Greenhouse Gas Emissions

Aged People More Toxic Gas Emitters: ষাটের বালাই! বাতাসে বিষের বোঝা বাড়াচ্ছেন ষাটোর্ধ্বরাই, জানাল ৩২ দেশে চালানো গবেষণা

গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, পরিবেশে বেশি মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য ষাটোর্ধ্বরা আক্ষরিক অর্থেই, ‘ব্যাড গাই’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ১৮:২৬
Share:

বাতাসে বেশি বিষ জমা করছেন ষাটোর্ধ্বরা? -ফাইল ছবি।

ষাট পেরলেই বোঝা?

Advertisement

সংসার সীমান্তে গিয়ে সংসারে হোক না হোক বোঝা তো হচ্ছেনই ষাটোর্ধ্বরা। প্রকৃতি, পরিবেশের কাঁধে।

৬০ বা ৬০ বছরের বেশি বয়সিরা তুলনায় কমবয়সিদের চেয়ে বাতাসে বেশি পরিমাণে পুরে দিচ্ছেন নানা ধরনের বিষ। কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো নানা ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস। যে গ্যাস বিশ্বের দ্রুত হারে উষ্ণায়নের প্রধান কারণ।

Advertisement

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই মন খারাপ করা খবর দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ২৭টি দেশ, ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও নরওয়ের নাগরিকদের উপর এই গবেষণা চালিয়েছেন ‘নরওয়েইজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (এনটিএনইউ)-এর পরিবেশবিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এ। বৃহস্পতিবার।

গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, পরিবেশে বেশি মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য ষাটোর্ধ্বরা আক্ষরিক অর্থেই, ‘ব্যাড গাই’।

গবেষকরা দেখেছেন, ২০০৫ থেকে ২০১৫, এই ১১ বছরে ষাটোর্ধ্বরা বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়িয়েছেন মোট নির্গমনের আট শতাংশ। ২০০৫-এ ষাটোর্ধ্বরা গ্রিনহাউস গ্যাসের মোট নির্গমনের ২৫ শতাংশের জন্য দায়ী ছিলেন। আর ২০১৫ সালে সেই দায়-বৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে ৩৩ শতাংশ।

যার অর্থ, ২০০৫-এ বিশ্বে বাড়তি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী ছিলেন ষাটোর্ধ্বরা। ১১ বছর পর ২০১৫-য় সেই দায় বেড়ে এক-তৃতীয়াংশ হয়েছে।

যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে গবেষকদলের অন্যতম সদস্য এনটিএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এডগার হার্ৎজউইচ বলেছেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় দু’টি প্রজন্মের ষাটোর্ধ্বরাই ধরা পড়েছেন। একটি প্রজন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। অন্যটি তার পরের প্রজন্মের। আমরা দেখেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ষাটোর্ধ্বরা অনেক বেশি সতর্ক, সাবধানী ছিলেন। কী ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করবেন, সে ব্যাপারে। তার পরের প্রজন্মের ষাটোর্ধ্বরা এ ব্যাপারে ততটা সাবধানী, ততটা যত্নবান নন। তাঁরা একেবারেই অন্য রকমের।’’

গবেষকরা দেখেছেন, এখনকার ষাটোর্ধ্বদের জীবনচর্যা যাকে বলে ‘রাজার মতো’! বিশেষ করে, উন্নত দেশগুলিতে তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করেন ঢাউস ঢাউস বাড়ি কিনতে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে। বাড়িতে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম চালাতে তাঁরা অনেক বেশি পরিমাণে শক্তির অপচয় করেন, যা না করলে জ্বালানি-নির্ভর শক্তি উৎপাদনের চাহিদা কমত। ফলে বাতাসে কমত গ্রিনহাউস গ্যাসের বাড়তি বোঝা। তা ছাড়াও তাঁরা এমন সব খাদ্যে অভ্যস্ত, যা খাওয়ার পর নানা ভাবে পরিবেশে বেশি পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সম্ভাবনা বাড়ে। হাঁটার পথও এখন ষাটোর্ধ্বরা পাড়ি দেন গাড়িতেই। এমনকি, মাঠে জগিং করতেও যান গাড়িতে চেপে। যার জ্বালানি বাতাসে আরও গ্রিনহাউস গ্যাস জমা করছে।

গবেষকরা দেখেছেন, ২০০৫ থেকে সময় যতই এগিয়েছে এ ব্যাপারে ততই তরুণতরদের চেয়ে বেশি ‘খরচে’ হয়ে উঠেছেন ষাটোর্ধ্বরা। ৩০ থেকে ৪৪ বছর বা ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সিরা ২০০৫ সালে যে পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী থাকতেন, তার চেয়ে কিছুটা কম পরিমাণে ওই গ্যাস নির্গমন করতেন সেই সময়ের ষাটোর্ধ্বরা। কিন্তু তার পর ২০১৫ সালে দেখা গিয়েছে, ষাটোর্ধ্বরা এ ব্যাপারে বেশি ‘খরচে’ হয়ে পড়েছেন অপেক্ষায় অনেক তরুণ ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের চেয়ে। আর ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে চলেছেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যে ধারাবাহিকতা তাঁরা দেখেছেন, তাতে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, গত সাত বছরে (২০১৫ থেকে ২০২১) এ ব্যাপারে এখনকার ষাটোর্ধ্বরা আরও বেশি খরচে হয়ে পড়েছেন তরুণতর ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সিদের চেয়ে।

জাপানের মতো দেশে যেখানে তরুণ প্রজন্মের চেয়ে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে, উদ্বেগজনক ভাবে সেখানে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের অর্ধেকেরই দায়-ভাগ বর্তেছে ষাটোর্ধ্বদের কাঁধে।

চিকিৎসার উন্নতি, নতুন নতুন কার্যকরী ওষুধের আবিষ্কারে মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়ে চলেছে উত্তরোত্তর। মানু‌ষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি দিন বাঁচছেন। তাই ষাট পেরলেই আর কেউ বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন না। যে ৩২টি দেশে গবেষণা চালানো হয়েছে, সেগুলিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের পূর্বাভাস মতো আগামী ৩০ বছরে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়বে।

বালাই ষাট! জীবনযাত্রার ধরনধারণ না বদলালে পরিবেশের বিপদ তাতে আরও বাড়বে, এমনটাই অশনি সঙ্কেত বিজ্ঞানীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন