বিপাকে গবেষকেরা, ভুগছে বিজ্ঞানচর্চাও

বিজ্ঞানে কি বাঙালির আগ্রহ কমছে? গবেষকদের একাংশের দাবি, বিজ্ঞানে আগ্রহ কমেনি, গবেষকদের জন্য সহায়তা কমেছে। কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। তাই অনেকেই বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাঠে আগ্রহী নন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৩
Share:

প্রশ্নটা অনেকেই তুলছেন, কলকাতায় শনিবার বিজ্ঞান পদযাত্রার পরে। বিজ্ঞানে কি বাঙালির আগ্রহ কমছে? গবেষকদের একাংশের দাবি, বিজ্ঞানে আগ্রহ কমেনি, গবেষকদের জন্য সহায়তা কমেছে। কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। তাই অনেকেই বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাঠে আগ্রহী নন।

Advertisement

বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কমছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত বছর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা, সব স্তরে বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কমছে।’’ শিক্ষকদের একাংশেরও মত, আগের মতো মেধাবী পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ এখন পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক বা জীববিদ্যা পড়ে না। বেশির ভাগেরই ঝোঁক ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক পার্থিব বসু বলেন, ‘‘বিজ্ঞানমনস্ক পড়ুয়াদের বড়ই অভাব!’’

বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘সমাজের কোনও কোনও অংশে ঘুণ ধরেছে। গবেষণার প্রতি ভালবাসা অনেকেই হারাতে বসেছেন। সকলেই যেন অর্থ উপার্জনের জন্য দৌড়চ্ছে!’’ তাঁর মতে, বিজ্ঞানচর্চায় আয়ের সম্ভাবনা কম থাকায় এই অবস্থা।

Advertisement

বিজ্ঞানে বাঙালির প্রতিভা স্মরণীয়। জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহার মতো মনীষীদের বাদ দিলেও দেশ-বিদেশের গবেষণাগারে বাঙালি বিজ্ঞানী এখনও কম নেই। ‘‘বিজ্ঞান ছেড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং প়ড়তে যাওয়ার চল গত দু’দশকে বে়ড়েছে,’’ বলছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী। ডেমোক্র্যাটিক রিসার্চ স্কলার্স অর্গানাইজেশন-এর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বেঙ্গালুরুতে পদার্থবিদ্যার গবেষক অর্ঘ্য দাসের দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পরিকাঠামোর অভাব ঠিক করতে না পারলে গবেষকেরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না।’’

আরও পড়ুন: বিপাকে গবেষকেরা, ভুগছে বিজ্ঞানচর্চাও

গবেষকদের অনেকেরই বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র ফেলোশিপ পেতে বছর ঘুরে যায়। যা কিনা তিন মাস অন্তর পাওয়ার কথা। গবেষণাগারের যন্ত্রও মেরামত করতে হয় নিজেদের টাকায়। একই ভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে আইআইটিগুলিও। সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন, ‘‘এ রাজ্যে থেকেই বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। কিন্তু গবেষকরা বর্তমানে একেবারেই আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন না।’’ এ দিন কলকাতায় বিজ্ঞান পদযাত্রা থেকেও গবেষণা ও বিজ্ঞান শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি উঠেছে।

বিভিন্ন স্কুলে বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে কাজ করছে ‘রেলবন্ধু’ নামে শিয়ালদহের রেলকর্মীদের একটি সংগঠন। তাদের কর্তারা অবশ্য বলছেন, আকর্ষণীয় ভাবে বিজ্ঞানকে তুলে ধরতে পারলে পড়ুয়ারা আগ্রহী হয়। এই অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। কিন্তু সরকারি স্তরে সেই উদ্যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবিটিএ-র নেতা কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করার কোনও চেষ্টা করা হয় না। পর্যাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন