বাঁকা কথা শুনেছি, লড়াইটা থামাইনি

কিন্ত আমি তো বিয়ে করতে চাইনি। পড়শোনা করতে চেয়েছিলাম। আমার বয়সও তখন মাত্র ১৬ বছর। বিয়ে করব না— এটা বাড়িতে বলা সহজ ছিল না। পাড়ার এক বন্ধুকে এ বিষয়ে জানাই। সে-ই পুলিশকে জানিয়ে আমার পরিবারকে বোঝানোর ব্যবস্থা করে। পুলিশ বিয়ে আটকায়।

Advertisement

দীপালি কর

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

২০১৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। তখনও রেজাল্ট বার হয়নি। একদিন হঠাৎই বাবা-মা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখে দিনক্ষণ স্থির করে ফেলেন। আসলে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। বাবা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। আমরা তিন বোন। বাবা-মায়ের চিন্তা ছিল। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা পরেই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেন।

Advertisement

কিন্ত আমি তো বিয়ে করতে চাইনি। পড়শোনা করতে চেয়েছিলাম। আমার বয়সও তখন মাত্র ১৬ বছর। বিয়ে করব না— এটা বাড়িতে বলা সহজ ছিল না। পাড়ার এক বন্ধুকে এ বিষয়ে জানাই। সে-ই পুলিশকে জানিয়ে আমার পরিবারকে বোঝানোর ব্যবস্থা করে। পুলিশ বিয়ে আটকায়।

পাঁচ বছর আগের ওই ঘটনার পরে আমাকে অনেক বাঁকা কথা শুনতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের সাহায্য পেয়েছিলাম। নন্দকুমারের তৎকালীন ওসিও সাহায্য করেন। অন্যদের করা কটাক্ষকে অস্ত্র করে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছি। পড়াশোনা করেছি। উচ্চ-মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করি। বর্তমানে আমি নন্দকুমার কলেজে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার এক বোন এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। আর এক বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। আমি নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকজনকে টিউশন পড়াই। বোনদের পড়াশোনায় সাহায্য করি। কলকাতার একটি স্বেছাসেবী সংস্থাও আমার পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্য করে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকাও পেয়েছি।

Advertisement

কলেজের সহপাঠীরা অনেকেই আমার নাবালিকা বয়সে বিয়ে রোখার ঘটনার কথা জানেন। এটা নিয়ে আমার মনে কোনও কুণ্ঠা নেই। আসল বিষয়টি হল, আমার নাবালিকা বয়সে বিয়ে বন্ধ হওয়ার ঘটনার পর আমাদের গ্রামে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার গ্রামের অনেক মেয়ে এখন কলেজে পড়াশোনা করে। এটা তো সচেতনতার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

আজ, শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীকে সম্মান দিতেই এই দিন। আমার মনে হয়, একটি দিন নারী দিবস হিসেবে পালন করলে আসল উদ্দেশ্যই বাধা পায়। কেন এ ভাবে একটা দিন নারী দিবস হিসেবে বেঁধে দেওয়া হবে। প্রতিদিন যাঁরা নানা স্তরে লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটাই তো আসল। সে কাজে তো কারও তেমন উৎসাহ দেখি না।

(লেখক নাবালিকা অবস্থায় নিজের বিয়ে রুখেছিলেন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন