Biggest Structure in Space

মহাশূন্যের বৃহত্তম ‘মহাকাঠামো’ খুঁজে পেয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা! বহরে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ

মহাকাশ গবেষণায় খোঁজ মিলল সবচেয়ে বড় ‘মহাকাঠামো’র। মোট পাঁচটি মহাকাঠামো খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রহ্মাণ্ডের প্রায় ১৩ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এই মহাকাঠামোগুলি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:০০
Share:

ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় ‘মহাকাঠামো’ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। —প্রতীকী চিত্র।

তারা আর গ্রহদের মিলে এক-একটি নক্ষত্রমণ্ডল। কোটি কোটি নক্ষত্র মিলে এক একটি ছায়াপথ। সেই ছায়াপথেরাও অনেক সময়েই পুঞ্জীভূত হয়ে থেকে এক-একটি ক্লাস্টারে। এক বা একাধিক ক্লাস্টার নিয়ে আবার রয়েছে এক-একটি মহাকাঠামো (সুপারস্ট্রাকচার)। তেমনই একটি মহাকাঠামোকে বিজ্ঞানীরা আপাতত চিহ্নিত করলেন ব্রহ্মাণ্ডের অন্তর্গত বৃহত্তম কাঠামো বলে।

Advertisement

যা চেহারা, তাতে মহাবিশ্বের ‘দানব’ও বলা যায় একে। প্রায় ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ (এক বছরে আলো যতটা পথ অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে এক আলোকবর্ষ বলে) জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এটি। এই মহাকাঠামোকে দেখতে অনেকটা প্যাঁচালো, দড়ির গিঁটের মতো। কৃত্রিম উপগ্রহের এক্স রে টেলিস্কোপের ছবিতে তেমনটাই ধরা প়ড়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘কিপু’। শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইনকা সভ্যতা থেকে। সেই সময় কোনও তথ্যের রেকর্ড রাখার জন্য ‘কিপু’ নামে গিঁটযুক্ত একটি দড়ি ব্যবহার করা হত। সেই থেকেই মহাজাগতিক কাঠামোর নামকরণ।

নতুন খুঁজে পাওয়া ‘কিপু’ এতটাই বড় যে, তার হিসাব কষতে গিয়ে মাথা গুলিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর নাম না-জানা ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। ‘কিপু’ একা নয়, এমন আরও অনেক মহাকাঠামো ছড়িয়ে রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডে। তবে ‘কিপু’র মতো দানবাকার চেহারা আর কারও নেই। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪২ থেকে ৮১ কোটি আলোকবর্ষের মধ্যে।

Advertisement

যে কোনও মহাজাগতিক কাঠামোর মধ্যেই ছায়াপথ রয়েছে। বা উল্টোটাও বলা যেতে পারে, অনেকগুলি ছায়াপথকে নিয়ে তৈরি হয় একটি মহাজাগতিক কাঠামো। আসলে মাধ্যাকর্ষণের টানে ছায়াপথগুলি একে অপরের কাছাকাছি চলে এসে একটি গুচ্ছ তৈরি করে। ছায়াপথগুলির এমন এক বা একাধিক গুচ্ছকে নিয়ে গঠিত হয় মহাজাগতিক কাঠামো।

‘কিপু’ কত বড়!

আমাদের ছায়াপথের নাম ‘মিল্কি ওয়ে’ বা আকাশগঙ্গা। সূর্যের মতো বহু বহু নক্ষত্রকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছায়াপথটি। আকাশগঙ্গাও একটি কাঠামোর অংশ— নাম ‘ভার্গো’। আকাশগঙ্গার নিকটতম ছায়াপথ ‘অ্যান্ড্রোমেডা’ও এই কাঠামোরই অংশ। ‘ভার্গো’ আবার আরও বড় একটি মহাজাগতিক কাঠামো ‘লানিকিয়া’র অংশ। তবে নতুন খুঁজে পাওয়া ‘কিপু’র কাছে এরা সকলেই যেন তুচ্ছ। ‘লানিকিয়া’র থেকে প্রায় আড়াই গুণ বড় ‘কিপু’। মহাজাগতিক কাঠামো ‘লানিকিয়া’র ব্যাপ্তি ৫২ কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে। সেখানে ‘কিপু’ ছড়িয়ে রয়েছে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে। আকাশগঙ্গার মতো ১৩ হাজারটি ছায়াপথ অনায়াসে ধরে যেতে পারে ‘কিপু’র মধ্যে।

মহাকাঠামো ‘কিপু’র গঠন। ছবি: সংগৃহীত।

হিসাব গুলিয়ে দিল ‘কিপু’

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক হ্যান্‌স বোরিঙ্গারের নেতৃত্বে এক দল বৈজ্ঞানিক সম্প্রতি এই কাঠামোটি খুঁজে পেয়েছেন। জার্মানির রোস্যাট এক্স-রে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাকাশ জরিপ করার সময় এটির সন্ধান মেলে। ‘কিপু’ ছাড়াও ওই জরিপে আরও চারটি মহাকাঠামোর খোঁজ মিলেছে। বাকি চারটিও আকারে বড় হলেও ‘কিপু’র মতো নয়। গবেষণায় সন্ধান পাওয়া পাঁচটি মহাজাগতিক কাঠামোকে ‘সুপার ক্লাস্টার’ বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। বাকিগুলির নাম দেওয়া হয়েছে— ‘সার্পেন্স-কোরোনা বোরিয়ালিস, হারকিউলিস, স্কাল্পটর-পেগাসাস এবং শ্যাপলি। ‘কিপু’র তথ্য বিশ্লেষণ করার আগে পর্যন্ত ‘শ্যাপলি’কেই সবচেয়ে বড় মহাজাগতিক কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করা হত। কিন্তু ‘কিপু’ সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে।

লাল বিন্দুগুলি হল ‘কিপু’। অন্য রঙের বিন্দুগুলি বাকি চারটি কাঠামোকে বোঝাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।

ব্রহ্মাণ্ডের ১৩ শতাংশ জুড়ে পাঁচ ‘দানব’

এই পাঁচটি কাঠামো মিলিয়ে মোট ১৮৫টি ছায়াপথপুঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র ‘কিপু’তেই রয়েছে ৬৮টি ছায়াপথপুঞ্জ। তবে শুধু ছায়াপথই নয়, ‘কিপু’তে রয়েছে প্রচুর ‘ডার্ক ম্যাটার’ও (যা দৃশ্যমান নয়)। এই অংশগুলিতে এখানে আলো বা তড়িদচৌম্বকীয় বিকরণ পৌঁছাতে পারে না। ফলে এর মধ্যে কী রয়েছে তা টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানী জানতে পারেন না। গবেষকদের অনুমান, ব্রহ্মাণ্ডের মোট ছায়াপথপুঞ্জের ৪৫ শতাংশই রয়েছে এই পাঁচটি মহাজাগতিক কাঠামোয়। মহাবিশ্বের প্রায় ১৩ শতাংশ জুড়ে এই পাঁচটি মহাজাগতিক কাঠামো ছড়িয়ে রয়েছে বলে আভাস মিলেছে গবেষণায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement