গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরা কোথা থেকে এসেছিলেন? তারা কোথায় বসবাস করতেন? এই নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা ছিল, তাতে কিছুটা ধাক্কা দিলেন জিন নিয়ে গবেষণা করা এক দল বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, আজকের ইংরেজদের কোনও কোনও পূর্বপুরুষ এসেছিলেন পশ্চিম আফ্রিকা থেকেও। জিন পরীক্ষা করে সেই সংযোগই খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ইংরেজদের পূর্ব পুরুষদের কেউ কেউ পশ্চিম আফ্রিকার ছিলেন। ইংল্যান্ডের কেন্ট এবং ডরসেট থেকে দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। সেই কঙ্কালের জিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই দুই ব্যক্তির পূর্বপুরুষদের পশ্চিম আফ্রিকার মানুষজনের সংযোগ ছিল। তার পরেই প্রশ্নের মুখে বেশ কিছু পুরনো তত্ত্ব। ইংল্যান্ডে অ্যাংলো স্যাক্সন সমাজকে নতুন আলোকে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরা কোথা থেকে এসেছিলেন, সেই নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন তাঁরা।
কেন্টের আপডাউন সমাধিস্থলে এক কিশোরীর কঙ্কাল উদ্ধার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ডরসেটের ওয়ার্থ মাট্রাভার্স থেকে আর এক যুবকের কঙ্কালও পরীক্ষা করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই দুই কঙ্কাল যাঁদের ছিল, তাঁদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। সে সময় ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ। রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই দুই কঙ্কাল যাঁদের, তাঁদের পূর্বপুরুষ পশ্চিম আফ্রিকার। ওই দু’টি কঙ্কালের জিন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, ডিএনএ-র ২০ থেকে ৪০ শতাংশ আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের মানুষের থেকে এসেছে। ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডানকান সেয়ার নিজের গবেষণায় লিখেছেন, এই দু’টি কঙ্কাল যাঁদের, তাঁদের উভয়েরই পূর্বপুরুষ ‘জিনগত এবং ভৌগোলিক ভাবে মিশ্র বংশোদ্ভূত’। অর্থাৎ ইংরেজরা যখন আফ্রিকা বা এশিয়ার দেশগুলিতে উপনিবেশ গড়তে শুরু করেনি, তারও আগে ব্রিটেনে এসেছিল আফ্রিকানদের উত্তরসূরিরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, তার স্পষ্ট প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন।
এই তত্ত্ব উঠে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন এই কঙ্কালদ্বয়ের পূর্বপুরুষেরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আফ্রিকার মানুষজনের সঙ্গে ব্রিটিশদের একাংশের শুধু জিনগত সংযোগই নেই, দুই মহাদেশের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতিরও আদানপ্রদান হত। কেন্ট এবং ডরসেটের যে সমাধি থেকে ওই দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানে ছিল বেশ কিছু শিল্পসামগ্রী। কিশোরীর সমাধি থেকে মিলেছিল একটি পাত্র। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেগুলি আসলে আফ্রিকার। তার পরেই জিন এবং শিল্পসামগ্রী, দুইয়ের আদানপ্রদানের প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মান বিজ্ঞানী জশচা গ্রেটজ়িঙ্গারের মতে, যে কিশোরীর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তার কোনও পূর্বপুরুষ আফ্রিকান নন, এমন কাউকে বিয়ে করেছিলেন। তার জেরেই কেন্টের ইংলিশ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত হয়েছিল।
এতদিন বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করতেন, মধ্যযুগের মানুষজন ছিলেন সমজাতির (হোমোজিনাস)। তাঁদের মধ্যে তখনও ভিন্জাতির মিশ্রণ ঘটেনি। প্রচলিত ধারণা ছিল, ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরাও আদতে ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। ইংরেজদের পূর্বপুরুষের মধ্যে রয়েছে অ্যাংলো স্যাক্সন, কেল্টিক, জার্মানিক উপজাতি। কিন্তু নতুন এই তত্ত্ব পুরনো সেই তত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। জিন নিয়ে গবেষণার পরে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মধ্যযুগ ইংল্যান্ডের মানুষ ছিল মিশ্র বংশোদ্ভূত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে দুই কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তার জিনের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে আফ্রিকার ইয়োরুবা, মেন্ডে, মান্ডেকা, এসান প্রজাতির মানুষজনের সঙ্গে। গ্রেটজ়িঙ্গারের মতে, ষষ্ঠ শতাব্দীতে যখন বাইজ়ান্টাইন উত্তর আফ্রিকা দখল করে, তখন সেখান থেকে অভিবাসন হয়েছিল ইংল্যান্ডে। তাদেরই উত্তরসূরি হল ওই দুই কঙ্কাল, যাঁদের মৃত্যু হয় সপ্তদশ শতকে।