হাতি আটকাতে পৌনে তিন কোটি টাকা ঢালছে বন বিভাগ

হাতির হানায় মৃতের তালিকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে বাঁকুড়া জেলায়। গত তিন দিনে তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন কেবল পাত্রসায়র ব্লকেই! এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পাত্রসায়রের বিট অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০১:১০
Share:

পাত্রসায়রের হাতিদের মেদিনীপুরে পাঠানোর পথে বাঁকাদহের বারিশোল গ্রামে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

হাতির হানায় মৃতের তালিকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে বাঁকুড়া জেলায়। গত তিন দিনে তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন কেবল পাত্রসায়র ব্লকেই! এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পাত্রসায়রের বিট অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসী। আবার বেলিয়াতোড়ে কনভেনশন করে হাতিমুক্ত জেলা গড়তে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার ডাক দিল হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষে সংগ্রামী গণমঞ্চ। অন্যদিকে, এ দিনই বিষ্ণুপুর সফরে এসে হাতি সমস্যা দ্রুত মেটাতে নানা সরকারি পদক্ষেপের কথা বলে গেলেন মুখ্যবনপাল (কেন্দ্রীয়) ভি কে যাদব।

Advertisement

বন দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে ১৭ ও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বনবিভাগে তিন জন হাতির হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। জেলার জঙ্গলে বিক্ষিপ্ত ভাবে এখনও বেশ কয়েকটি হাতির দল অবস্থান করছে। প্রায়ই গ্রামে ঢুকে তারা ক্ষয়ক্ষতি করছে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধেছে জঙ্গল ঘেঁষা গ্রামগুলিতে। এ দিন বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত ডিভিশনের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যবনপাল বলেন, “পাত্রসায়রে যে হাতির দলটি অবস্থান করছিল তাদের পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে বাঁকুড়ার দিকে দলটি ফিরে না আসে সে দিকে আমরা নজর রাখব।” তবে সাধারণ মানুষ চাইছেন হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় ১০০ কিলোমিটার করে জঙ্গল এলাকা বৈদ্যুতিন তারের বেড়া দিয়ে ও খাল কেটে হাতিকে জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, এই প্রকল্পের জন্য বাঁকুড়া জেলায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পুরুলিয়ার জেলাতেও এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তার জন্য ৬৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যেই ৩৫ কিলোমিটার জঙ্গল এলাকায় বৈদ্যুতিন তারের বেড়া দেওয়া ও গর্ত খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েছে বলে তাঁর দাবি। এ ছাড়াও জেলার জঙ্গলে হাতির গতিবিধির উপরে নজর রাখতে বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার গড়ার কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ময়ূরঝর্না প্রকল্পের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বন দফতরের বিভিন্ন রেঞ্জের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে হাতি খেদানোর সময়ে এই সমন্বয়ের অভাবে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি যে নজরে রয়েছে মুখ্যবনপালের কথাতেই সেই আভাস মিলেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “হাতি খেদানোর সময় যাতে প্রতিটি রেঞ্জ একে অপরের সঙ্গে সংযোগ রেখে কাজ করে আমি সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি।”

Advertisement

সদ্য পাত্রসায়রে হাতির হানায় বলি হয়েছেন তিনজন গ্রামবাসী। এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ এখনও কমেনি। এ দিন সকালে পাত্রসায়র রেঞ্জের কুশদ্বীপ বিট অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো গ্রামবাসী। আন্দোলনকারীদের মধ্যে মহম্মদ ইয়াসিন, সেখ ইউসুফ মণ্ডল, জীবন দুলেরা বলেন, “হাতির হামলা একটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বিষ্ণুপুর, জয়পুর, সোনামুখীর রেঞ্জ থেকে আমাদের এলাকার জঙ্গলে হাতি ঢোকে। ফি বছরই হাতির হানায় ফসলহানি হয়ে থাকে।। এ বার তিনটি তরতাজা প্রাণ চলে গেল!” তাঁদের ক্ষোভ, বন দফতর যদি পরিকল্পনা মাফিক হাতিগুলিকে খেদানোর কাজ করত তাহলে হয়ত এই ঘটনা এড়ানো যেত।” এ দিন নানা দাবিতে বিট অফিসে স্মারকলিপি দিতে আসেন গ্রামবাসী। কিন্তু বিট অফিসে কারও দেখা না পেয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় তাঁদের মধ্যে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিট অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।

অন্য দিকে, এ দিনই বেলিয়াতোড় হাইস্কুলে এক কনভেনশনের আয়োজন করে হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষে সংগ্রামী গণমঞ্চ। কনভেনশনে হাতি মুক্ত বাঁকুড়া গড়ার ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি হাতি উপদ্রুত জেলার প্রতিটি রেঞ্জে লাগাতার বিক্ষোভ, অবস্থানের মতো কর্মসূচি নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংগঠনের তরফে। সংগঠনের সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোনও ঘটনা ঘটার পরেই বন দফতরের আধিকারিকেরা নানা আশ্বাস দেন। গ্রামে যাতে হাতি না ঢোকে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু আদপে কিছুই হয় না।” তাঁর সংযোজন, বিক্ষিপ্ত ভাবে অনেক আন্দোলন হয়েছে। এ বার লাগাতার আন্দোলনই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই হাতি মুক্ত বাঁকুড়া জেলা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement