বেশ কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান রিজওয়ানা পারভিনের বাবা। তাঁর মৃত্যুতে প্রায় পথে বসার জোগাড় হয়েছিল পরিবারের। মা ফিরোজা দিনমজুরি করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। পাশাপাশি, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিজওয়ানার লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন তিনি।
বীণা পাণ্ডে এখন বিএড পড়ুয়া। ঝাড়খণ্ডে বাড়ি। অভিযোগ, মেয়ে হওয়ায় জন্মের পরই বাবা বীণাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করেছিল। মেয়েকে বাঁচাতে একদিন রাতে মেয়েকে নিয়ে মা গায়ত্রী পাণ্ডে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে মানিকচকে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই বাড়িতেই পরিচারিকার কাজ করে মেয়েকে স্নাতক করেছেন। গায়ত্রী আর ফিরে যাননি স্বামীর কাছে। পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া জাসমিনা খাতুন প্রতিবন্ধী। ১১ বছর বয়স হলেও তাঁর উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট। হাঁটতে চলতে কষ্ট হয় তার। এই পরিস্থিতিতেও দাঁতে দাঁত চেপে মা এদান খাতুন মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। প্রতিদিন মা-ই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যান, আবার বাড়ি নিয়ে যান।
রিজওয়ানা ও জাসমিনা মানিকচক শিক্ষানিকেতনের ছাত্রী ও বীণা প্রাক্তনী। লড়াই সঙ্গী করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া এই তিন ছাত্রী ও তাঁদের মায়েদের আজ, শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে কুর্নিশ জানাবে মানিকচক শিক্ষানিকেতন। স্কুল সূত্রের খবর, রিজওয়ানা ও জাসমিনা এবং তাঁদের মায়েদের উত্তরীয়, ফুল ও মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধিত করা হবে। আর বীণা ও তাঁর মাকে স্কুলের স্টাফ কাউন্সিলের তরফে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সংবর্ধিত করা হবে। বীণার উচ্চশিক্ষার জন্যই স্কুলের তরফে ওই আর্থিক সাহায্যকরা হচ্ছে।
পাশাপাশি, স্কুলের যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের বাবারা কাজের জন্য ভিন রাজ্যে রয়েছেন বা কেউ মারাও গিয়েছেন এমন ৫৫ জনের মাকে আজ সংবর্ধনা দেবে স্কুল। কারণ ওই ছাত্রছাত্রীদের মায়েরাই এখন হয়ে উঠেছেন তাদের অভিভাবক। এ বার এই স্কুল ৫৫ বছরে পা দিয়েছে। এইজন্য ৫৫ জন মাকে সংবর্ধিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্কুলের ১৫ জনের মাতা কমিটিকেও সংবর্ধনা করা হবে আজ। আর এই আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষেই পরের দিন স্কুলে পড়াশোনায় এদিয়ে থাকা ৫৫ জন পড়ুয়াদের মায়েদের সঙ্গে কিছুটা পিছিয়ে থাকা মায়েদের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁদের মধ্যে মত বিনিময়ও করানো হবে। সঙ্গে বিশেষ ভাবে সংবর্ধিত হবে রিজওয়ানা, জাসমিন ও বীণাদের সঙ্গে তাঁদের মায়েরা। (শেষ)