তিনদিনে হাতির বলি তিন

তিনদিনের মধ্যে হাতির হানায় ফের মৃত্যু হল পাত্রসায়রে। এ বার শনিবার ভোর ও বিকেলের মধ্যে দু’জনকে শুঁড়ে তুলে মারল দাঁতাল। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৫০
Share:

বিষ্ণুপুরে ময়নাতদন্তের পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শ্যামসুন্দরের দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

তিনদিনের মধ্যে হাতির হানায় ফের মৃত্যু হল পাত্রসায়রে। এ বার শনিবার ভোর ও বিকেলের মধ্যে দু’জনকে শুঁড়ে তুলে মারল দাঁতাল। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ভোরে পাত্রসায়রের হামিরপুর গ্রামে প্রাতঃকৃত্যে যাওয়া এক প্রৌঢ় হাতির হানায় মারা যান। মৃতের নাম শ্যামসুন্দর বারি (৫২)। বিকেলে সাইকেলে বাড়ি থেকে ফেরার পথে পাত্রসায়র থানার কামারবেড়া গ্রামে অসিত বাগদি (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে তাড়া করে হাতির ওই দলের একটি দাঁতাল। তাঁকে ধরে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মেরে ফেলে হাতিটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতির আক্রমণে মারা যান পাত্রসায়রের চাঁপাবনি গ্রামে এক ব্যক্তি। পরপর হাতির হানায় মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। অবিলম্বে হাতির দলকে এলাকা থেকে সরানোর দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পাত্রসায়রের রেঞ্জ আধিকারিক হরেন্দ্রনাথ বাউরি বলেন, “বাঁকুড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করা রেসিডেন্ট হাতিদের মধ্যে ৮টি হাতির একটি দল বৃহস্পতিবার ভোরে হামিরপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে পড়েছিল। ওইদিন দুপুরে চাঁপাবনি গ্রামের একজনকে রাস্তায় পেয়ে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারে এক দাঁতাল। এ দিন ফের ওই দল আরও দু’জনকে মারে। তাঁদের পরিবারকে সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

Advertisement

রেঞ্জ আধিকারিক জানান, হাতির ওই দলে মাসখানেকের এক শাবক ও দাঁতাল-সহ ৮টি হাতি রয়েছে। জঙ্গল থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষ তাদের দেখতে ভিড় করছেন। অধিকাংশ গ্রামেই হাতিদের সরানোর সময় বাধা আসছে। হাতিদের উত্যক্তও করা হচ্ছে। এরফলে হাতিরা বিরক্ত হচ্ছে। তাতে সরিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত হাতির দলের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে বনকর্মীদের বলা হয়েছে। পাত্রসায়র ব্লক জুড়ে এলাকার মানুষকেও হাতিদের গতিবিধি সম্পর্কে সর্তক থাকতে বলা হচ্ছে। এ দিন সকাল থেকেই এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিদের উত্যক্ত না করার জন্য গ্রামবাসীদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে পাত্রসায়র রেঞ্জের বন বীরসিংহ, মরাচৈতার জঙ্গল থেকে হাতির ওই দলটি ময়রাপুকুর, রোলনগর হয়ে নারায়ণপুর অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। রায়খাঁ, ধারিমপুর, মুড়োপাড়া এলাকায় জমিতে দিনভর দাপিয়ে বেড়ায়। হাতির দলটিকে দেখে গ্রামবাসীরা তাদের পিছু নেয়। গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে হাতির দল পালাতে শুরু করে। সেই সময় চাঁপাবনি গ্রামের হারু লোহার নামে এক ব্যক্তিকে রাস্তায় ধরে মেরে ফেলে এক দাঁতাল।

হামিরপুর গ্রামের বাসিন্দা উত্তম বাগদি বলেন, “এ দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ শ্যামসুন্দরবাবু শালি নদীতে অন্যান্য দিনের মতো প্রাতঃকৃত্য করতে গিয়েছিলেন। কুয়াশার মধ্যে হাতির দল সেখানে হাজির হয়েছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি দাঁতাল তাঁকে ধরে ফেলে আছড়ে মারে। সেই সময় গ্রামের কয়েকজন হাতির দলটিকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। কিন্তু তখন কারও কিছু করার ছিল না।” মৃতের এক দাদা বিশ্বনাথ বারির ক্ষোভ, “কয়েকদিন ধরেই হাতির দল এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। হাতিদের তাড়ানোর জন্য বন দফতরের কাছে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। তাতে কাজ হয়নি। হাতির দল ঘুরে ফিরে আমাদের এলাকায় এসে ফসলহানির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটাচ্ছে। পাশের গ্রামের একজনকে মারল। আমার ভাইয়ের প্রাণ নিল। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হাতির দলটি পরে ধগড়িয়া, ময়রাপুকুর হয়ে মরাচৈতার জঙ্গলের দিকে চলে যায়। এ দিন দুপুর পর্যন্ত সেখানেই ছিল হাতির দল। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ শাজাহান মিদ্যা বলেন, “অসিত বাগদি বিকেলে সাইকেলে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হাতির ওই দলটি যে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে তা কেউ জানত না। রাস্তায় দাঁতালটিকে দেখে সাইকেল ফেলে প্রাণপনে দৌড় লাগান তিনি। কিন্তু দাঁতালটি অনেকটা পথ পিছু নিয়ে তাঁকে আছড়ে মারে।’’

পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাতির দল যাতে লোকালয়ে ঢুকে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বন দফতরকে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষকে অত্যন্ত সজাগ থাকার পাশাপাশি হাতিদের পিছু পিছু ধাওয়া করে বিরক্ত না করতে আবেদন জানানো হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement