৃথিবীর ভর অনেকটাই বেশি বলে চাঁদের উপর আমাদের গ্রহের অভিকর্ষ বলের টানটাও খুব জোরালো। সেই অত্যন্ত জোরালো টানই চাঁদকে তার ‘চেনা মুখ’ পৃথিবীর দিক থেকে ঘুরিয়ে নিতে দেয় না।
সেই ‘ভালবাসা’য় চাঁদেরও যে খুব একটা খামতি রয়েছে, তা নয়। পৃথিবীর উপর চাঁদের অভিকর্ষ বলের ‘জোরজার’ও উপেক্ষা করার মতো নয়। পৃথিবীর যে হেতু তিন ভাগই জলে ভরা, তাই সাগর, মহাসাগরের উপর চাঁদের টান খুবই জোরালো। বিভিন্ন কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে করতে চাঁদ তার সেই ‘ভালবাসা’র কথা জানান দেয় আমাদের সাগর, মহাসাগরগুলিকে। চাঁদের টানেই জোয়ার, ভাঁটা হয়।
তবে আমাদের সৌরমণ্ডলে এই ঘটনা ঘটেছে অন্য গ্রহগুলির ক্ষেত্রেও। শুধু যে চাঁদই তার একটি পিঠ দেখায় পৃথিবীকে, তা নয়। একই ভাবে বৃহস্পতি, শনির চাঁদগুলিও তাদের গ্রহদের শুধু একটি পিঠই দেখিয়ে রেখেছে।
চাঁদের উল্টো পিঠে নামা ‘শাঙ্গে-৪’-এর উপর কে নজর রাখবে?
চাঁদের যে দিকটি আমরা দেখতে পাই না, সেই দিকের একটি কক্ষপথে ঘুরছে একটি চিনা উপগ্রহ। যার নাম- ‘শেকিয়াও’। কক্ষপথ থেকে এই উপগ্রহই নজর রাখবে ‘শাঙ্গে-৪’-এর উপর। চিনের ‘ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (সিএনএসএ)-এর গ্রাউন্ড স্টেশন আর ‘শাঙ্গে-৪’-এর মধ্যে বার্তা বিনিময় করবে।
চিনা দেবী ‘শেকিয়াও’-এর নামেই নাম রাখা হয়েছে তার। চিনা লোককথায় রয়েছে, তাঁর সপ্তম কন্যা শি নু আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি পেরিয়ে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে, চান্দ্র দিনপঞ্জীর (লুনার ক্যালেন্ডার) সপ্তম মাসের সপ্তম রাতে তাঁর মা দেবী ‘শেকিয়াও’ একটি সেতু বানিয়ে দিয়েছিলেন। শি নুকে তাঁর স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিই।