পারিবারিক একাত্মতাই কম দুর্নীতিগ্রস্থ করে মেয়েদের

‘দুর্নীতিতে মেয়েরা কমই জড়ান’, নারী দিবসে মন্তব্য করে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মন্তব্যের পক্ষে কলম ধরলেন নন্দিনী দেব।নারী দিবসের দিন মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুনে মেয়ে হিসেবে বেশ ভালই লেগেছে। এক জন মহিলা রাষ্ট্রনেতা যখন এমন মন্তব্য করেন তখন ভাল না লেগে উপায় থাকে না!

Advertisement

নন্দিনী দেব

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ১৮:৩৮
Share:

নারী দিবসের দিন মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুনে মেয়ে হিসেবে বেশ ভালই লেগেছে। এক জন মহিলা রাষ্ট্রনেতা যখন এমন মন্তব্য করেন তখন ভাল না লেগে উপায় থাকে না! হাসিনা এটা মেনে নিতে বলেছেন যে, মেয়েরা দুর্নীতিতে কমই জড়ান। তাঁর মতে, মেয়েদের থেকে ছেলেরাই অনেক বেশি জড়িয়ে পড়ে দুর্নীতিতে। সাদামাটা চোখে হয়তো কথাটা ঠিকই বলেছেন তিনি। হয়তো শব্দটা ব্যবহার করলাম এই কারণে, একটা ছেলে বা মেয়ে আদৌ অপরাধপ্রবণ হবে কি না তা আগে থেকে বলা যায় না। আবার এটাও বলাটা ঠিক নয় যে, ছেলেরাই বেশি দুর্নীতি প্রবণ হয়! তবে, হিসেব করলে দেখা যাবে তথ্যগত ভাবে হাসিনা-ই ঠিক। বিশ্বজুড়ে ছেলেদেরই অপরাধের সঙ্গে বেশি জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মেয়েরাও আছে, তবে সংখ্যায় তো সে নগন্য!

Advertisement

এর পেছনে একটা কারণও আছে বোধহয়। আসলে মেয়েদের মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি। সহনশীলতাও। সেটা বোঝা যায় কী ভাবে? একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারে। বিয়ের পর সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া একটা পরিবেশে বেশির ভাগ মেয়েই দিব্যি মানিয়ে নেয়। ওই দুটো গুণ না থাকলে সেটা সম্ভব হতো কি? আবার ধরা যাক, রাস্তা পেরোনোর সময় সামনে এক জন দৃষ্টিহীন নজরে এলো। তিনিও রাস্তা পেরোবেন। কারও সাহায্য চাইছেন। ভাল করে খেয়াল করে দেখবেন, মেয়েরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ছেলেরা বাড়ায় না, তেমন নয়। তবে মেয়েরা বেশ কয়েক গুণ যে এগিয়ে তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

মেয়েরা চিরকালই অনেক বেশি যত্নশীল। এক বার ছেলেবেলায় ফিরে গেলে ভাল ভাবে বোঝা যাবে বিষয়টা। আমাদের মেয়েবেলার শুরুটাই হয় পুতুলখেলা দিয়ে। খেলার ছলে পুতুলদের খাওয়ানো, তাদের যত্নআত্তি, এমনকী, বিয়েও পর্যন্ত দেওয়া হয়। আর এর ভেতর দিয়েই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ছোটবেলা থেকে মেয়েদের মধ্যে মায়া-মমতা বাড়তে থাকে। বড়বেলাতেও সেই মমতা মায়া থেকে বেরোতে পারে না হয়তো তারা। সে কারণেই হাসিনার কথাটাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। ভাল লাগার কারণও তাই। আবার এটাও হতে পারে, মেয়েদের এই বৈশিষ্ট্য হয়তো আদতে জিনগত! ঈশ্বরই তাদের এই রকম ভাবে তৈরি করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন-নারী-পুরুষের মাপকাঠিতে দুর্নীতির বিচার সম্ভবই নয়

তবে সব কিছুর পরেও বলব, একটা ছেলে বা মেয়ে অপরাধপ্রবণ হবে কি হবে না তার বেশির ভাগটাই নির্ভর করে তাঁর বেড়ে ওঠার উপর। তার পারিবারিক অবস্থানের উপর। কী ভাবে শিশু অবস্থা থেকে তাকে গড়ে তোলা হয়েছে সেটার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন, ছোটবেলায় কোনও ভুল করলে বাবা-মা যদি তাকে বুঝিয়ে বলে তবে অনেকাংশেই সেই ভুল শুধরে নেওয়ার আশা তাকে। কিন্তু, সে বিষয়টা নিয়ে যদি অত্যাধিক বকাবকি করা হয় তবে ছেলেমেয়ে বিগড়েও যেতে পারে। সে সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক বেশি জেদি হয়ে উঠতে পারে তারা। আর তা থেকেই অপরাধপ্রবণতার জন্ম নিতে পারে। এক বাক্যে দাগিয়ে দেওয়াটা ঠিক না হলেও, এটাই সত্যি, মেয়েরা অপরাধের সঙ্গে কম জড়িয়ে পড়ে।

(শোভাবাজার রাজ পরিবারের সদস্য)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন