মগজ-ধাঁধায় আলো ফেলেই নোবেল ত্রয়ীর

স্থান-কাল-পাত্র-আবহাওয়া, সব খবরই এখন জিপিএস ট্র্যাকারের সাহায্যে হাতের মুঠোয়। সেই ১৯৭৩ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বানিয়ে ফেলেছে মানুষ। কিন্তু নিজেদের মস্তিষ্কে ‘জিপিএস’ ঠিক কী ভাবে কাজ করে, সে রহস্য পুরোপুরি ভেদ হতে সময় লেগেছে আরও বছর তিরিশ। মস্তিষ্কের এই জটিল ধাঁধা ভেদ করার জন্যই এ বছর মেডিসিনে নোবেল পেলেন ব্রিটিশ-মার্কিন গবেষক জন ও’কিফ ও নরওয়ের বিজ্ঞানী দম্পতি মে-ব্রিট মোসের ও এডওয়ার্ড মোসের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২০
Share:

মে-ব্রিট মোসের, জন ও’কিফ এবং এডওয়ার্ড মোসের

স্থান-কাল-পাত্র-আবহাওয়া, সব খবরই এখন জিপিএস ট্র্যাকারের সাহায্যে হাতের মুঠোয়। সেই ১৯৭৩ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বানিয়ে ফেলেছে মানুষ। কিন্তু নিজেদের মস্তিষ্কে ‘জিপিএস’ ঠিক কী ভাবে কাজ করে, সে রহস্য পুরোপুরি ভেদ হতে সময় লেগেছে আরও বছর তিরিশ। মস্তিষ্কের এই জটিল ধাঁধা ভেদ করার জন্যই এ বছর মেডিসিনে নোবেল পেলেন ব্রিটিশ-মার্কিন গবেষক জন ও’কিফ ও নরওয়ের বিজ্ঞানী দম্পতি মে-ব্রিট মোসের ও এডওয়ার্ড মোসের।

Advertisement

কোনও ব্যক্তি কোথায় রয়েছেন, কোথায় যেতে চান, তিনি কী করছেন, সারাদিনের খুঁটিনাটি যাবতীয় সব কিছু মানুষ কী ভাবে মনে রাখে, তারই জবাব দিয়েছেন ত্রয়ী। ভবিষ্যতে যা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের চিকিৎসায় প্রভূত সাহায্য করবে, আশা বিজ্ঞানীদের।

মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে দু’টি হিপ্পোক্যাম্পাস থাকে। স্মৃতিকে বেঁধে রাখার কাজটি করে মাথার এই অংশটিই। আর ‘এনটোরিনাল কর্টেক্স’ নামে আর একটি অংশ হিপ্পোক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এরা ঠিক কী ভাবে এক সঙ্গে কাজ করে, সেটাই ব্যাখ্যা করেছেন ও’কিফ এবং মোসের দম্পতি।

Advertisement

রহস্য ভেদ অবশ্য হয়েছে ধীরে ধীরে। প্রথম ধাপটি পেরোন জন ও’কিফ, সেই ১৯৭১ সালে। হিপ্পোক্যাম্পাসের অন্দরে ‘প্লেস সেলস’ নামে বেশ কিছু পিরামিড আকৃতির স্নায়ু কোষের সন্ধান পান তিনি। ইঁদুরের উপর গবেষণা করার সময় তিনি দেখেন, ঘরের নির্দিষ্ট কোনও একটি জায়গায় প্রাণীটিকে নিয়ে যাওয়া হলে, একটি স্নায়ু কোষ সক্রিয় হয়ে উঠছে। আবার তাকে অন্য একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হলে আর একটি কোষ সক্রিয় হয়। ও’কিফ পরীক্ষা করে দেখেন, ওই কোষগুলির এক-একটি প্রাণীটিকে তার আশপাশের প্রতিটি জায়গা আলাদা আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। একই সঙ্গে তার মাথার মধ্যে ফুটিয়ে তোলে পারিপার্শ্বিকের মানচিত্র।

এর প্রায় চৌত্রিশ বছর পরে ২০০৫ সালে নরওয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মে ব্রিট ও এডওয়ার্ড মোসের অন্য একটি তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা মস্তিষ্কে ‘গ্রিড সেল’ নামে এক ধরনের স্নায়ু কোষের সন্ধান পান। দুই বিজ্ঞানী দাবি করেন, এই গ্রিড কোষের সাহায্যেই সম্মিলিত ভাবে থাকা কতগুলো কোষ একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে ত্রিমাত্রিক দুনিয়ায় প্রাণীটির অবস্থান চিনিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তার মাথার মধ্যে গেঁথে দেয় ওই স্থানের সমস্ত স্মৃতি। বিজ্ঞানীদের কথায়, “বিষয়টা অনেকটা এ রকম আমি এক দিন বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। পরে নিজেই পথ চিনে পৌঁছে গেলাম সেই ঠিকানায়। এই মনে রাখার কাজটাই করছে গ্রিড সেল।”

ও’কিফ এবং মোসের, দুই পক্ষের তত্ত্বকেই সম্মান জানিয়ে এ দিন নোবেল অ্যাসেম্বলি-র তরফে ঘোষণা করা হয়, “কী ভাবে মানুষের স্মৃতি তৈরি হয়, পুরনো কথা ছবির মতো ভেসে ওঠে মাথায় আর কী ভাবেই বা তা হারিয়ে যায়, এই তিন বিজ্ঞানীর গবেষণা এক দিন সে রহস্যও ভেদ করে দেখাবে।” তা ছাড়া, মানুষ কী ভাবে নিজেকে চেনে, কোনও কিছু নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সময়, তার মস্তিষ্ক ঠিক কী ভাবে কাজ করে, সেই গবেষণাতেও নতুন দিশা দেখাবে ও’কিফ-মোসেরদের আবিষ্কার।

কিন্তু এমন একটা সম্মান যে তাঁর অপেক্ষায় রয়েছে, ভাবতেও পারেননি মে-ব্রিট। রোজকার মতো এ দিনও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎই আসে সুখবরটা। মে-ব্রিটের এক সহকর্মী বললেন, “এক মিনিটের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এ বারের নোবেলজয়ী তিনিই। তার পর আনন্দে কেঁদে ফেলেন।” তবে স্বামীকে খবরটা দিতে পারেননি। যুগ্মবিজয়ী এডওয়ার্ড যে তখন বিমানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন