রোগের লক্ষণ ধরা পড়ার আগেই রক্তজালিকা জানান দিতে পারে ‘আসন্ন বিপদ’। ছবি: শাটারস্টক।
আপনার যে বয়স বাড়ছে, তা বলে দেবে আপনার চোখ। আপনার হার্টের স্বাস্থ্য কেমন, তা-ও বলে দেবে চোখই। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, চোখের মধ্যে শিরার যে নকশা রয়েছে, তা বলে দেবে বয়সের কথা। হার্টের স্বাস্থ্যের কথা। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর ফলে আগে থেকেই বোঝা যাবে বেশ কিছু রোগের লক্ষণ, কত দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি তা-ও।
কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা করেছে। ওই গবেষণাকারী দলটি জানিয়েছে, চোখের ভিতরে যে রক্তজালিকা রয়েছে, তা-ই জানান দিতে পারে ওই ব্যক্তির হার্টের সমস্যা রয়েছে কি না। তিনি কতটা তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছেন, তা-ও বলে দিতে পারে চোখের রক্তজালিকা। রোগের লক্ষণ ধরা পড়ার আগেই রক্তজালিকা জানান দিতে পারে ‘আসন্ন বিপদ’। এমনটাই দাবি করেছেন ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকারীরা। ‘সায়েন্স অ্যাডভেঞ্চার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণা।
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারি পিজেয়ের জানান, বয়স বাড়লে তার ছাপ কী ভাবে রক্তবাহী নালির উপর পড়ে, তা জানা গিয়েছে গবেষণায়। চোখের রক্তনালির পরিবর্তন অনেক সময়ই শরীরের রক্তনালিতে যে পরিবর্তন হয়ে চলেছে, তাকে ধরিয়ে দেয়। এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে ৭৪ হাজার জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। যাঁদের রক্তের নমুনা নেন, তাঁদের চোখের রেটিনার ছবিও সংগ্রহ করে রাখেন। সেই গবেষণা থেকেই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছোন, যাঁদের রেটিনার নালি তুলনামূলক সরল, তেমন শাখা-প্রশাখা নেই, তাঁদের কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রদাহের সমস্যায় ভোগেন তারা। বিজ্ঞানীদের দাবি, রেটিনায় রক্তনালি কম থাকলে তাঁদের আয়ুও কম হতে পারে। তাঁদের আরও দাবি, এই রেটিনা স্ক্যান করেই ভবিষ্যতে আগেভাগে ধরা যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়ার মতো রোগের লক্ষণ। সেই মতো চিকিৎসা শুরু করতে পারেন চিকিৎসকেরা।
এই রেটিনার রক্তজালিকা যে শরীরের রক্তজালিকার ছবি তুলে ধরছে, তা যতটা সরল মনে করা হচ্ছে, ততটা নয়। বিজ্ঞানীরাই বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে জৈবিক প্রক্রিয়া। এই প্রদাহ, বুড়িয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কিছু প্রোটিনের ভূমিকাও দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই প্রোটিনগুলি হল এমএমপি১২ এবং আইজিজি-এফসি রিসেপটন আইআইবি। বার্ধক্যের কারণে রক্তনালির যে ক্ষতি হয়, তার নেপথ্যে থাকে এই প্রোটিন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রোটিনগুলিকে নিশানা করতে পারে এমন কোনও ওষুধ আবিষ্কার করা হলে তা রক্তনালি দীর্ঘ দিন সুস্থ রাখতে পারবে। এর ফলে হার্টও থাকবে সুস্থ।