Earth’s Crust Breaking Apart:

ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর উপরিস্তর! প্রলয়ের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের, বদলে যেতে পারে ভূগোল

এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে। প্রধান লেখক ব্র্যান্ডন শাক। তিনি লুইজ়িয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

ক্রমাগত ভেঙেই চলেছে পৃথিবীর ক্রাস্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

লাইনচ্যুত হওয়ার সময় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলি যে ভাবে এক এক করে ট্র্যাকের বাইরে নেমে যায়, একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ব্যাপারটা খানিক সে রকমই।

Advertisement

মাটির গভীরে দুই টেকটনিক পাতের সংঘর্ষের পরেও একই ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে নীচের পাত। এক সময়ে সেটি ভেঙে আলাদাও হয়ে যায়। ঠিক যে ভাবে লাইনচ্যুত হওয়ার পর লাইনের পাশে পড়ে থাকে এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি! পৃথিবীর অন্তরের, অন্দরের এই ক্রিয়াকলাপেই ক্রমাগত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে ভূত্বক (ক্রাস্ট)। এতেই মহাপ্রলয়ের আশঙ্কা দেখছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। শুধু তা-ই নয়, অনুমান, ভবিষ্যতে পৃথিবীর ভূগোলও বদলে যেতে পারে এ কারণে।

সাধারণত পৃথিবীর গঠনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একেবারে উপরের স্তর হল ক্রাস্ট বা শিলামণ্ডল। তার পরে ম্যান্টল বা গুরুমণ্ডল এবং সবচেয়ে নীচের অংশ কোর বা কেন্দ্রমণ্ডল। কেন্দ্রমণ্ডলের দু’টি ভাগ, বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল। এই ক্রাস্টই গঠিত কতগুলি টেকটনিক প্লেট দিয়ে। যদিও তা স্থির নয়। গতি রয়েছে। তবে কম। বছরে হয়ত কয়েক সেন্টিমিটার নড়াচড়া করে এই প্লেটগুলি। যার ফলে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়। তখন প্রলয় ঘটে পৃথিবীতে। ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাত হয়।

Advertisement

অনেক সময় একটি টেকটনিক প্লেট (সাধারণত সমুদ্রের নীচের ভারী প্লেট) অন্য কোনও হালকা প্লেটের নীচে প্রবেশ করে। উপরে থাকে মহাদেশীয় প্লেট, অর্থাৎ স্থলভাগের অংশ। নীচে থাকে মহাসাগরীয় প্লেট, অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ। যে অংশে একটি প্লেট অন্য প্লেটের নীচে প্রবেশ করে, সেটিকে ‘সাবডাকশন জ়োন’ বলে। এই অংশটি ভীষণ ভাবে সংবেদনশীল এলাকা। যে কোনও সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে সেখানে। এ রকমই একটি অঞ্চল রয়েছে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশটিকে বলে ‘কাসকাডিয়া সাবডাকশন জ়োন’।

যত কাণ্ড কাসকাডিয়ায়

কাসকাডিয়া অঞ্চলে উত্তর আমেরিকা প্লেটের নীচে একটু একটু করে প্রবেশ করছে দু’টি প্লেট— ‘ওয়ান ডি ফুকা’ এবং ‘এক্সপ্লোরার’। এই গতিবিধির দিকে দীর্ঘ দিন ধরেই নজর রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ তাঁদের অনুমান, ওই অঞ্চলে মাটির তলদেশে যা ঘটছে, তাতে কোনও এক দিন সেখানে বড়সড় ভূমিকম্প ঘটতে পারে।

জন্ম-মৃত্যু

সম্প্রতি গবেষকেরা কাসকাডিয়া এলাকায় নতুন একটি ব্যাপার লক্ষ করলেন। তাঁরা দেখলেন, ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটছে ‘সাবডাকশন জ়োন’-এর! অর্থাৎ, এক প্লেট অন্য প্লেটের নীচে প্রবেশ করার প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর তা যখন ঘটে, তখন নীচে থাকা প্লেটটি ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে। ভাঙতে জন্ম নেয় ছোট ছোট কয়েকটি প্লেট।

রহস্যোন্মোচন

২০২১ সালে একটি অভিযান চালান বিজ্ঞানীরা। অভিযানের নাম— ‘কাসকাডিয়া সিসমিক ইমেজিং এক্সপেরিমেন্ট’। এই অভিযানে একটি জাহাজ থেকে সমুদ্রের তলদেশে শব্দতরঙ্গ পাঠানো হয়। সেই তরঙ্গের প্রতিফলনেই সমুদ্রের নীচে টেকটনিক প্লেটে গভীর ফাটল ও ভাঙনরেখা দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, প্লেটের কিছু অংশ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নীচে নেমে গিয়েছে। ফাটলের দৈর্ঘ্যও প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। কিছু জায়গায় এখনও ভূমিকম্প হচ্ছে। কিছু জায়গা নীরব। কোনও কম্পন নেই। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই অংশ নীরব থাকার অর্থ প্লেটের কিছু অংশ ভেঙে আলাদা হয়ে গিয়েছে। একেই ‘সাবডাকশন জ়োনের’ মৃত্যু বলছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম বার এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলেন তাঁরা।

প্রলয়?

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্লেট ভেঙে টুকরো টুকরো হলে অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে। তা থেকে সময়ের কালে আবার নতুন প্লেটসীমান্ত তৈরি হবে। শুরু হবে নতুন চক্র। বদলাতে পারে পৃথিবীর ভূগোল। ভূমিকম্প কি হবে? বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, তা এখনই ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে কাসকাডিয়া এলাকায় যে ভূমিকম্প হবেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত তাঁরা। সে ব্যাপারে আরও ভাল করে জানতে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ।

এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে। প্রধান লেখক ব্র্যান্ডন শাক। তিনি লুইজ়িয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement