নায়ক গুরপ্রীত, সেরা অঘটন ঘটিয়ে কাতারকে আটকে দিল ভারত

যেখানে তিন বছর পরে বিশ্বকাপ। যারা এএফসি এশিয়ান কাপে ১৯ গোল করে গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সম্প্রতি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধেও দুর্দান্ত খেলেছে তারা।

Advertisement

শ্যাম থাপা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫২
Share:

হুঙ্কার: বিশ্বস্ত দুই হাতে কাতারের যাবতীয় আক্রমণ আটকে দিয়ে উল্লাস গুরপ্রীতের। মঙ্গলবার দোহায়। রয়টার্স

এখনও ঘোর কাটছে না! ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে কাতারের বিরুদ্ধে ভারতের গোলশূন্য ম্যাচটা দেখার পরে নিজেকেই চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে, ঠিক দেখলাম তো!

Advertisement

সেই কাতার! যেখানে তিন বছর পরে বিশ্বকাপ। যারা এএফসি এশিয়ান কাপে ১৯ গোল করে গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সম্প্রতি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধেও দুর্দান্ত খেলেছে তারা। মনে পড়ছে, ১৯৯৬ সালে এ রকই একটা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে কাতারের কাছে হাফডজন গোল খেয়ে ফিরেছিল তৎকালীন ভারতীয় কোচ রুস্তম আক্রামভের দল। তাদের বিরুদ্ধে এ বার অ্যাওয়ে ম্যাচ গোলশূন্য রেখে দেশে ফিরছে ভারতীয় দল! ভাবলেই রোমাঞ্চিত হচ্ছি। কাতারের মতো এশীয় ফুটবলের সেরা শক্তির বিরুদ্ধে ভারতের এই ঐতিহাসিক ড্র জয়ের সমান। সাম্প্রতিক কালে একটা বিশাল সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এই সাফল্যের কারিগর দু’জন। প্রথম জন ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ। যিনি সুনীল ছেত্রীদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই কাতারের ক্লাবেই কোচিং করিয়ে এসেছেন। সীমিত রসদ নিয়ে পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলে কাতারকে আটকে দিয়ে এলেন তিনি।

Advertisement

আর দ্বিতীয় জন অবশ্যই ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু। আজ ওর বিশ্বস্ত হাতেই উঠে এল মূল্যবান এক পয়েন্ট। এ দিন গোটা ম্যাচে গোল লক্ষ্য করে ২৭টি শট নিয়েছিল কাতার। যার একটাও পরাস্ত করতে পারেনি সদ্য অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় গোলরক্ষককে। চমৎকার অনুমানক্ষমতা, আউটিং, ক্ষিপ্রতা ও গোলের কোণ ছোট করে কাতারের গোলের প্রয়াস একাই রুখে দিল এই পঞ্জাব-তনয়। টিভিতে দেখছিলাম, এই মুহূর্তে কাতারের আল সাদ ক্লাবে খেলা স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার জাভি হার্নান্দেজ় খেলাটা দেখতে এসেছে। গুরপ্রীতদের বিক্রম তাঁকে হয়তো বুঝিয়ে দিতে পেরেছে, ভারতীয়রাও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্রমে এগিয়ে আসছে। সুনীল ছেত্রী প্রথম দলে নেই বলে শুরুতে একটু চিন্তা হচ্ছিল। ম্যাচ শেষে মনে হচ্ছে, সুনীল সুস্থ থাকলে দ্বিতীয়ার্ধে উদান্ত সিংহদের প্রতি-আক্রমণে হয়তো জয়ের গোলটাও চলে আসতে পারত।

কাতারের কোচ ফেলিক্স স্যাঞ্চেস অতীতে বার্সেলোনার যুব দলের কোচ ছিলেন। তার পরে ২০০৬ সাল থেকে প্রথমে কাতারের অ্যাকাডেমিতে সাত বছর। তার পরে কাতারের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দল নিয়ে কাজ করেছেন। আলমোয়েজ় আলি, হাসান আল হেইদোসদের নিয়ে গড়া দলটাকে প্রায় রিমোট কন্ট্রোলে চালান তিনি।

ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ জানেন সে কথা। ভারতে আসার আগে তিনি কাতারের আল শাহানিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। তাই জানতেন বিপক্ষ কোচ কোন রণনীতি নিয়ে খেলে থাকেন। তাই আগ্রাসী কাতার দলটির সামনে দু’টি চাল দিয়েছিলেন তিনি। এক, সন্দেশ, আদিল খানদের নিয়ে রক্ষণ সংগঠন জোরদার করা। দুই) আর নিজেদের অর্ধে মিডল করিডরটা মাঝমাঠে ভিড় বাড়িয়ে পুরো বন্ধ করে দেওয়া। কাতারের ফুটবল সম্পর্কে আগাম হোমওয়ার্ক থাকায় স্তিমাচ জানতেন, এই রাস্তাতেই বেশি গোল আসে কাতারের।

তাই স্তিমাচের স্ট্র্যাটেজি ছিল, প্রথমার্ধে গোলের দরজা বন্ধ করে দিয়ে রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়ে কাতারকে চমকে দেওয়া। তার পরে দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি-আক্রমণে যাওয়া। সেই কাজে তিনি পুরোপুরি সফল। এতেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় কাতারের। ভারতীয় রক্ষণে ফাঁকা জায়গা না পাওয়ায় দূরপাল্লার শটে গোল করার চেষ্টা করছিলেন আলমোয়েজ় আলিরা। কিন্তু সেই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যায় গুরপ্রীতের সামনে।

ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু, রাহুল ভেকে, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আদিল খান, সহল আবদুল সামাদ (বিনীত রাই), অবিনাশ থাপা (নরেন্দ্র গেহলৌত), নিখিল পূজারি (ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজ), রওলিন বর্জেস, মন্দার রাও দেশাই, উদান্ত সিংহ, মনবীর সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন