মাটি কেটে বিপন্ন মহানন্দা পাড়ের গ্রাম

মহানন্দার ভাঙনে চাষের জমি থেকে শুরু করে অনেকেরই ঘরদোর আগেই তলিয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় কমবেশি ভাঙন চললেও কাজ হয় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

এ ভাবেই তোলা হচ্ছে বালি। ছবি: বাপি মজুমদার।

মহানন্দার ভাঙনে চাষের জমি থেকে শুরু করে অনেকেরই ঘরদোর আগেই তলিয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় কমবেশি ভাঙন চললেও কাজ হয় না। এই পরিস্থিতিতে নদীর জল কমতেই অবৈধ ভাবে মহানন্দা পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নদীর পাড় কেটে দিনের পর দিন মাটি কেটে নেওয়ায় মালদহের চাঁচলের জগন্নাথপুর, রামদেবপুর, নয়নপুর, ভেবা-কালীগঞ্জ-সহ কয়েকটি এলাকা বিপন্ন হয়ে পড়লেও প্রশাসন বা সেচ দফতরের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পাড়ের মাটি কেটে তা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই একাংশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এতে শুধু যে বাসিন্দারাই ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন তাই নয়। অবৈধ ভাবে মাটির পাশাপাশি বালি তোলায় রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে। বছর পাঁচেক আগে প্রশাসনের তরফে অভিযান চালিয়ে ওই এলাকায় পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নজরদারির অভাবে বছর ঘুরতেই ফের তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দারা বাধা দিলে উল্টে তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা।

চাঁচলের মহকুমাশাসক জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এ ভাবে নদীর পাড়ের মাটি কাটা যায় না। বিষয়টি সেচ দফতরের দেখার কথা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে খুব শীঘ্রই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাটি, বালি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

মহানন্দা নদীর পাড় বরাবর ভগবানপুর পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর থেকে ভেবা-কালীগঞ্জ পর্য়ন্ত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে।

নদীর ওপারে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার এলাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হঠাৎত কখনও অভিযান চালানো হলে কয়েক দিন মাটি কাটা বন্ধ থাকে। কিন্তু নিয়মিত নজরদারি না থাকায় মাটি ও বালি পাচারকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইটভাটার পাশাপাশি রাস্তার কাজ, বাড়ি তৈরি ও গর্ত-জলাশয় ভরাট করার কাজে ঠিকাদারেরা মাটি কিনে নেওয়ায় নদী পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। রীতি মতো জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে তা পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। মাটি কাটা-সহ নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালিও। এতে ভাঙনের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারি রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে।

সেচ দফতরের মালদহের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা এমবেঙ্কমেন্ট) সুমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওপারে ইটাহার-সহ বিহারের কিছু বাসিন্দাও মাটি কেটে তা বিক্রি করছেন। কিছু দিন আগে অভিযান চালিয়ে কয়েক জনকে ধরে জরিমানাও করা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

চাঁচল মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে মাটি কাটার পাশাপাশি বালি তোলা হচ্ছে। তবে নদীর যেখানে মাটি ও বালি কাটা হচ্ছে তার কিছু অংশ উত্তর দিনাজপুরের মধ্যে পড়ে।’’

বাসিন্দারা জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে ওই এলাকায় নদী ভাঙন চলছে। গতিপথ পাল্টে নদী এগিয়ে আসায় ভাঙনে অনেকেই ঘরদোর হারিয়ে বাঁধের পশ্চিমপাড়ে খাস জমিতে বসবাস করছেন। যাঁদের ঘরদোর এখনও রয়েছে তারাও আতঙ্কে ভুগছেন। এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম, লাকি বিবিরা বলেন, ‘‘নদীর কোন অংশ কোন জেলায় পড়ে সেটা বড় কথা নয়। মহানন্দা পাড়ের মাটি কাটায় এপারের গ্রামগুলিই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সাত বছর আগে ঘরদোর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পর বাধের পাড়ে খাস জমিতে বসবাস করছি। এ ভাবে চললে ভাঙনে সেই আশ্রয়টুকুও হারাতে হবে।’’

ভগবানপুর পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান গেনু মহালদার বলেন, ‘‘ওই কাজ বন্ধ করার ক্ষমতা পঞ্চায়েতের নেই। যা করার প্রশাসনকেই করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন