শুরু কোয়ান্টাম অবস্থার খোঁজ

মহাকাশে শীতলতম অঞ্চলের খোঁজ শুরু নাসার, দেখুন ডকুমেন্টারি

হার্ভার্ড থেকে লিখছেন কাজী রাজিবুল ইসলাম। (লেখক ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।)এ বার ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গাটির নাম হতে চলেছে- আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। সেখানে এ বার আমরা এমন কম তাপমাত্রায় পৌঁছে যেতে পারি, যা কোনও দিন কল্পনাও করা যায়নি! আর তাতে আমাদের চেনা পদার্থও পৌঁছে যেতে পারে একেবারেই অচেনা অবস্থায়। অনেকটা যেন ‘ধর্মেও আছি, জিরাফেও’! হার্ভার্ড থেকে লিখছেন ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাজী রাজিবুল ইসলাম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ১১:১০
Share:

যে ভাবে লিথিয়াম ল্যাবরেটরিতে হদিশ মিলেছিল ‘কোয়ান্টাম দশা’র।

৯০ বছর আগেই তার কথা ভাবা হয়েছিল।

Advertisement

পদার্থের অদ্ভুত একটা অবস্থা।

অনেকটা যেন ‘ধর্মেও আছি, জিরাফেও’ গোছের! যাকে বলে, ‘কোয়ান্টাম অবস্থা’।

Advertisement

যে অবস্থায় কণার তরঙ্গ-ধর্ম দেখা যায়! তরঙ্গ বা ঢেউ যেমন ছড়িয়ে পড়ে এক সঙ্গে অনেকটা জায়গা জুড়ে, একটা ‘কোয়ান্টাম কণা’ও তেমনই অনেক জায়গায় বা অবস্থায় থাকতে পারে, একই সঙ্গে, একই সময়ে।

বহু বছর চেষ্টার পর, শেষমেশ ১৯৯৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি গবেষণাগারে হদিশ মিলেছিল পদার্থের সেই ‘কোয়ান্টাম দশা’ (কোয়ান্টাম ফেজ)-এর। একটি- কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় ও ‘নিস্ট’ (NIST)-এ কার্ল ওয়াইম্যান ও এরিক কর্ণেলের গবেষণাগারে রুবিডিয়াম পরমাণুর গ্যাসের মধ্যে। অন্যটি, ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির উলফগ্যাং কেটারলির গবেষণাগারে সোডিয়াম পরমাণুর গ্যাসের মধ্যে। তার পর থেকে বিশ্বের বহু গবেষণাগারে বেশ কিছু পদার্থকে ওই রকমের ‘কোয়ান্টাম অবস্থা’য় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।


‘কোয়ান্টাম ফেজ’-এর হদিশ। ‘সায়েন্স’ জার্নালের সেই খবর। ১৯৯৫।

পদার্থের এই ‘কোয়ান্টাম দশা’র নাম ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’ (সংক্ষেপে, BEC)। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আবিষ্কার করা ‘বোসন’ কণার ধর্মের (প্রোপারটিজ) ওপর ভিত্তি করেই আইনস্টাইন পদার্থের ওই দশার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তার মানে, প্রাথমিক ভাবে পথটা দেখিয়েছিলেন আমাদের সত্যেন বোসই।

কিন্তু, কী ভাবে পদার্থের ওই ‘কোয়ান্টাম দশা’র হদিশ পাওয়া যায়?


কোল্ড অ্যাটমের বিভিন্ন শক্তি স্তরের ব্যান্ড ম্যাপিং।

একটা উপায় হল- পদার্থকে ঠাণ্ডা করতে থাকা। বেশি তাপমাত্রায় পদার্থের অণু ও পরমাণু দ্রুত গতিতে ছুটতে বা কাঁপতে থাকে। তাপমাত্রা যত কমানো হয়, অণু ও পরমাণুর গতিশক্তিও কমতে থাকে। তাই গ্যাসীয় পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে তরল হয়। আরও ঠাণ্ডা করতে থাকলে সেই তরল পদার্থ জমে কঠিন হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হল, ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অণু ও পরমাণুর গতি কমতে থাকে বটে, কিন্তু তা কখনওই পুরোপুরি শূন্য হয়ে যায় না! এমনকী, পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌঁছে গেলেও, তা হয় না। পরম শূন্য তাপমাত্রা হল শূন্য কেলভিন বা মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর থেকে কম তাপমাত্রা তাত্ত্বিক ভাবে সম্ভব নয় (সেলসিয়াস স্কেলে কোনও তাপমাত্রার মানের সঙ্গে ২৭৩.১৫ ডিগ্রি যোগ করলে কেলভিন স্কেলে সেই তাপমাত্রার মান পাওয়া যায়)। বরং, খুব কম তাপমাত্রায় এসে পদার্থের ধর্ম আমূল বদলে যায়। আমাদের পরিচিত ‘ক্লাসিক্যাল জগত’-এর নিয়মগুলো, যেমন নিউটনের গতিসূত্র সেখানে সোজাসুজি খাটে না। অণু, পরমাণু ও ইলেকট্রনের মতো ‘কণা’-র গতি বুঝতে তখন ব্যবহার করতে হয় তরঙ্গের নিয়মকানুন! সম্ভাব্যতা বা ‘প্রোবাবিলিটি’র অঙ্ক কষতে হয়। কারণ, ওরা যে তখন ‘কোয়ান্টাম জগতে’র বাসিন্দা! এই কোয়ান্টাম জগতে পৌঁছে এক সময় আমাদের পরিচিত কিছু পদার্থই পরিণত হয় ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’-এ।

সেই ‘কল্পনাতীত’ ঠাণ্ডা: দেখুন ডকুমেন্টারি।

এ বার মহাকাশে পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছে সেই বিস্ময়কর কোয়ান্টাম পদার্থের হদিশ পেতে হন্যে হয়ে উঠেছে নাসা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) এমন কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা সম্ভব হবে, যা পৃথিবীতে বসে করা এক রকম অসম্ভবই। মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ বল একেবারেই নগণ্য। আর সেটারই সুফল পেতে পারি আমরা।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোনও পদার্থকে পরম শূন্য তাপমাত্রার এত কাছে ঠাণ্ডা করা যেতে পারে, যা পৃথিবীতে বসে সম্ভব নয়। মহাকাশে এই অতি শীতল ‘কোয়ান্টাম পদার্থ’ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে সময়-গণনার (টাইম মেজারমেন্ট)সূক্ষ্মতম উপায়। তৈরি হতে পারে অত্যন্ত দুর্বল মহাকর্ষ বা চৌম্বক ক্ষেত্র মাপার ‘কোয়ান্টাম সেন্সর’। ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায় নাসা-র ‘কোল্ড অ্যাটম ল্যাবরেটরি’তে (CAL) এখন শুরু হয়ে গিয়েছে যার জোর তোড়জোড়।

একটি রোমাঞ্চকর কাহিনী

ল্যাবরেটরিতে কোনও পদার্থকে ‘ঘরের তাপমাত্রা’ থেকে পরম শূন্য তাপমাত্রা পর্যন্ত ঠাণ্ডা করার কাহিনীটাও বেশ রোমাঞ্চকর!


‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’-এর কম্পিউটার মডেল।

সাধারণ ভাবে কোনও পদার্থকে ঠাণ্ডা করতে আমরা তাকে অন্য কোনও ঠাণ্ডা পদার্থের সংস্পর্শে আনি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ‘কুল্যান্ট’ হল- তরল হিলিয়াম। কিন্তু, তা দিয়েও কোনও পদার্থের তাপমাত্রা এক কেলভিনের নীচে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। তবে তার চেয়ে কম তাপমাত্রায় বিশেষ কিছু গ্যাসীয় পদার্থকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তার জন্য অবশ্য ব্যবহার করা হয় আলো! এই পরীক্ষাগুলো করা হয় বিশেষ ভাবে বানানো প্রায় শূন্য স্থান (‘ভ্যাকুয়াম চেম্বার’)-এর মধ্যে। এই ‘ভ্যাকুয়াম চেম্বারে’র মধ্যে চৌম্বক বা আলোক ক্ষেত্র দিয়ে বানানো বিশেষ ফাঁদ বা ‘ট্র্যাপ’, এই গ্যাসীয় পদার্থকে আটকে রাখে। বিশেষ লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে গ্যাসের তাপমাত্রা নিয়ে যাওয়া যায় কয়েক মাইক্রো-কেলভিন পর্যন্ত।(এক মাইক্রো-কেলভিন হল এক কেলভিনের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ।) এত কম তাপমাত্রায় এসে গ্যাসীয় পদার্থের পরমাণুর গতিশক্তি এতটাই কমে যায় যে, সামান্য, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আলোর একটা কণা বা ‘ফোটন’-এর ধাক্কা খেয়েই তার গতি বেড়ে যেতে পারে! এর থেকেও কম তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় সেই নীতি, যার ফলে চায়ের কাপের চা ঠান্ডা হয়ে যায়।

সেটা কী ভাবে হয়? সেই নীতিটা কী?

গরম চা থেকে বাষ্পীভবন হয়। তাতে মূলত জলের যে অণুগুলোর গতিশক্তি খুব বেশি, সেগুলো বেরিয়ে যায়। পড়ে থাকে তূলনামূলক ভাবে কম গতিশক্তির অণুগুলো। তারা আবার নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে সাম্যাবস্থায় (thermal equilibrium)-এ ফিরে আসে। তাপমাত্রা হল গড় গতিশক্তির পরিমাপ। তাই বেশি গতিশক্তির অণু বেরিয়ে যাওয়ায় চা ঠাণ্ডা হতে থাকে। ঠিক একই ভাবে, পরীক্ষাগারে কয়েক মাইক্রো-কেলভিন তাপমাত্রার গ্যাসের মধ্যে থাকা তুলনামূলক ভাবে বেশি গতিশক্তির পরমাণুগুলোকে ‘ট্র্যাপ’ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা করা হয় রেডিও-কম্পাঙ্কের বিকিরণের মাধ্যমে। এ ভাবে তাপমাত্রা কমতে থাকে। আগেই বলেছি, এত কম তাপমাত্রায় কণা ছড়িয়ে পড়ে তরঙ্গের মতো। তাপমাত্রা কমতে-কমতে এমন একটা সময় আসে, যখন পরমাণুগুলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য (অর্থাৎ যে অঞ্চলের মধ্যে ওই কণাটি তরঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তার রৈখিক মাপ) তাদের পরস্পরের দূরত্বের সমান হয়ে যায়। গ্যাসটি যদি ‘বোসন’ কণা দিয়ে তৈরি হয় (অর্থাৎ, তার পরমাণুর মধ্যে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, আর নিউট্রনের মোট সংখ্যা ‘জোড়’ (ইভেন নাম্বার) হয়), তা হলে সেই তাপমাত্রার নীচে এসে তাদের কিছু পরমাণুর মধ্যে অদ্ভুত সুসঙ্গতি (coherence) দেখা যায়। একটা অদ্ভুত রকমের শৃঙ্খলা। যেমনটা দেখা যায় কুচকাওয়াজের সময় সেনা জওয়ানদের মধ্যে। তখন কোন পরমাণুটা কোথায় রয়েছে, তা আলাদা করে চেনা যায় না। এই পরমাণুগুলো তখন ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’ বা ‘BEC’ দশায় পৌঁছে গিয়েছে। তাপমাত্রা যত কমতে থাকে, ওই গ্যাসের মধ্যে তত বেশি সংখ্যায় পরমাণু নিজেদের আলাদা অস্তিত্ব হারিয়ে ওই ‘BEC’-র মধ্যে ঢুকে পড়ে।


নাসার কোল্ড অ্যাটম ল্যাবরেটরির প্রোজেক্ট ম্যানেজার অনিতা সেনগুপ্ত।

সাধারণত, গবেষণাগারে তৈরি ‘BEC’-র তাপমাত্রা কয়েক ন্যানো-কেলভিন বা আরেকটু বেশি হয় (এক ন্যানো-কেলভিন হল, এক মাইক্রো-কেলভিনের এক হাজার ভাগের এক ভাগ)। যদিও ‘রেকর্ড ঠাণ্ডা’- ‘BEC’-র তাপমাত্রা ৫০০ পিকো-কেলভিনের মতো (এক পিকো-কেলভিন হল, এক ন্যানো-কেলভিনের এক হাজার ভাগের এক ভাগ)। ‘BEC’-র মধ্যে সাধারণত কয়েক হাজার থেকে কয়েক কোটি পরমাণু থাকে। তাপমাত্রার নিরিখে এই ‘BEC’ হল এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গা! কারণ, মহাকাশের শূন্য স্থানে খুব কম পদার্থ থাকলেও তাপমাত্রা কিন্তু একেবারেই শূন্য নয়। এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির সময় যে বিস্ফোরণ বা ‘বিগ ব্যাং’ হয়েছিল, তার থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণের (যাকে ‘CMBR’ বলা হয়) জন্য শূন্য স্থানের তাপমাত্রাও গড়ে ২.৭ কেলভিনের মতো হয়। তার চেয়ে কম তাপমাত্রা, যেমন- এই ‘BEC’-র তাপমাত্রায়, কৃত্রিম ভাবে পরীক্ষাগারেই পৌঁছনো সম্ভব।

আরও পড়ুন:
এ কোন আকাশবাণী? মহাকাশ থেকে কে পাঠাল ৭২ সেকেন্ডের বার্তা!

পরীক্ষাগারে ‘BEC’-র আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে গিয়েছে। হাতে-কলমে ‘কোয়ান্টাম জগতে’র রহস্য বোঝার কাজে লেগে পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। সেই জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছের পদার্থকে কাজে লাগানো হচ্ছে সূক্ষাতিসূক্ষ সময়-গণনার কাজে। অর্থাৎ, ‘পারমাণবিক ঘড়ি’ (অ্যাটমিক ক্লক) হিসেবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিজ্ঞানীরা হয়তো বানিয়ে ফেলবেন শক্তিশালী ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’ও। আলো দিয়ে পদার্থকে ঠাণ্ডা করা, ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’ তৈরি করা, পদার্থের কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা- এই সব কৃতিত্বের জন্য গত দু’দশকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে আট জন বিজ্ঞানীকে। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই রয়েছেন কেটারলি, ওয়াইম্যান, আর কর্ণেল।


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। যেখানে হবে সেই পরীক্ষা।

পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছে পৌঁছনো আর ‘কোয়ান্টাম অবস্থা’ নিয়ে গবেষণা করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা কিন্তু এখানেই থেমে যাননি।

আরও কত নীচে নামা যায়?

ন্যানো-কেলভিনের থেকে আরও কম তাপমাত্রায় কী ভাবে পৌঁছনো যায়, তার জন্য তাঁরা অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে কে ‘ভিলেন’ জানেন? মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। যদিও ল্যাবরেটরিতে বানানো এই অসামান্য কম তাপমাত্রায় পদার্থের আয়তন (ভল্যুম) খুব কম। তবু তার উচ্চতা বরাবর মাধ্যাকর্ষণ-বিভবের ফারাকটাই আসল বাধা হয়ে দাঁড়ায় আরও ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পথে। আবার মাধ্যাকর্ষণ না থাকলে, ঠাণ্ডা গ্যাসকে ‘ট্র্যাপ’ থেকে মুক্তি দিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে সম্প্রসারিত হতে দেওয়া যাবে। তা নিজের ওজনে পড়ে যাবে না। গ্যাসের সেই সম্প্রসারণ থেকেই জানা যাবে, ঠিক কত তাপমাত্রায় তা পৌঁছেছিল। এত কম তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটার বানানো তো সহজ নয়!


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। যেখানে হবে সেই পরীক্ষা।

পৃথিবীতে বসে তো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ‘মায়া’ কাটানো খুব মুশকিল! তাই, রকেটে চাপিয়ে পরের বছর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যন্ত্রপাতি পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় CAL-এ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই রুবিডিয়াম আর পটাশিয়াম গ্যাসকে ঠাণ্ডা করে ফেলেছেন। ঘরের তাপমাত্রা থেকে এই পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছে পৌঁছতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড! মহাকাশে কোনও দিন এই ধরনের কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি। তাই, যন্ত্রপাতি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছনোর পর বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করবেন, সেই পরীক্ষার প্রত্যেকটা ধাপ একটা একটা করে পেরিয়ে যেতে। যেমন, লেজার দিয়ে ঠান্ডা করা, ‘BEC’ বানানো, ইত্যাদি। তখন পার্থিব মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না বলে আশা করাই যায়, তাঁদের যন্ত্রে কোয়ান্টাম পদার্থকে আরও বেশি ঠাণ্ডা করা যাবে। আরও আরও ঠাণ্ডা। আপাতত, লক্ষ্যমাত্রা হল কয়েক পিকো-কেলভিন। এই পরীক্ষা সফল হলে, এই ব্রহ্মাণ্ডের ‘সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গা’র তকমা পাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ওই অসম্ভব রকমের কম তাপমাত্রায় অনেক কোয়ান্টাম কণা মিলে-মিশে হয়তো দেখাবে চমকে দেওয়ার মতো কোনও ধর্ম (প্রপারটিজ)। যা আমরা কোনও দিন কল্পনাই করিনি! করতে পারিনি।

কল্পনার অতীত যা, তা তো কার্যত, ‘অচেনা’ই!

আর ‘অচেনার আনন্দ’ই তো সেরা আনন্দ, তাই না?

ছবি সৌজন্য: নাসা।

ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement