মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হই

পরের বারও প্রথম পছন্দ মোহনবাগান

সামনের মরসুমেও সবুজ-মেরুন জার্সিতে তাঁকে দেখা যাবে কি না তা নিয়ে জল্পনা। বারবার চোট লাগা থেকে ফুটবল ভবিষ্যৎ। মা থেকে বান্ধবী। পাহাড়ে ঘেরা স্টেডিয়ামে শুক্রবার সকালে নানা বিষয় একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সনি নর্ডি-র মুডও নানা রকম। কখনও চোখে জল, কখনও ঠোঁটের কোণে হাসি। তবে সব সময়ই অকপট। সামনের মরসুমেও সবুজ-মেরুন জার্সিতে তাঁকে দেখা যাবে কি না তা নিয়ে জল্পনা। বারবার চোট লাগা থেকে ফুটবল ভবিষ্যৎ। মা থেকে বান্ধবী।

Advertisement

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

টিম ডাক্তারের সঙ্গে সনির ফিটনেস-চর্চা। শুক্রবার। -নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: আপনার মোহনবাগানের কাছে ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা?

Advertisement

সনি: আরে কী বলছেন? আগে তো শনিবারের ম্যাচটা জিতি। তার পর ফাইনাল আছে। লড়াইটা সহজ হবে না। তবে হ্যাঁ, খালি হাতে আমি দেশে ফিরতে চাই না। ফেড কাপটা চাই-ই।

প্র: বারাসতে সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে লাজংকে পাঁচ গোল দিয়ে এসেছেন। এখানে ক’গোল দেবেন?

Advertisement

সনি: লাজং কিন্তু খুব ভাল টিম। যে কোনও টিমের একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। ওদের খাটো করে দেখতে গেলে ভুগতে হবে। তবে সেকেন্ড লেগটাও জিতে ফাইনালে উঠতে চাই। ফেড কাপই আমাদের ক্লাবের ট্রফি জেতার শেষ ভরসা। আমি গোল করলাম কি করলাম না তাতে কিছু যায়-আসে না। টিম জিতলেই হল।

প্র: প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল আই লিগ মোহনবাগানই চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু শেষ দিকে এসে টিমটা এ ভাবে হড়কাল কেন?

সনি: ওই যে বললাম, সব টিমেরই একটা দিন বা সময় খারাপ যায়। মাঝে-মাঝে অবশ্য মনে হয়, আমি চোট পেয়ে বসে না গেলে আই লিগ বেঙ্গালুরু পেত না। আমরা পেতাম। শিলিগুড়িতে ডার্বিও জিততাম। শুরু থেকে আমাদের টিম যা খেলেছে, তাতে আমরাই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক নম্বর দাবিদার ছিলাম।

প্র: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে চোটের ব্যথার চেয়ে মনের ব্যথা বেশি।

সনি: একেবারে ঠিক। চোট সেরে গেলে ব্যথাও কমে যায়। কিন্তু অল্পের জন্য আই লিগ হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা কমার নয়। চোটের জন্য বাড়িতে বসে আমাদের টিমের ম্যাচের পর ম্যাচ টিভিতে দেখতাম। তখন যে মনের ভিতর কী যে চলত আমার, মুখে বলে বোঝানো কঠিন।

প্র: এখন তো ফের দুর্দান্ত ফর্মে। বলে বলে গোলের পাস বাড়াচ্ছেন। নিজেও গোল করছেন। ধরে নেওয়া যায় ভারতে আসার পর প্রথম বার ফেড কাপ আপনার হাতে উঠছে?

সনি: আমার বান্ধবী আমাকে মানসিক ভাবে উদ্দীপ্ত করে চলেছে প্রতি দিন। টিম ফিজিও গার্সিয়া আলাদা সময় বার করে ট্রেনিং করাচ্ছে আমাকে। কোচ-সতীর্থরা প্রত্যেকে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। সে জন্যই ফেড কাপ জেতার স্বপ্ন দেখতে পারছি।

প্র: শোনা যাচ্ছে আপনি নাকি পরের মরসুমে মোহনবাগান ছেড়ে দিচ্ছেন? বেঙ্গালুরু, ইস্টবেঙ্গল সহ নানা ক্লাবের অফার আছে?

সনি: (হেসে) কারা যে এ সব রটাচ্ছে জানি না। পরের মরসুম নিয়ে এখনও কিছুই ভাবিনি। আর মোহনবাগান আমাকে রাখলে ক্লাব ছাড়ব কেন? পরের বারও বাগানই কিন্তু আমার প্রথম পছন্দ।

প্র: তা হলে আপনার কাছে অন্য ক্লাবের প্রস্তাব নেই বলছেন?

সনি: এটুকু বলতে পারি, পরের মরসুম নিয়ে আমার সঙ্গে কোনও ক্লাবের কোনও কথা হয়নি।

প্র: যদি ফুটবলার না হতেন তবে কী করতেন?

সনি: পড়াশুনা করতাম। ডাক্তার হতাম। আমার মায়ের সে রকমই ইচ্ছে ছিল। চাইতেনও আমি বড় হয়ে ডাক্তার হই। পড়াশুনাতেও খারাপ ছিলাম না আমি। তবে ফুটবলই যে আমার ভালবাসা, প্যাশন—সব কিছু। তাই ফুটবলকে বেছে নিয়েছি। মা-ও কখনও আমাকে বাধা দেননি। বরং সব সময় উদ্বুদ্ধই করেছেন।

প্র: বাবা কী চাইতেন?

সনি: (একটু চুপ। চোখে জল) আমার যখন তিন বছর বয়স তখন বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে যান। আমাকে অনেক কষ্ট করে মা বড় করেছেন। আমার এক ভাই আর বোন এখনও পড়াশুনা করছে। ওদেরও কোনও অসুবিধেয় পড়তে দেননি মা। মায়ের মনে অনেক দুঃখ। আমি ভাল খেললে, ট্রফি জিতলে মা খুশি হন। সেটাই সব সময় করার চেষ্টা করি।

প্র: নতুন বান্ধবী নিয়ে এ দেশে এসেছেন। বিয়ে কবে হচ্ছে?

সনি: দু’-তিন বছর পরে। আগে মন দিয়ে ফুটবলজীবন গড়ে তুলি। তার পর সংসারও মন দিয়ে করব।

প্র: সনি নর্ডি হয়ে ওঠার রহস্য কী?

সনি: আলাদা কিছু নয়। সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখি। উত্তেজিত হয়ে ভুল করে বসি না। সব সময় মন দিয়ে নিজের কাজটা করি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement