হাতি তাড়ালেন বাসিন্দারা, বনকর্মীরা না আসায় ক্ষোভ

চার দিন ধরে তাণ্ডব চালানোর পরে গ্রামবাসীর তাড়ার দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়ার দিকে ফিরল হাতির দল। এই ক’দিনে খেতের ফসল, বাড়ির জিনিসপত্র তছনছের পাশাপাশি এক অস্থায়ী বনকর্মীকেও আছড়ে মেরেছে এই হাতির দলটি। রানিগঞ্জের নুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে বন দফতরের কেউ আর গ্রামে আসেননি। ফোন করলেও ধরেননি। তাই তাঁরাই ঝুঁকি নিয়ে হাতি তাড়াতে বাধ্য হলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১২
Share:

দামোদরের পার করানো হচ্ছে হাতিদের। নিজস্ব চিত্র।

চার দিন ধরে তাণ্ডব চালানোর পরে গ্রামবাসীর তাড়ার দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়ার দিকে ফিরল হাতির দল। এই ক’দিনে খেতের ফসল, বাড়ির জিনিসপত্র তছনছের পাশাপাশি এক অস্থায়ী বনকর্মীকেও আছড়ে মেরেছে এই হাতির দলটি। রানিগঞ্জের নুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে বন দফতরের কেউ আর গ্রামে আসেননি। ফোন করলেও ধরেননি। তাই তাঁরাই ঝুঁকি নিয়ে হাতি তাড়াতে বাধ্য হলেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার বাঁকুড়া থেকে দামোদর পেরিয়ে ২৫টি হাতির একটি দল ঢুকেছিল নুপুর গ্রামে। এক জন রেঞ্জ অফিসারের নেতৃত্বে চার অস্থায়ী বনকর্মী হাতি তাড়ানোর কাজ শুরু করেন। পর দিন বিকেলে এক বনকর্মীর মৃত্যু হয় হাতির হামলায়। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, তার পর থেকে বন দফতরের কেউ আর আসেননি। তিন দিন ধরে বারবার ফোন করা হলেও দফতরের কেউ তা ধরেননি। এ দিক, এর মধ্যে হাতিগুলি গ্রাম তছনছ করতে থাকে। বহু জমির সব্জি নষ্ট করেছে বলেও এলাকার মানুষজনের অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতির পাল নুপুরের জঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে এক বার কুমারবাজারে ঢোকে। তার পরে নুপুর আর মদনপুরের সীমানায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। গ্রামের চাষি বিনোদ পালের কথায়, “এই দু’টি গ্রামে যে সব্জি চাষ হয় তা প্রতি দিন লরিতে করে রানিগঞ্জ, অন্ডাল, আসানসোল, এমনকী বাঁকুড়ার ছাতনা পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়। এখন ভাল লাউ, ঝিঙে, ঢেঁড়শ, কুমড়ো, তরমুজের ভাল ফলন হয়েছিল। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল।” শরৎ গড়াই নামে আর এক জনের ক্ষোভ, “এ নিয়ে পরপর চার বছর জমির ফসল নষ্ট করল হাতি। গত বছর হাতির দল খেতে জল সরবরাহের পাম্পটি ভেঙেচুরে দিয়ে যায়। সেটি মেরামতি করতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। সে বার কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। এ বার বন দফতর হাতি তাড়াতেও গ্রামবাসীদের পাশে থাকল না।” নুপুরের বাসিন্দা মাগারাম খাঁ অভিযোগ করেন, তাঁদের খেতের সব্জির দফারফা করেছে হাতির দল। তাঁরা প্রশাসনের নানা স্তরে ফোন করে আবেদন জানালেও বনকর্মীরা আসেননি। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারেও তাই কোনও মহল থেকে আশ্বাস কিছু মেলেনি।

Advertisement

শেষে নিজেরাই হাতি তাড়ানোর ব্যাপারে গ্রামবাসীরা জোটবদ্ধ হন শনিবার। মশাল জেলে হাতি তাড়ানো হবে বলে ঠিক করা হয়। সেই মতো রবিবার দুপুর থেকে তাঁরা হাতির দলকে দামোদরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ২২টি হাতিকে নদের ওপারে পাঠাতে পেরেছেন বলে জানান তাঁরা। তবে তার পরেও তাঁদের শঙ্কা, হাতিরা ফিরে এলে আবার বিপদে পড়বেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে প্রথম দামোদর পেরিয়ে হাতি ঢোকে অন্ডালে। সে বছর একটি দাঁতালের হানায় পরপর অন্ডালের শ্রীরামপুরে এক জন, দীর্ঘনালা গ্রামের দু’জন এবং পিঞ্জারপোলের কাছে এক জন মারা যান। অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য কাঞ্চন মিত্র জানান, সে বার রাজ্য সরকার মৃতের পরিবারের হাতে ৩০ হাজার টাকা করে তুলে দিয়েছিল। এ বার এলাকাবাসীকে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে ক্ষতির তালিকা নিয়ে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক কৃষক সমিতির সভাপতি তথা মদনপুরের বাসিন্দা ঘনশ্যাম দেওয়াসি জানান, ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা জমা দেবেন।

চেষ্টা করেও বন দফতরের কোনও কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “প্রশিক্ষিত লোকজন দিয়ে হাতি তাড়ানো উচিত। বিষয়টি নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন