‘লাফ দেওয়ার আগে বাঘও পিছিয়ে যায়’

প্রস্তুতিতেই কি কোনও ফাঁক ছিল?, হলিউডি ছবির অর্ধেক খরচে চাঁদ-ছোঁয়ার অভিযান সারতে গিয়েই কি বিপত্তি হল? প্রশ্ন উঠল। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:০২
Share:

কালই ঘোষণা করতে পারে ইসরো। —ফাইল চিত্র।

এইমাত্র তরল অক্সিজেন ভরা শেষ হল। এ বার তরল হাইড্রোজেন। নীল টিক দেওয়া অফিশিয়াল ফেসবুক পাতায় তখনও ঘণ্টায়-ঘণ্টায় ‘বাহুবলী’-র আপডেট দিয়ে চলেছে ইসরো। তাল কাটল রবিবার মাঝরাত পেরিয়ে মাহেন্দ্রক্ষণের ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে। থমকে গেল কাউন্টডাউন। কিন্তু সেই যে শুরু হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘তাত্ত্বিক’ কচকচানি চলল সোমবারও দিনভর। কেউ বললেন, ‘‘সস্তার তিন অবস্থা।’’ কেউ আবার বললেন, ‘‘ভাগ্যিস অভিযান সফল হয়নি। না-হলে তো সারা দিন শুধু ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ঢাক পেটানোই শুনতে হত।’’

Advertisement

বোঝা যায়, এই কটাক্ষের নিশানা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বালাকোটের মতো গত মার্চে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও-র ‘মিশন শক্তি’ নিয়েও কৃতিত্ব জাহির করার অভিযোগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। নির্ধারিত কর্মসূচি মেনেই ডিআরডিও এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে ইসরোর একটি অকেজো উপগ্রহ ধ্বংস করেছিল। কিন্তু ভোটের মুখে মোদী কেন এ নিয়ে বার্তা দেবেন, প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান আপাতত থমকে গেলেও, নেটিজ়েনের একাংশ তাঁদের ‘সুচিন্তিত মতামত’ দিয়েই গেলেন। রেহাই পেল না ইসরোও।

কিন্তু শুধুই কি কটাক্ষ? একেবারেই না, নেটিজেনের বড় অংশ রইল ইসরোর পাশেই। এক জনের কথায়, ‘‘সেমিফাইনালে ভারত যে দিন হারল, আমার ক্লাস ফাইভের ছেলেটা সারারাত মনমরা হয়ে পড়েছিল। রবিবার আবার আমার সঙ্গে রাত জাগছিল। আবার মনখারাপ। বোঝালাম, গোলমাল দেখলে থমকে গিয়ে ফের শুরু করাই ভাল।’’ গোলমালটা আসলে কী, ইসরো গোড়ায় স্পষ্ট করেনি। শুধু বলেছিল, যান্ত্রিক ত্রুটি। পরে জানা গেল, গ্যাস লিক করেছে, অর্থাৎ গোলমালটা লঞ্চ ভেহিকলে।

Advertisement

প্রস্তুতিতেই কি কোনও ফাঁক ছিল?, হলিউডি ছবির অর্ধেক খরচে চাঁদ-ছোঁয়ার অভিযান সারতে গিয়েই কি বিপত্তি হল? প্রশ্ন উঠল।

নাসার প্রাক্তন মিশন ম্যানেজার তথা আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফর্নিয়ার গবেষক অনিতা সেনগুপ্ত কিন্তু বললেন, ‘‘এমন তো হতেই পারে। শেষ মুহূর্তে লঞ্চ ভেহিকল বা উৎক্ষেপণ যানে এমন সমস্যা আকছার দেখা যায়। এখন যত তাড়াতাড়ি ওই সমস্যা মেটানো যায়, ততই ভাল।’’ ২০১২-য় কার্যত অনিতার শেখানো আদব-কায়দাতেই মসৃণ ভাবে মঙ্গলে পা রেখেছিল নাসার ‘কিউরিয়োসিটি’। তাঁর বিশ্বাস, মহাকাশ দৌড়ে ভারতই পরবর্তী মহাশক্তি হিসেবে উঠে আসবে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের এই বিজ্ঞানী-গবেষক রবিবার ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের ‘লাইভ’ বিবৃতি দেবেন বলে বসে ছিলেন মার্কিন এক টিভি চ্যানেলে। অভিযান স্থগিত, কিন্তু অনিতা হতাশ নন। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যঙ্গ-কটাক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ওদের কথায় কান না দিলেই হল। অভিযান বাতিল তো হয়নি! এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের।’’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও এক ভারতবাসীর মন্তব্য, ‘‘এ আর এমন কী? বড় লাফ দেওয়ার আগে বাঘও তো দু’পা পিছিয়ে যায়।’’

চন্দ্রাভিযানের আগে ইসরো-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন অভিনেতা অক্ষয় কুমার। এ প্রসঙ্গেও নাগরিকত্বের খোঁচা সইতে হল তাঁকে। এক জন লিখলেন, ‘‘দাদা, আপনি বরং কানাডার কথা ভাবুন। আমরা আমাদের ভাল-মন্দ ঠিক বুঝে নেব।’’ ১৫ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘মিশন মঙ্গল’। চন্দ্রাভিযান নিয়ে অক্ষয়ের শুভেচ্ছা-টুইট তারই প্রচার কৌশল নয় তো, উঠল সেই প্রশ্নও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন