শিলিগুড়ি শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
শহরবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হওয়ার পরে তা ফের চালানোর চেষ্টা রুখতে কেন পুরসভা সক্রিয় হচ্ছে না,সেই প্রশ্নে ক্ষোভ বাড়ছে শিলিগুড়িতে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা এখন প্রশাসক বোর্ডের আওতায় থাকলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মাঝেমধ্যেই পুর ভবনে যাচ্ছেন। নিয়মিত পুর পরিষেবার হাল ফেরাতে রাস্তায় নামছেন। অথচ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যাতে ফের শহরে চালু না হয়, সে জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রচারে নামেননি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের অনেকের। শহরবাসীদের অনেকেরই বক্তব্য, প্রায় রোজই রাস্তায় নেমে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ শিলিগুড়ির প্রচার করলেও, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন না তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য বুধবারই দাবি করেছেন, শীঘ্রই নতুন করে নির্দেশিকা জারি করে শহরে সব রকম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে।
এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, নতুন নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত কেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার হবে? যেখানে সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন ট্রাইবুন্যাল জানিয়ে দিয়েছে, তারা সব রকম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিপক্ষে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের কাছেও গ্রিন ট্রাইবুনাল জানিয়ে দিয়েছে, সামাজিক কর্তব্য হিসেবেই ‘ইকো সেন্সিটিভ জোন’-এ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যাতে ব্যবহার না হয়, সেটা ওই ব্যবসায়ীদের নিশ্চিত করতে হবে। অথচ শিলিগুড়ির প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতাদের একাংশ ঘটা করে প্রচার করছেন, গ্রিন ট্রাইবুনাল আগের নির্দেশিকা স্থগিত করে দেওয়ায় নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করায় বাধা নেই। বাস্তবে, গ্রিন ট্রাইবুনাল এমন কোনও মন্তব্য করেনি বলে দাবি করেছেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) সুজয় ঘটক। তিনি এদিন পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছেন। সুজয়বাবু বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে দেশ-বিদেশে শিলিগুড়ির সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। পুরসভার তরফে দ্রুত শহরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হোক, শহরে সব রকম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। আগামী দিনেও তা যাতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকে সে জন্য নয়া নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে।” পুর কমিশনারও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে পুরসভার কমিশনারের
কাছে বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চ। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ির বাসিন্দারা অবশ্য প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের ধারাবাহিকতা রাখতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এদিনই বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি পুরসভার কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সমিতির তরফে উপস্থিত ছিলেন শান্তা মিত্র, প্রহ্লাদ বনিক, কৌশিক কুশারি প্রমুখ। কমিটির সম্পাদক রতন বণিক বলেন, “গ্রিন ট্রাইবুনাল পরিবেশের বিপক্ষে রায় দেবে তা কখনও হতে পারে না। কাজেই শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালুর জন্য একটি গোষ্ঠী যেভাবে নির্দেশিকার অপব্যাখা করছেন সেটা কাঙ্খিত নয়। আমরা শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফিরুক তা চাই না। কমিশনারকে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেছি। দেখা যাক কী হয়।” এদিকে, হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন সহ একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংস্থা নাগরিক কনভেনশনের ডাক দিয়েছে। আগামী ১৯ অক্টোবর শিলিগুড়িতে ওই কনভেনশন হবে।