Fish DNA to Human Hands

মাছের পাখনার বিবর্তনেই হাত গজিয়েছে মানুষের! হদিস মিলল ৩৬ কোটি বছরের ‘মিসিং লিঙ্কের’

আমেরিকার কানসাস সিটির স্টোয়ার ইনস্টিটিউটের গবেষক অরেলি হিন্টারম্যান এবং তাঁর দল ডিএনএ কাটাছেঁড়ার ‘ক্রিসপিয়ার’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই গবেষণা চালিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৩
Share:

মাছের পাখনা থেকে মানুষের হাত, দাবি গবেষণায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

৩৬ কোটি বছর আগে ডাঙায় ওঠা শিখেছিল মাছ। পাখনা থেকে পা গজানো তখন থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে জন্মায় পায়ের আঙুল। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পর সেই পা-ই হয়ে ওঠে হাত! অন্তত তেমনটাই উঠে গেল সাম্প্রতিক গবেষণায়।

Advertisement

দু’হাতই মানুষকে অন্য প্রাণীদের থেকে একেবারে আলাদা করে দিয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশেও হাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য, যা মানুষকে প্রাণীকুলের ‘সর্বোচ্চ’ আসনে বসিয়েছে। কিন্তু মানুষের শরীরে এই হাত এল কী ভাবে? রহস্য উন্মোচনে বহু বছর ধরেই জীবাশ্ম, মাছ এবং বিভিন্ন স্থলচর প্রাণীর ভ্রূণের গঠন পরীক্ষা করে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে মিলল উত্তর।

আমেরিকার কানসাস সিটির স্টোয়ার ইনস্টিটিউটের গবেষক অরেলি হিন্টারম্যান এবং তাঁর দল ডিএনএ কাটাছেঁড়ার ‘ক্রিসপিয়ার’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁরা দেখলেন, হাত বা পায়ের গঠন কোনও নতুন জিনের কারণে হয়নি। আদি-অনন্তকাল ধরে শরীরে যে সব জিনের উপস্থিতি ছিল, তাদেরই কিছু অংশ ভোল বদলে ফেলে এই বিবর্তন ঘটিয়েছে।

Advertisement

নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণের জন্ম। সেই ভ্রুণে সমস্ত ধরনের জিনই (জিনসেট) মজুত থাকে। ধীরে ধীরে নতুন কোষ তৈরি হয়। তারাও উত্তরাধিকার সূত্রে একই জিনসেট পায়। বিজ্ঞানীরা জানান, কোষের নির্দেশেই যাবতীয় কাজ করে এই জিনসেট। কখনও কেউ নিষ্ক্রিয় হয়, আবার কখনও কেউ অতিসক্রিয়ও হয়ে পড়ে। এই কারণে শরীরে টিস্যু বা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন সম্ভব হয়। আবার এক কোষ তার পাশের কোষকেও সঙ্কেত পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়, কোন জিনকে সক্রিয় আর কোন জিনকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। যা অনেকটা চাবি দিয়ে তালা (মলিকিউলার লক) খোলার মতো।

২০১১ সালে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডেনিস ডুবয়েল এবং তাঁর দল একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ ক্ষেত্রে এ রকমই আধ ডজন তালার খোঁজ পেয়েছিলেন, যা কিনা হাত-পায়ের গঠনে সাহায্য করে। এই জিনসেটের নাম ‘৫ডিওএম’। কিন্তু জিনসেট এল কোথা থেকে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ডুবয়েলেরই ছাত্র ক্রিস্টোফার বোল্ট পরীক্ষা করে দেখলেন জেব্রাফিশের শরীরেও এই একই জিনসেট রয়েছে।

আসলে জেব্রাফিশ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর পূর্বপুরুষ এক। প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে যার অস্তিত্ব ছিল। এখানেই খটকা লাগে গবেষকদের। জেব্রাফিশের শরীরে ‘৫ডিওএম’ রয়েছে মানে নিশ্চয়ই সে কিছু না কিছু ঘটাচ্ছে! কিন্তু কী করছে সে? উত্তর পেতে গবেষণা শুরু করেন হিন্টারম্যান ও তাঁর দল। তাঁরা ‘ক্রিসপিয়ার’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জেব্রাফিশের ভ্রূণ থেকে ‘৫ডিওএম’ সরিয়ে দেন। প্রাথমিক ভাবে গবেষকদের ধারণা ছিল, এতে মাছের পাখনা তৈরি হবে না। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না। বরং দেখা গেল, পাখনা মোটের উপর স্বাভাবিক নিয়মেই গজিয়েছে। সমস্যা দেখা গিল মাছের লেজের অংশের গঠনে, যেখানে পায়ুছিদ্র থাকে।

জেব্রাফিশের পর ইঁদুরের ভ্রূণ পরীক্ষা করেও ‘৫ডিওএম’ খুঁজে পান হিন্টারম্যানেরা। একই ভাবে ইঁদুরের ভ্রূণ থেকেও এই জিনসেট বাদ দিয়েছিলেন তাঁরা। তাতে দেখা গেল, মাছের মতো ইঁদুরের শরীরের নিম্নাংশ গঠনেও এই জিনসেটের ভূমিকা রয়েছে। তার সঙ্গে ইঁদুরের আঙুল তৈরিতেও এই জিনসেটের ভূমিকা রয়েছে বলে দেখা দিয়েছে পরীক্ষায়। অর্থাৎ, একই জিনসেট দু’জায়গায় দু’রকম কাজ করছে।

গবেষকদের মতে, অন্তত ৫০ কোটি বছর আগে মাছের শরীরর লেজের অংশের গঠনে কাজে লাগত ‘৫ডিওএম’। পরে (৩৬ কোটি বছর আগে) মাছ যখন ডাঙায় উঠে আসতে শুরু করে, তত দিনে নিজের ভোল পাল্টে ফেলেছে এই জিনসেট। নতুন দায়িত্বও ঘাড়ে চাপে! তা হল, শরীরের নিম্নাংশের পাশাপাশি পায়ের গঠন। পরে সামনের জোড়া পা থেকে হাত।

হার্ভার্ডের জীববিজ্ঞানী এম ব্রেন্ট হকিন্স বলছেন, ‘‘এই প্রক্রিয়া অনেকটা গান তৈরির মতো। নতুন গান লেখবার দরকার নেই। পুরনো গানকে নতুন কায়দায় তৈরি করা। এখন যাকে রিমিক্স বলা হয়। সে রকম হাত-পায়ের গঠনে নতুন জিন তৈরির দরকার পড়েনি। পুরনো জিনই নিজের ভোল পাল্টে মানুষের শরীরে হাত-পা তৈরি করেছে।’’

কিন্তু এখনও একটি বিষয় স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না, ঠিক কী ভাবে ‘৫ডিওএম’-এর কাজ বদলে গেল। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবিদ নীল শুবিন বলেন, ‘‘এই গবেষণা আমাদের অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু এখন বুঝতে হবে, এটা আসলে ঘটল কী ভাবে। এর জন্য আমাদের আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement