nasa

Godzilla In Space: সেই মহারাক্ষস গডজিলা এ বার মহাকাশেও! ধরা দিল নাসার স্পিৎজার টেলিস্কোপে

সৌরমণ্ডল থেকে খুব একটা দূরেও নয়। ৭ হাজার ৮০০ আলোকবর্ষ দূরে স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫:২৮
Share:

মহাকাশের সেই ‘গডজিলা’। ছবি সৌজন্যে- জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট হার্ট ও শ্রীনিবাস রঙ্গনাথন।

ভয়ঙ্কর মহারাক্ষস ‘গডজিলা’র হদিশ মিলল মহাকাশে। এই প্রথম। ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই।

Advertisement

মহাকাশে পাঠানো নাসার স্পিৎজার টেলিস্কোপেই শেষমেশ ধরা দিল সেই গডজিলা। সৌরমণ্ডল থেকে খুব একটা দূরেও নয়। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ৭ হাজার ৮০০ আলোকবর্ষ। স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে। এই স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে একটি নেবুলায় অবিকল গডজিলার অবয়ব দেখতে পাওয়া গেল।

গডজিলার কাছে মাথা নোয়ায় কিং কংও!

Advertisement

গ়ডজিলার কথা আর কেইবা ভুলতে পারে! যে মহাসাগরের অতল থেকে উঠে এসে তছনছ করে দেয় সব কিছু। যাকে হাজার হাজার কামানের গোলা ছুড়েও মারা যায় না। জাপানে পরমাণু বোমার ভস্ম থেকে যার জন্ম বলে জনশ্রুতি। যাকে নিয়ে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হয়েছিল আজ থেকে ৬৭ বছর আগে। ১৯৫৪-য়। পরে যাকে নিয়ে হয়েছে গডজিলা সিরিজের একের পর এক চলচ্চিত্র। অন্তত ৩০টি। শেষতমটি হয়েছে ২০২১-এ। হলিউডে। যার নাম ‘গডজিলা ভার্সাস কং’। নাম 'গডজিলা ভার্সাস কং'। এই ছবিতে গডজিলার সঙ্গে কংকে প্রাথমিক ভাবে লড়াই করতে দেখা গেলেও পরে দু'জনে একত্র হয়ে এক কৃত্রিম দানবের মোকাবিলা করে।

যেন গডজিলাই! যা ধরা পড়েছে নাসার স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপে। ছবি সৌজন্যে- জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট হার্ট ও শ্রীনিবাস রঙ্গনাথন।

সপ্তর্ষিমণ্ডল, ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার, জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন…

আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলে আমরা তিরন্দাজ ধনুর্ধর দেখেছি আগেই। খুঁজে পেয়েছি সপ্তর্ষিমণ্ডল। টেলিস্কোপের দৌলতে দেখেছি তারাদের মৃত্যু-দৃশ্যে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ (‘সুপারনোভা’) থেকে বেরিয়ে আসা গায়ে কাঁটা দেওয়া তরঙ্গ (‘ব্লাস্ট ওয়েভ’)। দেখেছি আন্তর্নক্ষত্র মাধ্যমের জমাট বাঁধা গ্যাস ও ধূলিকণার খুব পুরু মেঘের চমকে দেওয়া উচ্চতার সুবিশাল স্তম্ভ। মহাকাশে খুঁজে পেয়েছি সেই ভয়ঙ্কর বিষাক্ত মাকড়সা ‘ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার’কে।

কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলিতে যে ধরনের মহাকাশযান (যাদের বলা হয়, ‘স্টারশিপ এন্টারপ্রাইজ’) দেখানো হয় সেগুলিও মহাকাশে ধরা পড়েছে বিভিন্ন টেলিস্কোপের চোখে। কুমড়োর গায়ের কোনও কোনও অংশ থেকে যেমন ঠিকরে বেরোয় আলো, মহাকাশে তেমন ‘জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন’-এরও হদিশ পেয়েছে নাসার স্পিৎজার টেলিস্কোপই। এ বার যেমন মিলল গডজিলার হদিশ।

সেই ‘জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন’ নেবুলা। ছবি সৌজন্যে- জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট হার্ট ও শ্রীনিবাস রঙ্গনাথন।

স্পিৎজারের কৃতিত্ব যেখানে

২০০৩ সালে নাসা মহাকাশে পাঠায় স্পিৎজার টেলিস্কোপ। অজানা ব্রহ্মাণ্ডের নানা দিকের ছবি তুলতে। সেই সব মুলুককে জানতে, চিনতে। ২০২০ সালে স্পিৎজারের কাজ শেষ হয়। টেলিস্কোপটি চলে গিয়েছে এখন অবসরে। এখন সেই টেলিস্কোপের পাঠানো ছবিগুলি খতিয়ে দেখছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাতে ধরা পড়ছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বিভিন্ন মুলুকের তারামণ্ডল। সেখানকার জমাট বাঁধা গ্যাস ও ধূলিকণার অত্যন্ত পুরু মেঘের স্তর বা স্তম্ভগুলি। এদের থেকেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় তারামণ্ডল, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু এমনকি ধূমকেতুও। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায়, সেই জমাট বাঁধা গ্যাস ও ধূলিকণার অত্যন্ত পুরু মেঘের স্তর বা স্তম্ভগুলিকে বলা হয় ‘নেবুলা’।

আমাদের সৌরমণ্ডল, পৃথিবী-সহ অন্যান্য গ্রহ ও তাদের উপগ্রহ, এই সৌরমণ্ডলের গ্রহাণুপুঞ্জ, সৌরমণ্ডলের একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা বরফের মহাসাম্রাজ্য ওরট্‌ ক্লাউডও তৈরি হয়েছে এমন নেবুলা থেকেই।

কেন লাল, নীল, সবুজ, নানা রঙের আলো?

স্পিৎজার টেলিস্কোপের পাঠানো ছবি ও তথ্যাদিগুলি খতিয়ে দেখার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যাঁরা তাঁদের অন্যতম আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রীনিবাস রঙ্গনাথন ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (‘ক্যালটেক’)-র জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট হার্টের মাধ্যমেই ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-এর হাতে এসেছে স্পিৎজার টেলিস্কোপের তোলা সেই সব অবাক করা ছবি।

‘গডজিলা’ সিরিজের বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গায়ে কাটা দেওয়া কিছু কিছু মুহূর্ত।

হার্ট ও রঙ্গনাথন ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-কে বলেছেন, ‘‘আকাশের এই অংশটিকে আমরা অনেক দিন ধরেই নজরে রেখেছি। কিন্তু এই প্রথম সেখানে স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে একটি নেবুলায় অবিকল গডজিলার অবয়ব দেখতে পাওয়া গেল। ছবিগুলি তোলা হয়েছে আলোকবর্ণালীর একটি প্রান্তে থাকা অবলোহিত রশ্মির (‘ইনফ্রারেড রে’) বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। তাই ফুটে উঠছে কোথাও নীল বা লাল রং। কোথাও বা সবুজ অথবা নীলাভ সবুজ বা সবুজাভ নীল (‘সায়ান’)। আর সেই সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো মিলেমিশে গিয়ে কোথাও বেরিয়ে আসছে হলুদ রং কোথাও সাদা।’’

হার্ট ও রঙ্গনাথন জানিয়েছেন, মহাকাশের গ়়ডজিলার হাতে ধরা রয়েছে নেবুলার যে অংশটি, সেখানে তারা তৈরি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। নেবুলার যে অংশে দেখা যাচ্ছে নীল রং বা নীলাভ সবুজ বা সবুজাভ নীল তা বেরিয়ে আসছে সদ্য জন্মানো তারাগুলি থেকে। সবুজ আলো বেরিয়ে আসছে ধূলিকণা ও জৈব অণুদের (যাদের বলা হয় ‘হাইড্রোকার্বন’) থেকে। যাদের থেকে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীতে। লাল আলো বেরিয়ে আসছে তারা বা সুপারনোভার প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত ধুলিকণা থেকে। এই ভাবেই বোঝা যাচ্ছে নেবুলার কোন কোন অংশে কী কী ঘটনা ঘটছে। কী ভাবে ঘটছে। যে ভাবে অন্য কোনও নেবুলা থেকে কয়েকশো কোটি বছর আগে আমাদের সৌরমণ্ডলও তৈরি হয়েছিল।

রঙ্গনাথনের কথায়, ‘‘এগুলি ‘প্যারেডোলিয়া’ ঠিকই। যাকে বলা যায় রজ্জুতে সর্পভ্রম। কিন্তু এই ভাবেই আমরা সাধারণ মানুষকে মহাজাগতিক বস্তুগুলি সম্পর্কে আরও উৎসাহী করে তুলতে চাইছি।’’

এই ভাবেই গডজিলার কাছে হেরে যাওয়া কিং কং-এরও এ বার হদিশ মিলতে পারে মহাকাশে!

ছবি সৌজন্যে- জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট হার্ট ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী শ্রীনিবাস রঙ্গনাথন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন