কেকের দুনিয়ায় ব্ল্যাক ফরেস্ট বহু পুরনো নাম। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনই সুস্বাদু। এই কেকের জন্মস্থান জার্মানি। এটি আসলে স্পঞ্জ কেকের স্যান্ডুইচ, যার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নরম দুধ সাদা ক্রিম। চকোলেট আর চেরিতে সাজানো এই ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক সকলের নজর কাড়বে নিঃসন্দেহে। তাই স্পেশ্যাল কারোর জন্মদিন হোক বা বাড়িতে কোনও ছোট্ট পার্টি, হাতে একটু সময় নিয়ে বানিয়ে ফেলুন ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক। আর আপনার হাতের জাদুতে মুগ্ধ করুন কাছের মানুষদের।
উপকরণ:
ময়দা— ১২০ গ্রাম
চিনি— ১৫০ গ্রাম (গুঁড়ো)
মাখন— ১৫০ গ্রাম (আনসল্টেড)
ডিম— ৩টি
বেকিং পাউডার— ১টেবিল চামচ
কোকো পাউডার— ১/২ কাপ
নুন— ১/৪ চা চামচ
ভ্যানিলা এসেন্স— ১ চা চামচ
হেভি হুইপ্ড ক্রিম— প্রয়োজন মতো
চেরি— ১ কাপ (কুচনো) ও ১০-১২ টি (গোটা)
চকোলেট বার— ১টি (মাঝারি সাইজের)
চেরি সিরাপ— ১/২ কাপ
প্রণালী:
চেরি সিরাপ বানাবেন কী ভাবে:
বাজার থেকে ক্যানে ভর্তি চেরি কিনে আনলে আলাদা করে সিরাপ বানানোর দরকার নেই। যে দ্রবণে চেরি ভেজানো থাকে, কেক বানাতে তা ব্যবহার করলেই চলবে। চাইলে আলাদ করে শুধু চেরি সিরাপও কিনে নিতে পারেন। কিন্তু তা যদি না হয়, তাহলে প্রথমে চেরিগুলো ভালো করে জলে ধুয়ে নিন। এ বার একটি বড় কাচের পাত্রে কিছুটা জল নিন। জলে সামান্য চিনি মিশিয়ে জল ঝরিয়ে রাখা চেরিগুলো দিয়ে দিন। পাত্রটি ঢাকা দিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। পরের দিন কেক তৈরির সময়ে চেরিগুলো চিনির জল থেকে তুলে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। যে চিনির দ্রবণে সারা রাত চেরি ডুবিয়ে রেখেছিলেন, সেটি কেকের সিরাপ হিসেবে ব্যবহারের জন্য তৈরি।
কেক বানানোর পদ্ধতি:
একটি কাচের বাটিতে ময়দা নিন। প্রথমে ময়দা ভালো করে একটি চালুনি দিয়ে চেলে নিন। এর পর তাতে একে একে কোকো পাউডার, নুন আর বেকিং পাউডার ভালো করে মেশান। পাত্রটি সরিয়ে রাখুন। অন্য আরেকটি পাত্রে মাখন নিন। তাতে গুঁড়ো চিনি, ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে ভালো করে মেশাতে থাকুন। দেখবেন ধীরে ধীরে মিশ্রণটা সাদা হয়ে ফেঁপে উঠেছে। তার পর সেই মিশ্রণেই ডিমগুলো ফেটিয়ে দিন। ভালো করে আবার তা মেশাতে থাকুন। মিশ্রণটি আগের চেয়ে আরও বেশি ফেঁপে উঠবে। এ বার মাখন-ডিমের মিশ্রণটিতে ময়দা দিন। ময়দা অল্প অল্প করে দেবেন এবং হালকা হাতে তা নীচ থেকে উপরে করে মেশাতে থাকবেন। এ বার আপনার কেকের মিশ্রণ তৈরি। ওভেন ১৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে প্রি-হিট করে রাখুন। কেকের টিন বা বেকিং পাত্রে ভালো করে মাখন লাগিয়ে রাখুন। তার উপরে সামান্য ময়দা দিয়ে টিনটি এক বার উল্টে দিন। এতে অতিরিক্ত ময়দা ঝরে পড়ে যাবে। এ বার কেকের মিশ্রণটি ওই টিনে দিন। উপর থেকে স্প্যাচুলা অথবা ছুরি দিয়ে কেকের মিশ্রণটির উপরের অংশ যতটা সম্ভব সমান করে দিন। এ বার কেকের পাত্রটি ওভেনে ঢুকিয়ে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট বেক করুন। কেক হয়ে গেলে নামিয়ে টিন থেকে বের করে ১৫ মিনিট ঠাণ্ডা করতে দিন। এ বার কেকটিকে সমান তিন টুকরো করুন। প্রতিটি টুকরোতে ভালো করে চেরি সিরাপ ব্রাশ করুন। কেক সাজানোর জন্য প্রথম টুকরোটি বসিয়ে তাতে ভালো করে কেকের তিন দিকে হুইপ্ড ক্রিম লাগিয়ে নিন। উপরে ছোট ছোট করে কাটা চেরির টুকরো ছড়িয়ে দিন। এই একই পদ্ধতিতে তিনটি টুকরো উপর উপর বসান। এ বার চকোলেট বারটি ছুরি দিয়ে পাতলা পাতলা করে টুকরো করে রাখুন। গোটা কেকের উপরে এবং ধারগুলোয় ভালো করে ওই চকোলেট গুঁড়ো ও টুকরো দিন। উপরে গোটা চেরি সাজিয়ে দিন মনের মতো। আপনার ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক তৈরি। সারা রাত কেকটি ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন।
হুইপ্ড ক্রিম:
ফ্রেশ ক্রিম/ হুইপিং ক্রিম— ১ কাপ
আইসিং সুগার/ কনফেকশনার সুগার— ২ টেবিল চামচ
জেলাটিন— ১ চা চামচ
ভ্যানিলা এসেন্স— ১ চা চামচ
ঠাণ্ডা জল— ২ টেবিল চামচ
বানাবেন কী ভাবে:
হুইপিং ক্রিম বানানোর আগে খেয়াল রাখবেন যেন আপনার কাচের বাটি ও বিটার (যা দিয়ে আপনি ক্রিম মেশাবেন) ঠাণ্ডা থাকে। তাই ওই দু’টি জিনিস এক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। হুইপিং ক্রিম সারা রাত ফ্রিজে রাখুন। একটি বাটিতে দু’চামচ ঠাণ্ডা জল নিয়ে জেলাটিন মেশান। পাঁচ মিনিট রাখুন। গ্যাসে পাত্রটি বসিয়ে জেলাটিন নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না তা পুরোপুরি মিশে যায়। এ বার নামিয়ে ঘরের তাপমাত্রায় আনুন। এ বার একটি বড় কাচের পাত্রে ফ্রেশ ক্রিম, চিনি আর ভ্যানিলা এসেন্স নিয়ে ভালো করে মেশান। যতক্ষণ না ক্রিম ফেঁপে উঠে জমতে শুরু করে ততক্ষণ মেশাতে থাকুন। এর পর জেলাটিন মিশিয়ে আবার ফেটাতে থাকুন। ক্রিম ঘন হয়ে এলে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। আপনার হুইপ্ড ক্রিম তৈরি। উপরের দেওয়া মাপে প্রায় ৪ কাপ মতো ক্রিম তৈরি হবে।
(ক্রিম ফেঁপে ওঠা পর্যন্ত ফেটাতে থাকুন। বেশি ফেটালে ক্রিম পরে জমে যাবে। কেকের স্পঞ্জটিকে সমান টুকরো করে কাটতে হলে একটি সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। কেকটি একটি বড় প্লেট বা কেক-স্ট্যান্ডের উপর রাখুন। যে কোনও সুতো নিয়ে কেকটির পরিধি বরাবর একটি ফাঁস দিন। আলগা চাপতে থাকুন। কেকটি দু’টুকরো হয়ে যাবে সহজেই। ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের উপরে শুধু চেরিই নয়, সাজিয়ে দিতে পারেন কমলালেবুর টুকরো বা গোল গোল করে কাটা তরমুজ।)