আদিগঙ্গার দূষণ, পর্ষদ ও পুরসভার ভিন্ন রিপোর্ট

একই আদিগঙ্গা। দুই রিপোর্ট। এবং দুই রিপোর্টে আসমান-জমিন ফারাক! রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে যে আদিগঙ্গা মারাত্মক ভাবে দূষিত এবং জঞ্জাল-বর্জ্যে ভর্তি, সেই আদিগঙ্গাকেই ‘পরিষ্কার’ বলে দাবি করেছে কলকাতা পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৭
Share:

একই আদিগঙ্গা। দুই রিপোর্ট। এবং দুই রিপোর্টে আসমান-জমিন ফারাক!

Advertisement

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে যে আদিগঙ্গা মারাত্মক ভাবে দূষিত এবং জঞ্জাল-বর্জ্যে ভর্তি, সেই আদিগঙ্গাকেই ‘পরিষ্কার’ বলে দাবি করেছে কলকাতা পুরসভা। দু’টি সংস্থাই সোমবার এই রিপোর্ট পেশ করেছে কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে। যা শুনে কিছুটা বিস্মিত আদালতের ডিভিশন বেঞ্চও। বেঞ্চের সদস্য, বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্র অবশ্য পুরসভার রিপোর্টে একেবারেই সন্তুষ্ট হননি। তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, পুরসভাকে আগামী ছ’সপ্তাহের মধ্যে ফের নতুন করে রিপোর্ট দিয়ে আদিগঙ্গার প্রকৃত পরিস্থিতি জানাতে হবে।

পরিবেশ আদালত অবশ্য শুধু পুরসভা বা পর্ষদের উপরে ভরসা করেনি। আদিগঙ্গার হাল জানতে তৃতীয় পক্ষকেও নিযুক্ত করা হয়েছে। এ দিন আদালত জানিয়েছে, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এই মামলায় ‘আদালতবান্ধব’ হিসেবে কাজ করবেন। তিনিও আদিগঙ্গার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কোর্টে রিপোর্ট দেবেন।

Advertisement

দুই সংস্থার রিপোর্টে এত ফারাক কেন? পর্ষদ সূত্রের খবর, গত ২৯ জুন তারা আদিগঙ্গার পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছে। ওই দিন সেখানকার পরিবেশগত অবস্থার ছবিও তোলা হয়েছিল। সেই পরিদর্শনের রিপোর্ট ও ছবি এ দিন আদালতে পেশ করেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদিগঙ্গার উপরে মেট্রো রেলের ৩০০টি স্তম্ভ হয়েছে। আদিগঙ্গার মধ্যে জঞ্জাল ও নির্মাণসামগ্রী জমে থাকছে। তার ফলে জলের প্রবাহ থমকে গিয়েছে। আদালতের বাইরে পরিবেশ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিদ্যাধরী নদী ও গঙ্গার মধ্যে যোগসূত্র হল আদিগঙ্গা। কিন্তু তা এখন কার্যত একটা নালায় পরিণত হয়েছে।’’

পুরসভার রিপোর্টে অবশ্য দূষণের এই ছবি মানা হয়নি বলেই খবর। তাদের আইনজীবী রিপোর্ট দাখিল করে দাবি করেন, আদিগঙ্গার দূষণ রুখতে তাঁরা সক্রিয়। নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয়। যদিও পরিবেশ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরসভার ওই রিপোর্ট পুরনো। তার ফলেই সেই রিপোর্টটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বাস্তব ছবিটাও মেলেনি। পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, ওই রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পরে তা হলে আর আদিগঙ্গা সাফ করেননি পুরকর্মীরা।

আদিগঙ্গার উপরে মেট্রো রেলের স্তম্ভ থাকায় এই মামলায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকেও ভাগীদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন আদালতের বাইরে সুভাষবাবু জানান, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি আদিগঙ্গার পাড়ে। কিন্তু সেই আদিগঙ্গাই নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তিনি আরও জানান, বড় ধরনের জোয়ার বা ষাঁড়াষাঁড়ির বান এলে আদিগঙ্গার জল কালীঘাট-হাজরা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তার ফলে আদিগঙ্গার দূষণে ওই সব এলাকার বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন