শোনপুর বাজারি প্রকল্পের ‘শোভেল অপারেটর’ বদনি মাঝি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
তিন মেয়ে, ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে গোছানো সংসার ছিল পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুরের বাসিন্দা বদনি মাঝির। ২০০৫-এ বিপদ। পেশায় খনিকর্মী স্বামীর মৃত্যু হয়। মৃতের নিকটাত্মীয় হিসেবে স্ত্রী যোগ দেন কাজে। প্রথম দিকে কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা। কিন্তু, সেই সমস্যাকে পিছু ফেলে বদনিদেবীই হলেন ইস্টার্ন কোল ফিল্ডের (ইসিএল) মহিলা ‘শোভেল’ (কয়লা ডাম্পারে তোলার যন্ত্র) চালক।
বৃহস্পতিবার শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কর্মী বদনিদেবী শোভেলে ওঠার আগে জানান, কাজে যোগ দেওয়ার পরে প্রথমে তাঁকে সাধারণ মজুরের কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু, দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁর মনে হয়, এমন ভারী কাজ করাটা সম্ভব নয়। তখনই ঠিক করেন, ‘শোভেল অপারেটর’ হবেন। সেই সময়ে প্রকল্পে এই কাজে এক জনও মহিলাকর্মী ছিলেন না।
এই কাজটিও মোটেই হালকা নয়, জানান ইসিএল কর্তারা। ঠিক মতো মাপ করে শোভেলের নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশ ওঠানো-নামানোর জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট পেশিশক্তির। জরুরি, ধৈর্য্যও। বদনিদেবীর ইচ্ছের কথা জেনে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন ‘ফিটার’ জগন্নাথ মণ্ডল। তিনি জানান, মাত্র তিন মাসেই কাজ শিখে নেন বদনিদেবী।
ওই কাজ করেই গুছিয়ে নেওয়া কর্মক্ষেত্র, বাড়ি। বদনিদেবী বলেন, ‘‘শোভেলের সাহায্যে কয়লা, মাটি, পাথর ডাম্পারে বোঝাই করা হয়। প্রতি দিন ৫০ টনের বেশি কয়লা বোঝাই করি।’’ এই কাজে কৃতিত্বের জন্য সংস্থার তরফে তিন বার পুরস্কার মিলেছে। সাফল্য মিলেছে সংস্থার ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও।
বছর ৫৭-র বদনিদেবী জানান, নিজের উপার্জনে দুই মেয়ে সুকুরমণি ও সাবিত্রীর বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে ছোট মেয়ে বিমলা ও ছেলে মধু বেশ ছোট। এখন তাঁরাই মায়ের ভরসা। কলকাতার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিমলা জানান, মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হরিপুরের ঝিঙেধাওড়ায় বাড়ি তৈরি করিয়েছেন। ‘‘মা আমাদের কাছে, পাড়ার মেয়েদের কাছে প্রেরণা,’’ বলেন বছর বাইশের মধু।
কর্মক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বদনিদেবী, মন্তব্য প্রকল্পের ‘সিনিয়র ওভারম্যান’ বিবেকানন্দ মণ্ডল। বদনিদেবীর পরে এই প্রকল্পে একই কাজে যোগ দিয়েছেন বিন্দু পাসোয়ান, বিদ্যাবতী সিংহ ও পার্বতী ভুঁইয়ারা। তাঁরাও বলেন, ‘‘মেয়েরাও যে এই কাজটা পারে, তা বদনি দিদিই দেখিয়েছেন।’’ বদনিদেবী তবে এই সাফল্য ভাগ করতে চান তাঁর সমস্ত সহকর্মীদের সঙ্গে।
ইসিএল সূত্রে জানা যায়, সংস্থায় এই মুহূর্তে ৬১,৮৭৪ জন কর্মীর মধ্যে মহিলা, ৩৮৬০ জন। এই সংখ্যাটা নিশ্চিত ভাবেই আরও বাড়বে, আজ নারী দিবসে বিশ্বাস বদনিদেবীর।