Miss Transqueen India

প্রথম ট্রান্সকুইন ইন্ডিয়া খেতাব জিতে ইতিহাস কলকাতার মডেল নিতাশার

২৭ অগস্ট, ২০১৭। গুরুগ্রাম। ভারতের আর পাঁচটা বিউটি প্যাজেন্টের মতোই এই প্যাজেন্টের মঞ্চ। আলোর ঝলসানি, গ্ল্যামার, হাই হিলের শব্দ সবই ছিল। আর সেই প্রতিটা শব্দই যেন শোনাচ্ছিল একেকটি লড়াইয়ের গল্প।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ১০:৪৩
Share:

বাঁ দিক থেকে: দ্বিতীয় লইলই হারোঙ্গবাম, প্রথম নিতাশা বিশ্বাস ও তৃতীয় রাগাসিয়া।

২৭ অগস্ট, ২০১৭। গুরুগ্রাম। ভারতের আর পাঁচটা বিউটি প্যাজেন্টের মতোই এই প্যাজেন্টের মঞ্চ। আলোর ঝলসানি, গ্ল্যামার, হাই হিলের শব্দ সবই ছিল। আর সেই প্রতিটা শব্দই যেন শোনাচ্ছিল একেকটি লড়াইয়ের গল্প। হাই হিল পরিহিতারা কেউ বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কোনও দিন গ্লিটজ অ্যান্ড গ্ল্যামারের মঞ্চে অবলীলায় হেঁটে বেড়াবেন এ ভাবে। আজ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে কোনও দিন প্রশংসা তো দূরের কথা, লাঞ্ছনা, কটূক্তি, এক ঘরে করে দেওয়া ছাড়া কোনও কিছুই জোটেনি। কিন্তু সেটাকে নিজেদের ভবিতব্য ভেবে নিতে ঘোর আপত্তি ছিল ওদের। তাই বিশ্বাস করেছেন শুধু আয়নাকে। তিলে তিলে নিজের মধ্যে গড়ে ওঠা আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা, লড়াই করার শক্তি নিয়েই সগর্বে ভারতের প্রথম ট্রান্সকুইন বিউটি প্যাজেন্ট কাঁপিয়ে তুললেন তাঁরা। প্রতিযোগিতা শেষে প্রথম ট্রান্সকুইন ইন্ডিয়া খেতাব জিতে নিলেন কলকাতার নিতাশা বিশ্বাস। এই জয়ের ফলে ২০১৮ সালের মার্চে তাইল্যান্ডে মিস ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সকুইন প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। লেখা হল নতুন ইতিহাস।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিজের ডেলিভারি থামিয়ে অন্যের ডেলিভারি করালেন এই ডাক্তার মা

প্রথম রানার্স আপ হয়েছেন মণিপুরের লইলই হারোঙ্গবাংম ও দ্বিতীয় রানার্স আপের খেতাব উঠেছে তামিলনাড়ুর রাগাসিয়ার মাথায়। ২৬ বছরের নিতাশার মাথায় বিজয়ীর মুকুট তুলে দেন মিস ট্রান্সসেক্সুয়াল ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ২০১৭ লাটেসিয়া ফিলিসিয়া রভিনা। অনুষ্ঠানে পারফর্মও করেন তিনি। পারফর্ম করেন মিস্টার গে ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়া ২০১৪ সুশান্ত দিগ্বিকর ও মিস্টার গে ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়া ২০১৬ অন্বেষ সাহুও।

Advertisement

নিতাশার ফেসবুক প্রোফাইল সৌজন্যে

ভারতের প্রথম ট্রান্সকুইন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেড় হাজার প্রতিযোগী। তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয় ১৬ জনকে। কেউ সবে কুড়ির ঘরে পা দিয়েছেন, কেউ বা পঞ্চাশের কোঠায়। কেউ ছাত্রী, কেউ পেশায় আইনজীবী, কেউ বা প্রাক্তন যৌনকর্মী। এক সপ্তাহ ধরে বিশেষজ্ঞদের গ্রুমিংয়ের পর আসে সেই সন্ধ্যা। ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন বাজছে ‘‘ডোন্ট বি আ ড্র্যাগ, জাস্ট বি আ কুইন’’। তালে তালে পা ফেলে মঞ্চে হেঁটে চলেছেন ট্রান্সকুইনরা। কখনও মঞ্চে আসছেন নিজেদের রাজ্যের পোশাকে। দর্শকাসনে বসে তখন নিজের স্বপ্নপূরণ হতে দেখছেন মূল উদ্যোক্তা রিনা রাই। অনেক কটূক্তি, চোখরাঙানি হজম করে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের সাহস দেখানো রিনা বলেন, ‘‘যখন প্রথম এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা ভাবি, সমাজের সব দিন থেকে উড়ে এসেছিল সমালোচনা, কটাক্ষ। আমার সেক্সুয়ালিটি ও জেন্ডার নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। সবাই বলেছিল আমি একজন ট্রান্সওম্যান, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল, তাই আমি এ সব করতে চাইছি।’’

আরও পড়ুন: ত্বকের যত্নে বাড়িতে বানাতে পারেন এই ৮ হার্বাল টোনার

প্রতিযোগিতা নিয়ে আশাবাদী জুরি সদস্য অভিনেত্রী, সামজকর্মী গৌরি সবন্তও। তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালে দেশের শীর্ষ আদালত ট্রান্সজেন্ডারদের তৃতীয় লিঙ্গ ঘোষণার পর এই প্রথম ট্রান্সউইমেনদের জন্য জাতীয় স্তরে কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। আমার বিশ্বাস এই ধরনের প্রতিযোগিতা দেশের ট্রান্সসেক্সুয়ালদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও পরিচিত দেবে।’’

দেশের প্রথম ট্রান্সকুইন প্রতিযোগিতা জেতার পর বিজনেস ম্যানেজমেন্টের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী নিতাশা বলেন, আমার যাত্রাপথ কখনই মসৃণ ছিল না। অনেক সংগ্রাম ও কঠিন পথ পেরিয়ে আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি তার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এখন আমার অনেক বড় দায়িত্ব। আমি কখনই অধিকারের জন্য লড়াই করিনি। একজন ট্রান্সউওম্যান হিসেবে আমাদের গোষ্ঠী ও সমাজব্যবস্থাকে উন্নত করাই আমার লক্ষ্য। আমার মতো ট্রান্সউইমেনরা অনেক অসম্মান, লাঞ্ছনা সহ্য করে জীবনে। পরিবারের সাহায্যও সকলে পায় না। অনেক সময়ই বাধ্য হয়ে পেশা হিসেবে দেহব্যবসা বেছে নিতে হয় তাঁদের। আমি মনে করি শুধু ট্রান্সগোষ্ঠী নয়, সমাজের সব গোষ্ঠীর মানুষেরই ট্রান্সউইমেনদের শিক্ষা ও তাদের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন